কৃষিজমি আমাদের জীবিকা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির প্রাণ: ভূমি উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন; কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষিজমি শুধু উৎপাদনের ক্ষেত্র নয়, এটি আমাদের জীবিকা,সংস্কৃতি ও অর্থনীতির প্রাণ। দেশীয় খাদ্যনিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ স্থিতিশীলতা সরাসরি কৃষিজমির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন, শিল্পায়ন ও অবকাঠামো সম্প্রসারণের ফলে কৃষিজমি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ফলে আজ কৃষিজমি সুরক্ষা একটি জাতীয় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।। এই পরিস্থিতিতে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভূমি জোনিং একটি কার্যকর নীতিগত হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে কৃষিজমি হ্রাস ও অবৈধ বা অনুপযুক্ত ব্যবহারের সমস্যার সমাধানে ভূমি মন্ত্রণালয় “ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫” শীর্ষক খসড়া প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এই অধ্যাদেশের লক্ষ্য হলো- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, কৃষিজমি রক্ষা, পরিকল্পিত ভূমি-জোনিং ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
মঙ্গলবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বিষয়ক খসড়া পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপত্বিত করেন মাননীয় ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। সভায় এই অধ্যাদেশের কয়েকটি নাম প্রস্তাব করা হয়।
ভূমি উপদেষ্টা বলেন; ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়; এটি জাতীয় টেকসই উন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত। সঠিক নীতি, সচেতনতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে একটি পরিবেশবান্ধব ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। এই অধ্যাদেশে ভূমি জোনিং এর ১৪ টি শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। ভূমি ব্যবহার ও জোনিং পরিকল্পনা প্রণয়ন। এই আইন অনুসরণ করিয়া প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগ ভূমি মন্ত্রণালয়কে অবহিত রাখিয়া নিজস্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন করিতে পারিবে এবং সময়ে সময়ে তা হালনাগাদ করিতে পারিবে।
খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে ভূমি, বনভূমি ও অন্যান্য বিশেষ শ্রেণির ভূমির সুরক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ (১৯৫১ সনের ২৮ নং আইন)-এর ৮৩ ধারায় যাহাই থাকুক না কেন এই আইনের অধীনে সংজ্ঞায়িত সকল কৃষি ভূমি সুরক্ষা করিতে হইবে। কৃষিজমি ব্যতীত অন্যান্য জমিও এই আইনের বিধান অনুযায়ী সুরক্ষা করিতে হবে। অনুমতি ব্যতীত কৃষি ভূমি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাইবে না বা শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না বা এমনভাবে ব্যবহার করা যাইবে না যে কৃষি ভূমির শ্রেণি পরিবর্তিত হইয়া যায়। তবে অকৃষি বা অন্য কোনো শ্রেণির ভূমি কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকিবে না।
এছাড়া এ অধ্যাদেশে অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাবস্ত্য হইলে ১লাখ হতে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং কারাদন্ডের বিধান রাখা রয়েছে। দ্রুতই এই অধ্যাদেশ কার্যকর করার লক্ষে কাজ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব:); গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ.এস.এম সালেহ আহমেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ ও ঊর্ব্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিবা/এসএএম//