বাঁচবে খরচ ও সময়
একই দিনে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন সম্পন্ন করার সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: খরচ ও সময় বাঁচাতে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন একই দিনে করার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়া স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন নানা কারণে জটিল, ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, বর্তমান স্থানীয় সরকারকাঠামো গণতান্ত্রিক ক্ষমতা চর্চার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত না হওয়ায় একদিকে যোগ্য নেতৃত্ব বিকাশে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারছে না, অপরদিকে প্রতিষ্ঠানগতভাবে যথাযথ ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়ছে এক ব্যক্তি অর্থাৎ চেয়ারম্যান বা মেয়র সর্বস্ব। আর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ওপর একদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশাসনিক নজরদারি, অপরদিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ দিন দিন বাড়ছে। মেয়র ও চেয়ারম্যানের নির্বাচন হয়ে পড়েছে অতিমাত্রায় ব্যয়বহুল, আর সদস্য ও কাউন্সিলরের নির্বাচন হয়ে পড়েছে সম্পূর্ণভাবে গুরুত্বহীন। তাই, আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাঠামো সংস্কার করে নির্বাচন পদ্ধতির সহজীকরণ এবং সাংগঠনিক কাঠামোকে ভারসাম্যপূর্ণ করা প্রয়োজন।
সুপারিশে আরো বলা হয়, জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের মেয়াদকাল পাঁচ বছর। জাতীয় সরকারের নির্বাচন প্রতি পাচ বছর একবারই হয়, কিন্তু একটি জাতীয় সরকারের মেয়াদকাল পাঁচ বছর জুড়ে নানা স্তরের স্থানীয় সরকারের অসংখ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে থাকে। নির্বাচনকাল সকল দেশেই ও সর্বদা একটি অস্থিরতার সময়, যা সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমে নানা বাধা সৃষ্টি করে। স্থানীয় সরকারের সকল প্রতিষ্ঠান—যেমন ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একটি একক তফসিলে সর্বোচ্চ এক মাস বা ৪৫ দিন সময় নিয়ে শেষ করা যায়। এ নির্বাচন ব্যক্তি, প্রার্থী, সমাজ ও রাষ্ট্র সকলের জন্য ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী হবে। কমিশন বিশ্বাস করে, এই নতুন নির্বাচন পদ্ধতি স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশে সহায়ক ও স্থানীয় জবাবদিহি বৃদ্ধি করবে।
বর্তমান ব্যবস্থায় পাঁচটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পৃথক পৃথক তফসিলে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি তফসিলে ৪৫ দিন করে, একটি পাঁচ বছরের সরকারের সর্বমোট ২২৫ দিন সময় ব্যয় হয় জানিয়ে কমিশনের সুপারিশ বলা হয়েছে, এতে বিপুল আর্থিক ও প্রশাসনিক জটিলতা অতিক্রম করতে হয়। সরকারের সমন্বিত ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজে প্রচুর অসামঞ্জস্য ও অপচয় ঘটে। এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রতিটি জেলার ভৌগোলিক কাঠামোর মধ্যে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচন যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয়, তাই ভিন্ন ভিন্ন সময়ের মেয়াদে তাদের কার্যকাল শুরু ও শেষ হয়। এর ফলে, একটি বিশেষ এলাকায় বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও জাতীয় বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় রাখা যায় না।
এতে বলা হয়, যদি সংসদীয় পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা পুনর্গঠিত হয় তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থা ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী এবং সহজতর হয়ে পড়বে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//