ব্যাংকে আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা
ডেস্ক রিপোর্ট: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ যেমন বাড়ছে, তেমনি এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আদায় অযোগ্য কুঋণ বা মন্দ ঋণ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; যা মোট খেলাপির ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মন্দ ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর তিন মাস আগে অর্থাৎ ৩০ জুন এটি ছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। জুনে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে মন্দ ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ শতাংশের নিচে। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দ ঋণ বাড়লে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যায়। কারণ এর বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়, যা তাদের নিট আয়ে প্রভাব ফেলে। এতে দুর্বল হয়ে পড়ে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি। শুধু তা-ই নয়, মন্দ ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
ব্যাংকিং পরিভাষায় এসব ঋণ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এর বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন জমা রাখতে হয়। ফলে যে পরিমাণ ঋণ মন্দ হিসাবে শ্রেণিকৃত হবে, ওই পরিমাণ প্রভিশন রাখতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এতে মন্দ ঋণের বিপরীতে দ্বিগুণ অর্থ আটকে থাকে। মন্দ ঋণ হিসাবে আটকে আছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, ঋণ শ্রেণীকরণের তিনটি পর্যায় রয়েছে এক. নিম্নমান, দুই. সন্দেহজনক এবং তিন. মন্দমান বা ক্ষতিজনক। এসব পর্যায় বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হয়। এর মধ্যে নিন্মমান ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনকের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দমান বা ক্ষতিজনক ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর খেলাপি ঋণের বিপরীতে অন্তত ১০টি ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত, ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক।
খেলাপি ঋণের তিনটি ধাপ রয়েছে। খেলাপি হওয়ার পর তিন মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত নিম্নমান, ছয় মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সন্দেহজনক এবং ১২ মাসের বেশি সময় খেলাপি থাকলে তা মন্দ ঋণ বা আদায় অযোগ্য ঋণ হিসাবে চিহ্নিত হয়।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মন্দ ঋণ সরকারি ব্যাংকগুলোয়ই সবচেয়ে বেশি। ছয়টি সরকারি ব্যাংকে এ ঋণ বেড়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা; যা মোট আদায়-অযোগ্য খেলাপির ৪৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অপরদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ১ লাখ ১১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা, বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত তিন ব্যাংকে ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা আদায়-অযোগ্য ঋণ রয়েছে।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//