1000014466

ইশরাক হোসেনের মেয়রত্ব ও রাজনৈতিক ছলচাতুরি: আইনের শাসনের এক পরীক্ষা

আলাউদ্দিন ভূঁইয়া (জিয়াউর): বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সামনে এসেছে—বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের মেয়র পদ নিয়ে চলমান জটিলতা। যেখানে হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে ইশরাককে বৈধভাবে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, সেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নীরবতা ও টালবাহানা যেন এক গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আমরা লক্ষ্য করছি, হাইকোর্টের রায়ের পরও ইশরাক হোসেনের শপথগ্রহণ আটকে রাখা হয়েছে নানা অজুহাত ও প্রশাসনিক জটিলতার মাধ্যমে। এটি কেবল একটি ব্যক্তির রাজনীতি নয়, বরং বাংলাদেশের আইন, বিচারব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধার প্রশ্ন। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে একজন বৈধ জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ না দেওয়া আসলে জনগণের ভোটাধিকারকেই অগ্রাহ্য করা।

এমন প্রেক্ষাপটে আরও প্রশ্নের জন্ম হয়েছে, যখন এনসিপি সভাপতি নাহিদ ইসলাম জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান। এই বক্তব্য যেমন রাজনৈতিকভাবে সময়োপযোগী বলে মনে হতে পারে, তেমনি এর পেছনে কিছু গভীর হিসাব-নিকাশও বিদ্যমান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারপন্থী কিছু উপদেষ্টা ও সুবিধাভোগী মহল এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য রাখতে চায়। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট।

একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার, বিচারিক আদেশের পরেও প্রশাসনিক বাধা, এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা-এই সব কিছুই একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, এমন প্রশ্ন এখন নাগরিকদের মধ্যে জোরেশোরে উঠছে। এতে করে শুধু একজন ব্যক্তি বা দল নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ভোটারদের অধিকার।

আমরা আশা করি, এই সংকটের সমাধান হবে আইন এবং সংবিধানের ভিত্তিতে। নির্বাচন কমিশন, আদালত এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের উচিত হবে আইনি নির্দেশনা মেনে চলা এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখা। ইশরাক হোসেন যদি আদালতের দৃষ্টিতে বৈধ মেয়র হন, তবে তার দায়িত্ব পালন করার অধিকারেও কোনো প্রকার বাধা থাকা উচিত নয়।

বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে জনগণের ইচ্ছাই সর্বোচ্চ। প্রশাসনের দায়িত্ব হলো সেই ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। রাজনৈতিক কৌশল, গোপন এজেন্ডা বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা বাধাগ্রস্ত করা হলে সেটি কেবল অগণতান্ত্রিকই নয়, বরং দেশের স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলবে।

আমরা সত্য ও আইনের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে-এই বিশ্বাস থেকেই বলতে চাই, সত্যের বিজয় হোক, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক।


Comment As:

Comment (0)