1000006665

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ‘শাটডাউন’, গণ-অনশনের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর রাজপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।

আন্দোলনকারীরা জানান, দাবি পূরণ না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। গতকাল বিকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইস উদ্দিন। পরে মধ্যরাতে ফের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল ১০টায় রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমাবেশ হবে। জুমার নামাজের পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে গণ-অনশনে বসবেন।

এর আগে গতকাল বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে অধ্যাপক মো. রইস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকারের দাবি নিয়ে এসেছি। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মদদে আমাদের ওপর গতকাল নির্বিচারে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অরাজকতা ও অন্যায়। আমরা কারো বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি, কোনো ষড়যন্ত্র করতেও আসিনি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। যতক্ষণ দাবি মেনে না নেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন থাকবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখান (কাকরাইল) থেকে সরিয়ে দেয়ার কোনো পদক্ষেপ নেয়া হলে তা ভালো হবে না। আমার চোখের সামনে কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।’

বুধবার রাতের ঘটনায় (উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল ছুড়ে মারা) তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তথ্য উপদেষ্টার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তিনি আমার ছাত্রতুল্য। জুলাই আন্দোলনের সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই তাকে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে উদ্ধার করেছিল। উপদেষ্টা হিসেবে তার উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা। কিন্তু তিনি তা করেননি। আসলে আমরা কোনো উপদেষ্টার কাছ থেকে সেটা আশাও করি না, কারণ এটা আমাদের যৌক্তিক দাবি।’

পরে গতকাল রাত ১২টার দিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে অধ্যাপক রইস উদ্দিন বলেন, ‘আজকে দুইদিন অতিবাহিত হতে চলছে। সরকারের কর্ণকুহরে আমাদের আওয়াজ পৌঁছাচ্ছে না। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো গ্রিন সিগন্যাল পাইনি। ওনারা (সরকার) আমাদের কথা শুনছেন না, আমাদের কথা শোনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না।’ দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক বলেন, ‘হয় দাবি আদায় হবে, না হয় আমরা স্থান ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না আমাদের মৃত্যু হয়। যখন আমরা গ্রিন সিগন্যাল পাব, আমাদের দাবি মেনে নেয়া হবে; তাৎক্ষণিক আমরা আমাদের এ কর্মসূচি সমাপ্ত করব।’

এদিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কাকরাইল, মৎস্য ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। গতকাল বিকালে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্সের ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে ১৫ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২-এর প্রবেশ গেট, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের সম্মুখে সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।

চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সব কার্যক্রম কার্যত বন্ধ রয়েছে। বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ইনস্টিটিউট ও বিভাগের পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৩ মে তাদের তিন দফা দাবি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) জমা দিয়েছিলেন। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ইউজিসির প্রতিক্রিয়ায় তারা সন্তুষ্ট নন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ১৪ মে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছলে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসবভবন যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। এ সময় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন।

পরে বেলা ২টার দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী পুনরায় জমায়েত হয়ে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বাসে চেপে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

রাত ১০টার পর অবস্থান কর্মসূচিতে আসেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এ সময় তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুতই প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির বিষয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের বিষয়ে সরকার কথা শুনবে।’

তবে রাত ১২টার পর আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন।

তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম) যে ব্রিফিং করেছেন, সেটি আরেকটি অস্পষ্টতা তৈরি করেছে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্তে এসেছি, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া আমরা কোনোভাবেই এ জায়গা ছেড়ে যাব না।’

বিনিয়োগবার্তা/শামীম//


Comment As:

Comment (0)