এডিপি

উন্নয়ন বাজেট কমে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট: এবার উন্নয়ন বাজেটে রেকর্ড পরিমাণ কাটছাঁট করা হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এত বেশি পরিমাণ বরাদ্দ হ্রাস পেতে দেখা যায়নি। ফলে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের আকার নেমে আসছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায়। অর্থবছরের শুরুতে এডিপি বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সোমবার দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেয়ার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

অর্থনীতিবিদরা অবশ্য উন্নয়ন বাজেট হ্রাসের পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাদের মতে, ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপের মাধ্যমে করদাতাদের টাকার ও ঋণের টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরে এডিপিতে অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার। যার মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে অর্থায়ন করা হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ কোটি টাকা। ১৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে তা করা হচ্ছে ৮১ হাজার কোটি। সব মিলিয়ে এডিপির আকার কমছে ৪৯ হাজার কোটি টাকার। তাছাড়া নতুন করে ৭৭০টি প্রকল্প এডিপি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। কাজ অসমাপ্ত রেখেই ৩১৩টি প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত আসছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, কয়েকটি কারণে এবার বেশি পরিমাণে বাজেট কাটছাঁট করা হচ্ছে। এসবের মধ্যে সরকার পরিবর্তন একটি বড় কারণ। বিগত সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দিলেও অন্তর্বর্তী সরকার মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসছে। তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ও কমে এসেছিল। নতুন অর্থছাড়ের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সূক্ষভাবে যাচাই-বাছাই করছে। অনেক প্রকল্পে আবার পরিকল্পনামতো কাজ এগোনো যায়নি। তাই এবার বিগত কয়েক বছরের তুলনায় প্রকল্প বাস্তবায়নের হারও কমেছে। ফলে বরাদ্দও কমানো হচ্ছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নেও ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও গত ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের ১ শতাংশ অর্থও খরচ করতে পারেনি। এগুলো হলো স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার এখনো ১০ শতাংশের নিচেই রয়েছে। সার্বিকভাবে এডিপির বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৫৩, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ দশমিক শূন্য ৬ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যমতে, গত অর্থবছর এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এসে ২০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা কাটছাঁট করে মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এ অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতিসহ নানা কারণে চলমান ১ হাজার ৩৫২ প্রকল্পে বিরাজ করছে স্থবিরতা। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়ন ও বৈদেশিক অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে। এ কারণে কর্মসংস্থান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অর্থপ্রবাহের স্বাভাবিক গতি কমে যাওয়া এবং প্রকল্পগুলো থেকে প্রত্যাশিত সুফলপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পগুলোয় আরো বেশি মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকার অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্প থেকে সরে আসছে। অনেক প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ পড়েছে। এভাবে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এতে করদাতাদের করের টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ঋণের টাকারও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হবে। প্রকল্পের অগ্রাধিকার পুন:নির্ধারিত করা যাবে। ব্যয় হ্রাসের ফলে ইট, সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা নির্মাণ শ্রমিকদের কিছুটা সমস্যা হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা তাদের জন্যই ইতিবাচক হবে।’

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)