USA Loan Rate Decrease postponed by FED

সুদের হার হ্রাসের সিদ্ধান্ত স্থগিত করছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ

ডেস্ক রিপোর্ট: মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) আগামী বুধবার সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করার ঘোষণা দিতে পারে।

ফেডের নীতিনির্ধারকরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী, তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ ও সমালোচনার মুখেও রয়েছেন তারা।

২০২৪ সালের শেষ চার মাসে ফেড তাদের প্রধান ঋণের সুদের হার ১ শতাংশ কমিয়েছিল। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় ফেড ভবিষ্যতে আরও সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে ইঙ্গিত দিয়েছে।

সেন্ট লুইস ফেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম বুলার্ড বলেন, ‘আমার মনে হয়, ফেড এই মুহূর্তে কিছুই করবে না, আর সেটাই ঠিক হবে। কমিটি বর্তমানে একটি ভালো অবস্থানে রয়েছে।’

ফেডের চ্যালেঞ্জ :
ফেডের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, ভবিষ্যতে সুদের হার পরিবর্তনের জন্য ডেটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা থেকে নিজেদের রক্ষা করা।

কেপিএমজি-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ডায়ান সোয়ংক বলেন, ‘ফেডের লক্ষ্য হবে যতটা সম্ভব কম আলোচনার বিষয় তৈরি করা। কারণ সিদ্ধান্ত স্থগিত করার বিষয়টি আগেই পরিষ্কার হয়ে গেছে।’

শুক্রবার সিএমই গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক বাজারে ৯৯ শতাংশের বেশি সম্ভাবনা দেখানো হয় যে ফেড বুধবার সুদের হার ৪.২৫ থেকে ৪.৫০ শতাংশের মধ্যে স্থির রাখবে।

জেপি মর্গানের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলি বলেন, ‘আগামী সপ্তাহটি ফেডের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ শুরু হতে পারে, তবে পুরো বছরটি অস্থির হতে পারে।’

ট্রাম্পের চাপ: 
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যিনি প্রায়ই ফেডকে সমালোচনা করেছেন, সোমবার দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব গ্রহণের পর আবারও ফেডের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সুদের হার অবিলম্বে কমানোর দাবি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুদের হার সম্পর্কে তারা যা জানে, তার চেয়ে আমি অনেক বেশি জানি। আর যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাদের চেয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি।’

ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের প্রতি ট্রাম্পের এই সমালোচনা খুবই অস্বাভাবিক, কারণ সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টরা ফেডের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন এবং তার কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেন না।

ডায়ান সোয়ংক বলেন, ‘ফেড নতুন প্রশাসনের নীতির কী প্রভাব পড়বে তা না দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।’

শুল্ক ও মুদ্রাস্ফীতির বিতর্ক:
ফেড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন একটি সময়, যখন মুদ্রাস্ফীতি সামান্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শ্রমবাজার শক্তিশালী রয়েছে।

ডিসেম্বরে ফেড জানিয়েছিল, ২০২৫ সালে তারা মাত্র দুইবার সুদের হার কমানোর পরিকল্পনা করেছে। এতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নীতির প্রভাবও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন এবং অভিবাসীদের বহিষ্কার করার পরিকল্পনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি কর ছাড় বাড়ানোর এবং জ্বালানি খাতের উপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার কথাও বলেছেন।

অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক ও অভিবাসন নীতি মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে। তবে সবাই একমত নয়।

পুরডু বিশ্ববিদ্যালয়ের জিম বুলার্ড বলেন, ‘শুল্ক মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায়, এই ধারণা আর্থিক বাজারে অতিরিক্ত গুরুত্ব পাচ্ছে। আসল সমস্যা হলো অনিশ্চয়তা, যা সরাসরি শুল্কের চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি নতুন প্রশাসন ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে পারে, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ শিথিলের ক্ষেত্রে, তবে সেটি অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে।’

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা:
২০২৫ সালে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় ফেডের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির সরাসরি এবং পরোক্ষ প্রভাব ফেডের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

শেষকথা :
মার্কিন অর্থনীতি বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। ফেডের সুদের হার স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।   

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)