CPD ED Remittance is the Dirver of Economy

রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি: ফাহমিদা খাতুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রবাসীরা দেশের জন্য সোনার হাঁসের মতো, প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স আমাদের দেশের অন্যতম চালিকা শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার কক্ষে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অন্যান্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. বেলাল হোসেন, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর তামান্না বেগম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির মডারেটর অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন প্রমুখ।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের দেশের যে বিশ্বাল জনশক্তি রয়েছে। আবার প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষাধিক ছেলে-মেয়ে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করে শ্রম বাজারে প্রবেশ করছে। তাদের কে ধারণ করার সক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির নেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে স্টার্টআপ শুরু করতে হলেও পুঁজির দরকার। কিন্তু ব্যাংকগুলো সে পুঁজি দিতে পারছে না।

তিনি বলেন, প্রবাসীরা যেন সঠিক প্রক্রিয়ায় দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসীদের নানা প্রকার অভিযোগের কথা আমরা শুনি। বিশেষ করে আমাদের যে দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো রয়েছে তাদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারলে এই অভিযোগ অনেকটা কমে যাবে। বিমানবন্দরে যে প্রবাসী লাউঞ্জেস করা হয়েছে, সেখানে তাদেরকে বার্গার দেওয়া হতো। ক্লান্ত শরিরে তাদের প্রযোজন ছিল ভাতের। কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার কার্যকারিতা কাতটুকু তা ভাবতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বিগত দশ বছর থেকে বিদেশী বিনিয়োগ একই জায়গায় স্থির দাড়িয়ে আছে। মোট বিনিয়োগের ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ কম না কিন্তু আমাদের উদিয়মান অর্থনীতির জন্য তা বাড়া দরকার। বাড়ছে না। যখন কোন শিল্প শুরু করে তখন যে প্রণোদনা হয়, তার পরেও তারা আদায় করে। কেননা তাদের একটা সমন্বিত শক্তি তৈরি হয়ে যায়। যার প্রভাব খাটিয়ে প্রণোদনা নিতেই থাকে। এটা বন্ধ করতে হবে এবং সে প্রণোদনা অন্যকোন সেক্টরকে দিতে হবে। যাতে করে তারাও ভালো করতে পারে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির সময় সামাজিক প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করা হয়নি। মূল্য সংযোযন থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা আয় করে আবার সরকারি কর্মচারীদের ৭ হাজার কোটি টাকা মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে। ফলে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষকে এর বোঝা বহন করতে হবে। আমাদের দেশের আমলাতন্ত্রকে যে জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার জন্য মূলত রজনীতিবিদেরা দায়ি। কেননা রাজনীতিবিদেরা আমলাদের মাধ্যমে সব কাজ করে থাকে। এখন তারা যখন বড় কোন দুর্নীতি করে তখন আমলারাও বসে থাকে না। সবাই দুর্নীতি করে এমনটা নয় তবে তাদেরও একটা অংশ দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের চারিদিকে বর্তমানে যে চাকচিক্য দেখা যাচ্ছে তা অভিবাসীদের রেমিট্যান্সের কারণেই সম্ভব হচ্ছে। তাদের প্রেরিত অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিশেষভাবে কাজ করছে। এ সকল রেমিট্যান্স যোদ্ধারাই দেশের রিয়েল হিরো। অভিবাসী শ্রমিকদের প্রবল দেশাত্মবোধ রয়েছে। তারা বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রেমিট্যান্স প্রেরণ বন্ধ করে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করেছিল। নানা শর্তের বেড়াজালে আইএমএফ চার বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করেছে। অথচ প্রবাসীরা কোন শর্ত ছাড়াই গত বছরে ২৭ বিলিয়ন ডলার দেশে প্রেরণ করেছে। দেশের কর্মক্ষম ২৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় অভিবাসনের মাধ্যমে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান না করা গেলে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও ১০ শতাংশ বেড়ে যেত।

তিনি বলেন, অন্যদিকে পরিবার পরিজনকে ফেলে শ্রমে ঘামে উপার্জিত রেমিট্যান্স বাংলাদেশে প্রেরণ করছেন আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা। অথচ আমরা দেখেছি পতিত আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে মুজিব পরিবারের বিরুদ্ধে ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। যার সাথে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক এর যোগসূত্রতা রয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ ওঠায় গত কয়েকদিন আগে তিনি মন্ত্রীপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। শুধু শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক নয় মুজিব পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ এখন সকলের মুখে মুখে। একদিকে প্রবাসী ভাই বোনেরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছে অন্যদিকে মুজিব পরিবারসহ হোয়াইট কলার মানুষেরা বিদেশে অর্থ পাচার করছে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় কালো দাগ।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার কর্তৃক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ, সাবসিডাইজ মূল্যে খাবার গ্রহণের সুবিধা, রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া, অভিবাসী কর্মীদের এমআরপি পাসপোর্ট প্রদান শুরু করা, অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য হাসপাতাল চালু, অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রিত রাখার উদ্যোগ নেওয়াসহ অভিবাসী কর্মীবান্ধব বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা অভিবাসী কর্মীদের সম্মানিত করেছে। অভিবাসীদের সম্মানিত করলে, তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করলে, সামাজিকভাতে তাদের স্বীকৃতি প্রদান করলে দেশের প্রতি তাদের ওনারশীপ আরো বাড়বে। ফলে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে তারা আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবে।

কিরণ বলেন, বর্তমানে যেভাবে ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি পাচ্ছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে তাতে ব্যবসায়ীরা বলছে অনেকের কল কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, রপ্তানী আয় কমে যেতে পারে। তাই রেমিট্যান্সের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। কারণ অভিবাসী খাতের জন্য সরকারকে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ করতে হয় না। সরকারের সরাসরি কোন বিনিয়োগও নেই। ফলে রপ্তানী আয় বা আরএমজি খাতের পাশাপাশি প্রবাসী আয়ের ওপর গুরুত্ব আরো বাড়াতে হবে। তার জন্য দরকার প্রবাসে অবস্থানরত সোনার মানুষগুলিকে সঠিক মূল্যায়ন করা। দক্ষ, অতিদক্ষ ও প্রফেশনালস বেশি বেশি প্রেরণ করা।

সেমিনার শেষে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৪ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও রানারআপ বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের নগদ অর্থ পুরস্কারসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)