প্রবাসীদের ভোটাধিকারে এনআইডি বাধ্যতামূলক নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোট দিতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক নয়। ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই তারা ভোট দিতে পারবেন।
তিনি জানান, ২০০৮ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা চালু রয়েছে। যারা তালিকায় নাম নিবন্ধন করেছেন, তারা ভোট দিতে পারবেন এবং তাদের আলাদা এনআইডি থাকার প্রয়োজন নেই।
বুধবার লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনলাইন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান কমিশনার সানাউল্লাহ। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন। মতবিনিময় শুরুতে তিনি প্রবাসীদের ভোটাধিকার এবং নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।
কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। এজন্য নির্বাচন কমিশন একটি অ্যাপ তৈরি করছে, যা নভেম্বর ২০২৫ থেকে চালু হবে। ভোট প্রক্রিয়া দুই ধাপে সম্পন্ন হবে:
1. নিবন্ধন (Enrollment Process)
2. ভোটদান (Voting Process)
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩০ জন প্রবাসী অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদ, জামায়াতে ইসলামের অল ইউরোপিয়ান মুখপাত্র আবু বকর মোল্লা, প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকের কনভেনর মো. বেলায়েত হোসেন, এনসিপি ডায়াস্পোরা ইউনিটের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি নুরুল হুদা জুনায়েদ, সদস্য মাকসুদুল হক শাকুর, সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের উপদেষ্টা মোখলেছুর রহমান চৌধুরী এবং সাংবাদিক রহমত আলী।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটার তালিকায় নাম রেজিস্ট্রেশনের জন্য জন্মনিবন্ধন অথবা পিতা-মাতার এনআইডি প্রয়োজন। পিতা-মাতা মৃত হলে তাদের মৃত্যু সনদ দিয়েও নিবন্ধন সম্ভব। তিনি বলেন, “প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই সহজ, যা তাদের দাবি থেকেও সহজ।”
সভায় প্রবাসীরা ভোটাধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
• বিএনপি নেতা এম এ মালেক প্রশ্ন করেন, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা ভোট দিতে পারবেন কি না। কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হতে পারে, তবে সমর্থকরা ভোট দিতে পারবেন।”
• জামায়াতে ইসলামের আবু বকর মোল্লা প্রস্তাব দেন, প্রবাসীরা একদিনের মধ্যে হাইকমিশন বা দূতাবাসে গিয়ে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারেন।
• প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকের কনভেনর বেলায়েত হোসেন বলেন, ভোট দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র এনআইডি প্রয়োজন হলে অনেক প্রবাসী ভোটে অংশ নিতে পারবেন না। তিনি প্রস্তাব দেন, ভোটারদের জন্য এনআইডি, পাসপোর্ট বা জন্মনিবন্ধন যে কোনো একটি বা দুটি থাকলেই যথেষ্ট। এছাড়া যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন বা সহকারী হাইকমিশনে সশরীরে ভোটদানের বিষয়টি বিবেচনার সুপারিশ করেন।
কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, প্রবাসীদের অর্ধেকের বেশি মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করেন, যেখানে সশরীরে ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সকলের জন্য একই প্রক্রিয়া বজায় রাখা জরুরি। তিনি আশ্বস্ত করেন, ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনআইডি পাওয়া যাবে এবং ভোট দেওয়ার জন্য আলাদা এনআইডি প্রয়োজন নেই।
কমিশনার বলেন, পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গোপনীয়তা রক্ষা। তবে এটি প্রবাসীদের ভোটদানের জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। তিনি সকলকে দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানান, যাতে প্রক্রিয়াটি বিতর্কিত না হয়।
তিনি আরও জানান, ভোট প্রদানের জন্য যারা নিবন্ধন করবেন, তাদের সকলকে ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে। প্রবাসীদের ভোটদানের প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল; প্রতিটি ভোটে প্রায় ৭০০ টাকা খরচ হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে প্রথমবার প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন, প্রবাসী ব্রিটিশ ও আইরিশ বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় নিবন্ধনের জন্য উৎসাহিত করছে এবং যে কোনো প্রশ্ন থাকলে হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানিয়েছে।
বিবা/শামীম//