এইচএসসির ফল প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ

এইচএসসির ফরম পূরণে ৬ মাসের অগ্রিম বেতন আদায়

ডেস্ক রিপোর্ট: চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৬ জুন। পরীক্ষায় অংশ নিতে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এখন ফরম পূরণে ব্যস্ত। কিন্তু শিক্ষাবোর্ডের ‘দায়সারা’ বিজ্ঞপ্তিকে ঢাল বানিয়ে তাদের কাছ থেকে সাত মাসের বেতনের টাকা একসঙ্গে আদায় করা হচ্ছে। অল্প সময়ে অনেকে একসঙ্গে এত টাকা জোগাড় করতেও চরম বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো সন্তানের ফরম পূরণের সঙ্গে অগ্রিম বেতন পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন আবদারে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

তারা বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর পরও কলেজ থেকে কেন মাসিক বেতন চাওয়া হচ্ছে, তার কারণ বুঝতে পারছেন না তারা। সেটাও একমাসের নয়, তিন মাসের বাড়তি বেতন নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত মাসের বেতনের টাকা একসঙ্গে অগ্রিম আদায় করা হচ্ছে। অগ্রিম বেতন পরিশোধ না করলে আটকে দেওয়া হচ্ছে ফরম পূরণ। এতে চরম আর্থিক চাপে পড়েছেন তারা। ফরম পূরণে বাড়তি ও অগ্রিম বেতনের টাকা নেওয়া বন্ধে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ চান শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সব শিক্ষাবর্ষে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। সেসব বাদ দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন বলে জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। ফলে ১৫ লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম পূরণের সময় আদায় করা হচ্ছে অগ্রিম বেতন।

জানা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাই এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ২০২৩ সালের জুন মাসে তাদের শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভর্তি করা হয়েছিল ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। আর ক্লাস শুরু হয়েছিল অক্টোবরে। সেসময় তাদের অক্টোবর মাস (২০২৩) থেকে বেতন নেওয়া হয়। একাদশ থেকে দ্বাদশ, সবশেষ নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা এখন এইচএসসির চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন। 

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ড এইচএসসির ভর্তি ফরম পূরণের নির্দেশিকা জারি করে। তাতে বলা হয়, ২ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ফি দিতে হবে ২ হাজার ৭৮৫ টাকা। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরীক্ষার্থীদের ফি দিতে হবে ২ হাজার ২২৫ টাকা।

তবে ফরম পূরণের ফির সঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অগ্রিম বেতন আদায় করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মেনেই তারা মোট ২৪ মাসের (একাদশ-দ্বাদশ) বেতন নিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীসহ সারা দেশের প্রায় সব কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অগ্রিম বেতন আদায় করছে। 

ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর হতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১৭ মাস বেতন আদায় করা হয়েছে। বাকি সাত মাসের (মার্চ-সেপ্টেম্বর) বেতনের টাকা ফরম পূরণের সময় একসঙ্গে দিতে হবে। সম্পূর্ণ ফি পরিশোধ না করা পর্যন্ত ফরম পূরণ করতে দেওয়া হবে না।

ফরম পূরণে অগ্রিম ৭ মাসের বেতন আদায়কে শিক্ষার নীতিহীন ব্যবসা বলে মনে করেন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু। তিনি বলেন, ‘কলেজের শিক্ষাবর্ষ শেষ হয় ৩০ জুন। এবার পরীক্ষা শুরু হবে ২৬ জুনে। তাহলে পরীক্ষার পর কলেজে কি ক্লাস চলবে? যদি ক্লাস না চলে তাহলে শিক্ষার্থীরা বেতন কেন দেবে? স্কুল-কলেজের এ ব্যবসা আর কতদিন এ দেশে চলবে? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরও এমন শিক্ষার বাণিজ্য কেন? আমরা পরীক্ষা শুরুর পর বেতন আদায়ের অন্যায় আবদারের প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষাপ্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছি।’

‘কলেজেরও তো আয় দরকার’
ভর্তি নির্দেশিকায় থাকা নির্দেশনা মেনে বেতন আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন কলেজের অধ্যক্ষরা। আর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, একাদম-দ্বাদশ দুই বছরের। সেই হিসাবে ২৪ মাসে শিক্ষাবর্ষ। ২৪ মাসের বেতনের টাকা না পেলে কলেজগুলো বিপদে পড়বে। তাদের ভাষ্য, ‘কলেজগুলোরও তো আয়ের দরকার আছে।’

জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা আক্তার বলেন, ‘ঢাকা বোর্ড যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে ২৪ মাসের বেতন নিতে বলা হয়েছে। আমরা নিয়মের বাইরে কিছু করছি না।’

একসঙ্গে অগ্রিম ৭ মাসের বেতন আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফরম পূরণের পর শিক্ষার্থীরা আর কলেজে আসে না। এখন বেতন না নিয়ে নিলে সেটা তোলা কষ্টকর। সেজন্য ফরম পূরণের সঙ্গে সব নিয়ে রাখা হচ্ছে।’

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি দুই বছরের। সেজন্য ২৪ মাসের বেতন নিতে বলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব জায়গায়ই তো এমন হয়।’

শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেছে এবং পরীক্ষা দিয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তাহলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেতন আদায়ের যৌক্তিকতা কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো আগের নিয়ম। বরাবরই ২৪ মাসের বেতন নেওয়া হয়। কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায় চলে। তাদেরও আয়ের প্রয়োজন আছে। তাদের তো বছরের ১২ মাসই শিক্ষকদের বেতন দিতে হয়। সেজন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও পুরো দুই বছরের (১২+১২ মাস) বেতনের টাকা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছি আমরা।’

ক্লাস বন্ধ এবং পরীক্ষার পরও বেতন আদায়ে শিক্ষা বোর্ডের এমন অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ড যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে কিছুটা কনসিডার (ছাড়) দেওয়ার সুযোগ আছে কি না, তা কথা বলে দেখবো। সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে।’ 

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)