আধুনিক পয়োনিষ্কাশনের আওতায় আসছে খুলনা নগরীর ১০ লাখ মানুষ
জেলা প্রতিনিধি: ‘খুলনা পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে খুলনা নগরীর প্রায় দশ লাখ মানুষ আধুনিক পয়োনিষ্কাশনের আওতায় আসবে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে নগরীর প্রায় ৩০ হাজার বাসাবাড়ির পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। এরইমধ্যে প্রকল্পটির গুরুত্বপূর্ণ অংশের কাজ প্রায় শেষ বলে জানিয়েছে খুলনা ওয়াসা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে খুলনা নগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সুসংহত ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে, আধুনিক বর্জ্য জল শোধনাগার নির্মাণের মাধ্যমে শহরের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে এবং বিদ্যমান সেপটিক ট্যাংক নির্ভর পয়ঃবর্জ্য অপসারণ পদ্ধতির চেয়ে তা অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব হবে।
প্রথম পর্যায়ে নগরীর প্রায় ৩০ হাজার বাড়ি থেকে পয়ঃবর্জ্য পাইপলাইনে নেওয়ার কাজ চলছে। পাইপলাইনগুলো রাস্তাভেদে ১০ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া। প্রকল্পের অধীনে দুটি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, পাম্পিং স্টেশন এবং নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে প্রায় দশ লাখ মানুষ উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১৭নং ওয়ার্ড থেকে ৩১নং ওয়ার্ড পর্যন্ত কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ থেকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য পৃথক প্রকল্প নেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৮ জুলাই ‘খুলনা পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর একই বছরের অক্টোবরে ম্যাক্স ইনফ্রাকচার লিমিটেড কোম্পানি কাজ শুরু করে। এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ১ হাজার ৪০৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল রয়েছে ৯২৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। বর্তমানে দুটি শোধনাগার এবং আটটি পাম্প স্টেশনের প্রায় ৭৮ ভাগ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।
আরও জানা গেছে, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে নগরীর ১৭ আংশিক থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিটি বাড়ির সামনেই পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপ বসানো হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে বর্জ্য পানি ও সেপটিক ট্যাংকের পানি নগরীর ভেতরের আটটি পাম্প স্টেশনে যাবে। সেখান থেকে পাম্প করে বর্জ্য নগরীর বাইরে মাথাভাঙ্গা ও ঠিকারাবাঁধে পরিশোধন কেন্দ্র দুটিতে পাঠানো হবে। সেখান থেকে তরল অংশ নদীতে যাবে এবং সলিড অংশ জৈব সার তৈরির জন্য রিফাইনিং করার ব্যবস্থা করা হবে। দুইটি শোধনাগারে প্রতিদিন প্রায় ৫২ লাখ লিটার পয়ঃবর্জ্য শোধন করা হবে। এছাড়া এখনো এ ব্যবস্থার আওতায় না আসা বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য ট্রাকে করে নিয়ে এসে শোধন করা হবে।
ম্যাক্স ইনফ্রাকচার লিমিটেড কোম্পানিতে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার মো. নূর সাইফুল্লাহ বলেন, এরইমধ্যে দুইটি শোধনাগারের গুরুত্বপূর্ণ অংশের কাজ প্রায় শেষ। নেটওয়ার্কের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরই সম্পূর্ণ কাজ বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
‘খুলনা পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালক এবং ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান সেলিম আহমেদ বলেন, প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। চলতি বছরেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়ন হলে নগরীর প্রায় দশ লাখ মানুষ উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//