সিপিডি
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি মোকাবেলায় কৌশলগত প্রস্তুতি ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জোর দেয়ার পরামর্শ
নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি মোকাবেলায় কৌশলগত প্রস্তুতি ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। পাশাপাশি বিকল্প বাজার খোঁজা ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে ‘ট্রাম্প রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যান্ড বাংলাদেশ: ইমপ্লিকেশন অ্যান্ড রেসপন্স’ শীর্ষক সেমিনারে এসব বিষয় উঠে আসে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ ১৮০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করলেও, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রফতানিকৃত পণ্যের ওপর আদায় করেছে ১.২৭ বিলিয়ন ডলার শুল্ক।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ কোনো একটি আইটেমে যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেয়, অন্য দেশকেও সে সুবিধা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। আলোচনার ওপর নির্ভর করবে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী কী ধরনের সুবিধা নিতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ খুব কম, সেটি কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নির্ভর করবে সামগ্রিক পলিসির ওপর।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আর ট্রাম্পের ট্যারিফ পলিসি আমাদের এলডিসি থেকে বের হওয়াতে সহায়তা করবে। ৯০ দিন পর কী হয়, সেটার ওপর নির্ভর করে ব্যবস্থা নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি যদি ২০০ শতাংশ বাড়াই ও রফতানি যদি ৫০ শতাংশ বাড়াই তবেই শুল্ক শূন্য হতে পারে। বাস্তবে এটি আসলে সম্ভব নয়। এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে ও পদক্ষেপ নিতে হবে।
সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য চীন। তাদের সম্পর্ক এখনো নির্ধারিত হয়নি। ফলে আমেরিকা নিয়ে বাংলাদেশের করণীয় এখনো নির্ধারিত নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উচিত হবে আগামী ৫ বছর বিকল্প বাজার খোঁজা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানি বাজার বড় করতে হবে। এশিয়ার বাজারে নজর দিতে হবে। এশিয়াই হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় জায়গা।
সেমিনারে বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, মার্কিন শুল্কনীতি শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটি শ্রমিকদের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ৯০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নেবে, তা অনিশ্চিত—তাই এখনই প্রস্তুতি নেয়া জরুরি বলে মত দেন তারা।
ট্রাম্প প্রশাসনকে রোগের সঙ্গে তুলনা করে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি পুরোটা অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। তবে মোটা দাগে ধরা যেতে পারে এ শুল্ক নীতিতে চীন তাদের মূল টার্গেট।
তিনি বলেন, নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোর ওপর শুল্ক কর কিছুটা কমাতে পারে। কিন্তু আমাদের মার্কেটের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বায়ারদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ৫০ শতাংশ নেগোশিয়েট করতে হবে। এজন্য কারখানাগুলোকে ব্যাংকের সাপোর্ট দিতে হবে। তবে এ প্রক্রিয়ায় কেবল একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়া জরুরি। যা আগামী ৯০ দিনের জন্য কার্যকর হবে। তবে আগামীতে আমাদের রফতানি কিছুটা কমতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে আগামী ৯০ দিন পরে পরিস্থিতি যাই হোক তাতে যেন সরকারের সহযোগিতা থাকে।
সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) প্রভাব বিস্তার ও একতরফা নীতি গ্রহণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বক্তারা বলেন, ডব্লিউটিওর ওপর নির্ভর না করে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
সিপিডি জানিয়েছে, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ বিবেচনায় রেখে, বাংলাদেশকে রফতানি নীতিতে দ্রুত পরিবর্তন ও প্রস্তুতি নিতে হবে।
বিনিয়ে্াগবার্তা/এসএএম//