সিনিয়র কর্মকর্তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ
দায়িত্ব গ্রহণের আগেই মাসরুর রিয়াজকে নিয়ে ষড়যন্ত্র
নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) তাকে আগামী ৪ বছরের জন্য সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে ওইদিন থেকেই তার এই নিয়োগ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই তাকে নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তার এ নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছেন বিএসইসির একদল কর্মকর্তা। যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুরের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন ও তাকে চান না বলে জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তার নিয়োগ বাতিলের দাবি তুলেছেন তারা। কমিশনের কর্মকর্তাদের এমন দাবির পেছনে বিএসইসির একজন কমিশনারের চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন ও একজন সিনিয়র নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) কমিশনার হওয়ার ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) উপসচিব ফরিদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এম মাসরুর রিয়াজকে আগামী ৪ বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওইদিনই বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব নির্ধারিত সভায় মাসরুর রিয়াজকে চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নিতে অসম্মতি জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো, সাইফুর রহমান। এতে নির্বাহী পরিচালক মাহবুবের রহমান চৌধুরী, কামরুল আনাম খান, মোহাম্মদ রেজাউল করিমসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পরিচালক, উপ-পরিচালক ও অনান্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বলা হয়, মাসরুর রিয়াজ শেয়ারবাজারের লুটেরা ও সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ ও বিগত কমিশনের সঙ্গে সর্ম্পক্য রয়েছে। এতে বলা হয়, মাসরুর রিয়াজ সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মিলে অনেক কাজ করেছেন। এছাড়া বিগত কমিশনের সঙ্গে রোড শোতে অংশগ্রহণ করেছেন। বিএসইসির কর্মকর্তারা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান চায়, যিনি মাসরুর রিয়াজ না। যাকে কমিশনে যোগদানকে কর্মচারীরা স্বাগত জানাবে না। যার নিয়োগের প্রজ্ঞাপনকে বাতিল করার দাবি তোলা হয়।
এমন দাবির পেছনে অনেকে ষড়যন্ত্র দেখছেন। এ বিষয়ে ডিএসইর পুরাতন এক ট্রেকহোল্ডার বলেন, মাসরুরকে না চাওয়ার পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে একজন সিনিয়র নির্বাহী পরিচালকের কমিশনার হওয়া ও একজন কমিশনারের চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন বিফলে যাওয়া। যদিও এখনো ২টি কমিশনার পদ খালি রয়েছে। এছাড়া আওয়ামীলীগ সরকারের নিয়োগ দেওয়া ২ জন কমিশনার এখনো রয়েছেন। যাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। কারন এরইমধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ও ২ জন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন নিজেদের সম্মান বজায় রাখতে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ নিয়োগ বাতিল বা পদত্যাগে বাধ্য করতে না পারে।
উল্লেখ্য, ড. এম. মাসরুর রিয়াজ ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে পলিসি এক্সচেঞ্জ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। উনার পিতা প্রয়াত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। যিনি একাধিকবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিনিয়োগবার্তাকে বলেন, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওইদিনের মিটিংটি ছিল পূর্বনির্ধারিত। মিটিংয়ে সমসাময়িক অনান্য বিষয়ের সাথে পুঁজিবাজারের সার্বিক বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে কমিশনের চেয়ারম্যান-কমিশনার পদে কমিশনের যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগের জোর দাবি উঠেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। সরকারের সিদ্ধান্ত অবমাননার কোনো সুযোগ আমাদের হাতে নেই। আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়কে স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়েছি। একইসঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণের পর একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আমাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছি।
জানতে চাইলে বিএসইসির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ বিনিয়োগবার্তাকে বলেন, আগামী দিনে স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানে পুঁজিবাজারের যে অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে- তা আমাদেরকে দৃশ্যমান করতে হবে। সেলক্ষ্যে কমিশনসহ পুঁজিবাজারের সকল সেক্টরে সংস্কার করা হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে সকলকে পদায়ন ও পদোন্নতি দেওয়ার চেষ্ঠা করা হবে। তবে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা বিশেষভাবে কাম্য।
বিনিয়োগবার্তা/শামীম//