দেশের পুঁজিবাজারে আস্থা পাচ্ছে না বিদেশি বিনিয়োগকারীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ডলার সংকট। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের লাভের অংশ নিতে পারছেন না। আবার ডলারের দামের অস্থিরতার ফলে লোকসানে পড়তে হয় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। পাশাপাশি বেহাল দশায় বর্তমান সময়ের পুঁজিবাজার। এমন পরিস্থিতির মধ্যে পুঁজিবাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এসব কারণেই বিদেশি বিনিয়কারীদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ডলার সংকটের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। বেশ কিছুদিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ করছেন না। বিদেশি মু্দ্রার সংকটে উল্টো আগে যে বিনিয়োগ করেছিলেন তার একটি বড় অংশ তুলে নিয়ে গেছেন।
সম্প্রতি পুঁজিাবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, চলে গেছে তার চেয়ে বেশি।
এই ৯ মাসে পুঁজিবাজারে মোট যে বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে ৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার বেশি দেশে নিয়ে গেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তখনকার বাজার দরে (প্রতি ডলার ১১০ টাকা) যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ, নিট এফডিআই দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঋণাত্মক।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই জুলাই-মার্চ সময়ে পুঁজিবাজার থেকে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়ে গিয়েছিলো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ে নিট এফডিআই ছিলো ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণাত্মক।
নতুন কোন বিদেশি বিনিয়োগ না আসার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল আমিন বলেন, একটি দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধারও প্রয়োজন রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে অনেক কিছুরই ঘাটতি পায়। এজন্য এখানে তারা বিনিয়োগ করতে চায় না।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বিনিয়োগ করতে আসে, তখন তারা অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে। সেক্ষেত্রে আমাদের বাজারে তারা সুশাসনের ঘাটতি দেখতে পায়। একইসঙ্গে ঠিকমতো পলিসি সাপোর্ট পায় না। এজন্যই এসব বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে পুঁজিবাজারে নতুন কোনো বিদেশি বিনিয়োগ না আসলেও বাংলাদেশের সার্বিক বিদেশি বিনিয়োগ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। করোনা ও দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে এক্ষেত্রে কিছু ভালো অবস্থানে রয়েছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৩২১ কোটি ১০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে দেশে। যার পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই নয় মাসে ৩৩৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।
দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়াম্যান হিসেবে ২০২০ সালে প্রথম দায়িত্ব পান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। দায়িত্ব নেয়ার পর পুঁজিবাজারে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের টানতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রোড শোর আয়োজন করেন তিনি। কিন্তু তার কোনো ইতিবাচক ফল এখনো বাজারে পড়তে দেখা যায়নি। গত ২৮ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য আবারও বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//