চলে গেলেন কালিকাপ্রসাদ, রেখে গেলেন কিছু গান

বিনিয়োগবার্তা ডেস্ক, ঢাকা: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় গানের দল দোহারের শিল্পী কালিকাপ্রসাদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। বীরভূমের সিউড়িতে অনুষ্ঠান শেষে কলকাতায় ফেরার পথে আজ মঙ্গলবার সকালে বর্ধমানের গুড়াপ এলাকার কাছে সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটে। কালিকাপ্রসাদের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন।

সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ভুবন মাঝি’ সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন ভারতের দোহার ব্যান্ডের কালিকাপ্রসাদ। ৩ মার্চ বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পায়। ছবি মুক্তির সপ্তাহ খানেকের মাথায় পাওয়া গেল গুণী এই শিল্পীর মৃত্যুসংবাদ।

‘ভুবন মাঝি’ সিনেমার মুক্তি উপলক্ষে ১ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কালিকা। সে সময় তিনি কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। আজ মঙ্গলবার সকালে কালিকার মৃত্যুসংবাদে স্তম্ভিত হয়েছেন সবাই।

বাংলা লোকগানকে অন্য চেহারায় তুলে ধরেছিলেন। কখনও বিহু, কখনও গম্ভীরা কখনও বা ঝুমুর, শিলচরের ছেলে কালিকাপ্রসাদের গলায় বাংলার বিভিন্ন আঞ্চলিক গান প্রাণ পেয়েছিল। পেয়েছিল প্রচার। সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে।

লোকসঙ্গীতে কোনও কাঁটাতার বা সীমান্ত নেই, নেই কোনও ধর্ম।  খ্বজা নিজামউদ্দিন আর বাউল আবদুল করিমকে একাসনে বহু ক্ষেত্রে তাই এক আসনে বসিয়েছিলেন কালিকাপ্রসাদ। আবার কখনও  রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত ভট্টাচা‌র্যরাও প্রাণ পেয়েছে তাঁর গানে।

সত্যি কথা বলতে, প্রজন্ম পরম্পরায় বাংলা লোকগানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাটনটি তিনিই হাতে তুলে নিয়েছিলেন বললে ভুল হবে না। বাংলা ব্যান্ড যখন বাংলা গানের ইতিহাসে নতুন পরিবর্তন আনছে, তখন লোকগানকে নতুন আঙ্গিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে দোহার ৷ যার প্রাণপুরুষ ছিলেন কালিকাপ্রসাদ৷ পরিবেশনা, আঙ্গিক নিয়ে সর্বদাই মেতে থাকতেন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়৷ শুধু গাওয়া নয়, লোকগানের গবেষণার দিকটিকেও সমানে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কালিকাপ্রসাদ৷ তবে বাংলা আঞ্চলিক গানকে নিয়ে তাঁর সেই গবেষণা মাঝ পথে থেমে গেল।

জানা গেছে, বীরভূমের সিউড়িতে অনুষ্ঠান শেষে কালিকা ও তাঁর দলের বাকি সদস্যরা কলকাতায় ফিরছিলেন। গাড়িতে তখন কালিকপ্রসাদসহ মোট ছয়জন ছিলেন। হঠাৎ তাঁদের বহনকারী গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় অন্য একটি গাড়ি। এরপর তাঁদের গাড়ি উল্টে যায়। কালিকাপ্রসাদ ও বাকি পাঁচজনকে স্থানীয় বাসিন্দারা ও গুড়াপ থানার পুলিশ উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর কালিকাপ্রসাদ মারা যান। বাকি পাঁচজনের অবস্থাও গুরুতর।

কালিকা প্রসাদ আর নেই। জীবনের গান আজ এই নির্মম সত্যিকে স্বীকার করে নিয়েছে। তবে স্মৃতির ঝুলিতে রেখে গেছে আমাদের জন্য কিছু গান।

 

(আরজেডআর/ ৭ মার্চ ২০১৭)


Comment As:

Comment (0)