বিশেষ নিরীক্ষায় অ্যাক্টিভ ফাইনের অসহযোগিতা, ব্যাখ্যা চায় বিএসইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রাসায়ন খাতের কোম্পানি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস (এএফসি) লিমিটেডের আর্থিক বিবরণীতে অসঙ্গতি থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর একারণে কোম্পানিটির আর্থিক বিবরণীর উপর বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টকে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটিতে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে নিরীক্ষক হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট।
কিন্তু নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বিশেষ নিরীক্ষায় সহযোগিতা করেনি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস কর্তৃপক্ষ। ফলে কোম্পানিটির কাছে অসহযোগিতার ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি।
সম্প্রতি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ অসহযোগিতার কারণ জানতে চেয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক বিবরণীর ওপর একটি বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর ধরাবাহিকতায় গত ১ নভেম্বর বিশেষ নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটি অ্যাকটিভ ফাইনের নিরীক্ষা কার্যক্রমের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।
চিঠিতে নিরীক্ষক উল্লেখ করেছেন, বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বিএসইসি’র কাছে অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস চিঠি দিয়েছে। আর কোম্পানিটি ওই চিঠির ওপর ভিত্তি করে বিএসইসির জারি করা চিঠি অনুযায়ী হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম করতে সহযোগিতা করেনি।
চিঠিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, এই পরিস্থিতিতে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের পক্ষ থেকে এ ধরনের অসহযোগিতার বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। কারণ কমিশন থেকে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম বিলম্বের বিষয়ে কোনো অনুমোদন প্রদান করা হয়নি। এই ধরনের অসহযোগিতার জন্য অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিরুদ্ধে বিএসইসি থেকে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসি’র ৭৯০তম কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং সর্বনিম্ন দরদাতা হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টকে ৮ লাখ টাকায় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রমে নয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের ৩ বছরের আর্থিক হিসাব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষও। এজন্য কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ৩০ আগস্টের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া, ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ও ২০১৯ সালের ২১ মে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মোট পরিশোধিত মূলধনের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যাল।
কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে মাত্র ১২.০৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের হাতে। ফলে এখনও ১৭.৯৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে কোম্পানিকে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে কোম্পানিকে একাধিকবার শুনানিতে তলব করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের পরিচালনা পর্ষদসহ কোম্পানির সচিব ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তাকে (সিএফও) তলব করে বিএসইসি। পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। ২৩৯ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ১২.০৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৯.২৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩.১১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৫.৬২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৪ টাকায়।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//