চেয়ারম্যান-কমিশনারদের অবরুদ্ধ থাকার অভিযোগ
বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দাযের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) বিএসইসি চেয়ারম্যানের গানম্যান মো. আশিকুর রহমান বাদি হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। শেরে বাংলা নগর থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ মামলায় যেসব কর্মকর্তাদের আসামী করা হয়েছে- বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান (৫৮), নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম (৫৭) নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম (৫৪), পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লাহ (৫১), অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম (৫০), যুগ্মপরিচালক রাশেদুল ইসলাম (৪৮), উপপরিচালক বনী ইয়ামিন (৪৫), উপপরিচালক আল ইসলাম (৩৮), উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম (৪২), উপপরিচালক তৌহিদুল ইসলাম (৩২), সহকারী পরিচালক জনি হোসেন (৩১), সহকারী পরিচালক রায়হান কবীর (৩০), সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন (৩০), সহকারী পরিচালক আব্দুল বাতেন (৩২), লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী(৩১) এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফকে (২৯)।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে এবং কমিশনার মো. মহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখের উপস্থিতিতে কমিশনের নির্ধারিত সভাকক্ষে সভা চলাকালে অভিযুক্তরাসহ আরো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী কমিশনের সভাকক্ষে জোরপূর্বক ও অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারগণকে অবরুদ্ধ করে। এরইমধ্যে পূর্ব পরিকল্পনা মতে এবং অবৈধ বাঁধা যারা সৃষ্টি করার জন্য আসামীগণ কমিশনের মূল ফটকে তালা দেয়, সিসি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, কমিশনের লিফট বন্ধ করে দেয় এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে মারাত্মক অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গুরুতর জখমের প্রচেষ্টা করে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আসামীগণ অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে ও এসির রিমোট চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে এবং বিভিন্নভাবে পেশি শক্তির মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। একইসাথে তারা কমিশনের চেয়াম্যানের একান্ত সচিব (সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব) মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে লাঞ্চিত করে। আসামীগণ কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান আদেশ প্রত্যাহার এবং কমিশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত কারণ দর্শানো আদেশ প্রত্যাহার এবং গঠিত তদন্ত কমিটি রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার দাবিতে সন্ত্রাসী কায়দায় সরকারি অফিস কক্ষ ভাংচুর করে এবং সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করে এবং প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করে।
এজাহারে বলা হয়, বিগত দিনের পুজিবাজারের অনিয়ম অনুসন্ধানে বিএসইসি পুঁজিবাজারে অভিজ্ঞ ৫ জনের সমন্বয়ে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর একটি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির অনিয়ম সংক্রান্তে জড়িত চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
কমিশন সেই অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও রিপোর্টের সুপারিশের সূত্রে অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তারই অংশ হিসেবে কমিশনের কয়েক জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় কমিশন তাকে চাকুরি হতে অবসর প্রদান করা করেছে।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আসামীদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান আছে এবং সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, পরিচালক শেখ মাহবুব-উর-রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক এস কে মো. লুৎফুল কবির ও যুগ্ম পরিচালক মো. রাশেদুল আলমের বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারিসহ পুঁজিবাজারে লুটপাটের সহায়তা করে অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগের তাদের পাসপোর্ট বাতিল করে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদেরকে অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন অশোভন স্লোগান, অকথ্য ভাষা ব্যবহার এবং পেশি শক্তির মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। এ ভীতিকর পরিস্থিতি প্রায় ৪ ঘণ্টা চলে। কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা ভয়ানক অবরুদ্ধ থাকার খবরে এবং বিএসইসি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো প্রতিষ্ঠান হওয়ায় প্রথমে পুলিশ ও পরবর্তীতে সেনাবাহিনী বিএসইসিতে অবস্থান নিয়ে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের জিম্মি অবস্থা হতে মুক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় বিএসইসির উপরোক্ত উশৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বর্ণিত অপরাধের মাধ্যমে পুঁজিবাজার ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//