মার্কিন তুলা

তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের আশ্বাস অর্থ মন্ত্রণালয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক: তুলা আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ও করপোরেট করের হার ১৫ শতাংশে বহাল রাখাসহ টেক্সটাইল মিল মালিকদের কয়েকটি দাবি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের নেতৃত্বে দেশের শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল শিল্প উদ্যোক্তাদের একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার (৭ জুলাই) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদের সচিব আব্দুর রহমান খান এবং এনবিআরের সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর অবিলম্বে প্রত্যাহার, করপোরেট কর ১৫ শতাংশে পুর্নবহাল এবং দেশীয় টেক্সাইল মিলে উৎপাদিত কটন সুতা, কৃত্রিম ও অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর কেজি প্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৫ টাকা অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ী নেতারা।

তাদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে।

আলোচনার শুরুতে বিটিএমএর প্রতিনিধি দল প্রতিবেশী দেশ ভারতের টেক্সটাইল শিল্প কিভাবে তাদের সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন প্রণোদনা এবং সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে তাদের স্থানীয় বাজারে তুলার অর্থাৎ ডাম্পিং মূল্যে আমাদের দেশে রপ্তানি বাড়ছে এবং এর ফলে আমাদের টেক্সটাইল শিল্প কী ধরনের প্রতিকুল অবস্থা মোকাবিলা করছে তা নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআরের চেয়ারম্যান বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেন। তুলার ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপের ফলে বিভিন্ন নেতিবাচক ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করা হয়। অগ্রিম আয়কর চূড়ান্ত আয়কর মূল্যায়নের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলে জানানো হয়। ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর সমন্বয় করার প্রক্রিয়া একটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করবে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য এটি হয়রানির অন্যতম কারণ হবে বলে বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।

সভায় বিটিএমএর প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, যেখানে দেশে কোনো ধরনের কর পরিশোধ ছাড়া সুতা আমদানি করা যায় সেখানে দেশে উৎপাদিত সুতার প্রধান কাঁচামাল তুলার ওপর অগ্রিম আয়কর আরোপ কতটুকু যৌক্তিক এবং এই অগ্রিম আয়কর আরোপ স্থানীয় শিল্পকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ করবে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সরকার যে চিন্তা থেকে অগ্রিম আয়কর আরোপ করেছে তা বিনা শুল্কে সুতার আমদানি বৃদ্ধি করে সরকার তার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য মাত্রা থেকে বঞ্চিত হবে। সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতী। এটি যথাযথ নয় মর্মে উল্লেখ করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিনা শুল্কে আমদানির সুযোগ থাকায় সুতা আমদানি উৎসাহিত হবে এবং দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সঙ্গে সরকার আরোপিত ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে অতি শিগগিরই অগ্রিম আয়করের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করা হয়। সভায় জানানো হয় বিপুল পরিমাণে আমদানিকৃত তুলা খালাসের জন্য চট্টগ্রামে বন্দরে অপেক্ষমান রয়েছে।

বিটিএমএর প্রতিনিধি দল অবিলম্বে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার এবং উক্ত কারণে সৃষ্ট ডেমারেজ চার্জ মওকুফের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়।

সভায় অর্থ উপদেষ্টা ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে তুলার আমদানি মূল্যের চেয়ে মূল্যায়ন বেশি করা হচ্ছে মর্মে প্রমাণাদিসহ উল্লেখ করা হয়। এভাবে দেশীয় সুতা কেনার পরিবর্তে বিনা শুল্কে সুতা আমদানিতে উৎসাহ সৃষ্টি হবে। যা বিদেশি আমদানি বৃদ্ধি করবে এবং রপ্তানিকারী সংশ্লিষ্ট দেশের কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজন বেশি হবে। আমাদের দেশ ক্রমান্বয়ে কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজন থেকে বঞ্চিত হবে।

সভায় টেক্সটাইল শিল্পের জন্য ইতোপূর্বে বলবৎ ১৫ শতাংশ করপোরেট কর সংক্রান্ত এসআরও’র মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বিটিএমএর প্রতিনিধি দল একই শিল্প খাতের অন্তর্ভুক্ত আরএমজি সেক্টরের জন্য বর্তমানে বলবৎ ১২ শতাংশ করপোরেট করের মতো ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করার জোর দাবি জানানো হয়।

উল্লেখ্য যে দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত কটন সুতা, কৃত্রিম ও অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতায় কাপড় দেশের নিম্ন শ্রেণি ও সাধারণ জনগোষ্ঠী ব্যবহার করে। কাপড়ের মূল্যবৃদ্ধিতে তারা দেশীয় কাপড় ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে। সুতার ওপর সুনির্দিষ্ট কর কেজি প্রতি ৫ টাকা অব্যাহতি না দিলে টেক্সটাইল স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্রমান্বয়ে রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হবে এবং তাছাড়া ব্যাংক, বীমা ইত্যাদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়বে।

বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে, আগামীকাল এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত বা দিকনির্দেশনা দেবে মন্ত্রণালয়।

বিটিএমএর পরিচালক রাজীব হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, একটি ফলপ্রসূ মিটিং হয়েছে। আমরা শিল্পের স্বার্থে তুলা আমদানির ওপর আরোপিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। এছাড়া করপোরেট করহার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে তা ২০২৮ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার এবং দেশীয় টেক্সটাইল মিল দ্বারা উৎপাদিত তুলার সুতা, সিনথেটিক ফাইবার ও অন্যান্য ফাইবারের ওপর উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত প্রতি কেজিতে ৫ টাকা নির্দিষ্ট কর মওকুফের দাবি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারসহ অন্যান্য দাবি পুনর্বিবেচনা করবেন। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আগামীকাল আমাদের জানানো হবে।

বৈঠকে বিটিএমএর সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী ও মতিন চৌধুরী, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, বিটিএমএর সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ মঞ্জুরুল হক, এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ, বিটিএমএর সহসভাপতি মোঃ শামীম ইসলাম, সালেউদ্ জামান খান ও মোঃ নুরুল ইসলাম, বিটিএমএর পরিচালক খোরশেদ আলম ও মোঃ মোশারফ হোসেন, বাদশা টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ বাদশা মিয়া, বিটিএমএর পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব হায়দার, বিটিএমএর পরিচালক এম. সোলায়মান, বিটিএমএর সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনা. (অব.) মোঃ জাকির হোসেন ও জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল জনাব মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)