নতুন বছরে আরও গতিশীল হোক পুঁজিবাজার

সদ্য সমাপ্ত বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাস টালমাটাল থাকলেও শেষ ছয় মাস একটি দারুন সম্ভাবনাময় জায়গায় ফিরে এসেছে দেশের পুঁজিবাজার। মূলত বিগত জুলাই মাসে এক্সপোজার ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা দেয়ার পর থেকেই এমন অবস্থায় দাড়িয়েছে বাজার। পাশাপাশি বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সরকার ও বাজার সংশ্লিষ্টদের চেষ্ঠা ছিল অনেক বেশি।

‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় যা করণীয় সবই করা হবে’ সরকারের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন মহল থেকে এরকম বার্তা পাওয়ার পর বিদেশি বিনিয়োগকারী, পোর্টফলিও ম্যানেজার তথা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

যারফলে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ৫ হাজারের ঘরে সূচকের অবস্থান, হাজার কোটিতে দৈনিক লেনদেন, ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটির ওপরে বাজার মূলধন ইত্যাদি। ২০১৬ সালের বাজার শুরুর প্রথম দিন অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি সূচক ছিল ৪ হাজার ৬২৪, দৈনিক লেনদেন ৩৬৬ কোটি এবং বাজার মূলধন ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। সেখানে ২০১৬ সালের শেষ দিনে অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর সূচক দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৬, দৈনিক লেনদেন ১ হাজার ৭০ কোটি এবং বাজার মূলধন ৩ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।

বছরজুড়ে ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং বাজার সংশ্লিষ্ট সর্বমহলের ইতিবাচক মনোভাব ২০১৭ সালের পুঁজিবাজারকে আরো গতিশীল করে তুলবে এমনটাই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, ২০১৬ সালের পুঁজিবাজার ইতিবাচক প্রবণতায় অতিক্রম করেছে। ২০১৭ সালের শুরুতেই নানা সুখবর দিয়ে পুঁজিবাজার যাত্রা শুরু করবে। আগামী ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম উদ্ভোধন করবেন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ শিক্ষার সুযোগ পাবে। এছাড়া আগামী ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি সরকারের উদ্যোগে ৬৪ জেলায় উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেতৃত্বে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা ২৮ জেলায় অংশগ্রহণ করছেন। এই পুঁজিবাজার মেলার মাধ্যমে অনেক নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে সম্পৃক্ত হবে। এতোসব সুখবরে ২০১৭ সালে দৈনিক গড় লেনদেন শুধুমাত্র হাজার কোটিতে নয় বরং দেড় হাজার কোটির ওপরে হবে এমনটাই আশা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, ২০১৬ সালে শিল্পোদ্যোক্তারা বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে দেশের শিল্প ও বানিজ্যে প্রসারে দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন। ১১টি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র মাধ্যমে ৮৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছে৷ এছাড়াও ২০১৬ সালে মোট ১১টি সিকিউরিটিজ ১ হাজার ১১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার পরিশোধিত মুলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৷ ৩টি কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছে ৷ ২০১৬ সালে মোট তালিকাভুক্ত ১২৬ কোম্পানি ২৫০ কোটি ৮০ লাখ বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২ হাজার ৫০৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূলধন করেছে।

বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ২০১৬ সাল অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে৷ ২০১৬ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৭৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশিরা ৫ হাজার ৫৭ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন। অন্যদিকে ৩ হাজার ৭১৬ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন।

পুঁজিবাজারের অনুকূলে নেই এমন কোনো ইস্যু বর্তমানে নেই। পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কোনো ইস্যু যেন ২০১৭ সালে আমাদের যেন দেখতে না হয়। ২০১৬ সালের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ২০১৭ সালেও অব্যাহত থেকে বাজারকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দেবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

(এসএএম/বিনিয়োগবার্তা/০১ জানুয়ারি ২০১৭)


Comment As:

Comment (0)