রায়পুরার চরাঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টিকারী লাঠিয়াল সর্দারদের ধরতে পুলিশের অভিযান
মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু, নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টিকারী লাঠিয়াল সর্দারদেরকে গ্রেফতারে তৎপর হয়ে উঠেছে রায়পুরা থানা পুলিশ। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ লাঠিয়ালদেরকে গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। গত দুই দিনে পুলিশ কুখ্যাত লাঠিয়াল সর্দার মোর্শেদ মেম্বার ও মাইন উদ্দিনসহ প্রায় ৫ জন দুর্ধর্ষ লাঠিয়াল সর্দারকে গ্রেফতার করেছে। গত রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশ বাশগাড়ীর লাঠিয়াল সর্দার মাইন উদ্দিনকে নরসিংদী শহরের বিপিনসাহার ঘাট থেকে ১০ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় হত্যা, ভাংচুর, লুটপাট, বিস্ফোরক ও অগ্নিসংযোগে ১৮টি মামলা রয়েছে। তবে গত ১৯ এপ্রিল বাঁশগাড়ীসহ বিভিন্ন সময়ে বন্দুক যুদ্ধে ব্যবহৃত কোন আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। ইতোপূর্বে রায়পুরার চরাঞ্চলে বড় বড় লাঠিয়াল সর্দারদের কেউ গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা যায়নি।
জানা গেছে, বাঁশগাড়ীর বালুয়াকান্দী গ্রামের আব্দুল মালেকের পুত্র মাইন উদ্দিন বিদেশে প্রবাসী জীবনযাপন করতো। টেটা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তাকে বিদেশ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সে বাঁশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের ঘনিষ্ঠ সহচর রুপ মিয়া মেম্বারের ভাতিজা। গত ১৯ এপ্রিল বাঁশগাড়ীতে সংঘটিত বন্দুক ও টেটাযুদ্ধে সে ছিল প্রথম সারির সর্দার। সে নরসিংদী ও ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অস্ত্র ভাড়া নিয়ে গত এপ্রিল ১৯ তারিখের বন্দুক যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়। রবিবার সন্ধ্যায় সে নরসিংদী থেকে ১০ রাউন্ড গুলি কিনে নিয়ে এলাকায় যাবার পথে গোপন সূত্রে ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এসময় তার শরীরে তল্লাশী চালিয়ে ১০ রাউন্ড বন্দুকের গুলি উদ্ধার করা হয়।
গত সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় রায়পুরার নিলক্ষারচরের আতশালী বাজারে অভিযান চালিয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ মোর্শেদ নামে এক কুখ্যাত লাঠিয়াল সর্দারকে গ্রেফতার করেছে। তার বাড়ী নিলক্ষারচরের আমিরাবাদ গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রায়পুরার আতশআলী বাজারে গিয়ে পুলিশ লাঠিয়াল সর্দার মোর্শেদকে ঘেরাও করে। এ অবস্থা টের পেয়ে মোর্শেদ ও তার সতীর্থ লাঠিয়ালরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। সেখানে কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এতে সে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এসময় পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হয়। গুলিবৃদ্ধ অবস্থায় পুলিশ প্রথমে তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত লাঠিয়াল সর্দার মোর্শেদ একজন দুর্ষর্ষ লাঠিয়াল। তার নেতৃত্বে রয়েছে একাধিক লাঠিয়াল বাহিনী। সে এলাকার সেরা লাঠিয়ালদেরকে বাছাই করে একটি শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে। তার এই লাঠিয়াল বাহিনী মোটা অংকের টাকার ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যক্তির পক্ষে টেটা ও বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এরপর সে অবাধে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাড়ীঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ২টি খুন, লুট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, রাহাজানী এবং বিস্ফোরসহ বিভিন্ন আইনের ৩০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যান্য মামলাগুলো সম্পর্কে তল্লাশী চালানো হচ্ছে।
(এসএইচআর/এসএএম/ ০৩ মে ২০১৭)