পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইনের গেজেট প্রকাশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া প্রিপেইড কার্ড ইস্যু নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিশোধ, নিকাশ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা সংহতকরণ, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের ঝুঁকি হ্রাসকরণ ও গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিধান প্রণয়নকল্পে সম্প্রতি পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল-২০২৪ সংসদে পাস হয়েছে।
আইনটি গেজেট আকারে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এরফলে এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের প্রিপেইড কার্ড (প্রিপেইড পেমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট) ইস্যু বা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। এ বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
প্রিপেইড পেমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট-সংক্রান্ত কোনো আইন না থাকার কারণে দেশে অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ধরনের প্রিপেইড কার্ড চালু করতে দেখা গেছে। এ ধরনের কার্ড ক্রয় করতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হয়, তা দিয়ে কেনাকাটা করা যায় দ্বিগুণ বা তিন গুণ অর্থের পণ্য। ফলে বড় ধরনের আর্থিক মুনাফা লাভের আশায় অনেকেই এ ধরনের কার্ড ক্রয় করে থাকেন। তবে এখন থেকে যেকোনো ধরনের প্রিপেইড পেমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট ইস্যু করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ‘অগ্রিম পরিশোধ দলিল’ ইস্যু, ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণ থেকে যেকোনো ধরনের বিনিয়োগ গ্রহণ, ঋণ প্রদান, অর্থ সংরক্ষণ বা আর্থিক লেনদেন উদ্ভব হয়, এরূপ কোনো অনলাইন বা অফলাইন প্লাটফর্ম পরিচালনা করা যাবে না। এসব বিধান অমান্য করলে সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
এছাড়া কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো পরিশোধ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ, পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা ইলেকট্রনিক মুদ্রায় পরিশোধ সেবা দিতে পারবে না। একইভাবে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নেয়া ছাড়া কোনো পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা পরিশোধ সেবা দিতে পারবে না। এ বিধান লঙ্ঘনের সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, অজামিনযোগ্য এবং অ-আপসযোগ্য হবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা-সংক্রান্ত বিদ্যমান কোনো আইন নেই। বর্তমান ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার-১৯৭২’-এর আর্টিক্যাল ৭এ(ই) অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশনস-২০১৪ এবং রেগুলেশনস অন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, ২০১৪-এর আওতায় সব পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত পৃথক কোনো আইন না থাকায় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক লেনদেন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের জন্য বর্ণিত রেগুলেশনস পরিপালনের লক্ষ্যে ‘দ্য কন্ট্রাক্ট অ্যাক্ট-১৮৭২’-এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া, অ-ব্যাংক (ব্যাংক-বহির্ভূত) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণেও বর্তমানে কোনো আইন নেই। ফলে গ্রাহক-স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর আওতায় নেয়া জরুরি বিধায় ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন-২০২৪’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//