যা কিছু থাকছে মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের গেজেটে
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা: পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবণ্টিত অবস্থায় পড়ে থাকা টাকা নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতোমধ্যে ফান্ডটির গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। আর এ ফান্ড গঠনের লক্ষ্যে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য তালিকাভূক্ত কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, কোম্পানিগুলোকে অ-দাবিকৃত, অ-বণ্টিত লভ্যাংশ ও আইপিওর রিফান্ডের অর্থ বিশেষ তহবিলে জমা দিতে হবে। আর টাকা জমা দেওয়ার জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বিএসইসি। কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ০০১০৩১১৫২১৩০১ নাম্বারের হিসাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই টাকা জমা করতে হবে তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোকে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির পাশাপাশি সকল ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছেও টাকা জমা দেওয়ার (যদি থেকে থাকে) জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসির তথ্যমতে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অবণ্টিত ও অ-দাবিকৃত অবস্থায় পড়ে থাকা অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে আলোচ্য ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। গত ৩ মে অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৭৭২তম নিয়মিত কমিশন সভায় ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (Capital Market Stabilization Fund) নামে ওই ফান্ড গঠন ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিধিমালা অনুমোদন করে। আর গত ২৭ জুন এ সংক্রান্ত গেজেটটি প্রকাশিত হয়।
যাকিছু রয়েছে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের গেজেটে:
প্রকাশিত গেজেট অনুসারে, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অবণ্টিত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ, অবণ্টিত রাইট শেয়ার, আইপিও সাবস্ক্রিপশনের অফেরত টাকা ইত্যাদি নিয়ে আলোচ্য ফান্ড গঠন করা হবে। তবে অবণ্টিত সব টাকা নয়, ৩ বছরের বেশি সময় ধরে অবন্টিত অবস্থায় থাকা টাকা এই তহবিলে জমা করতে হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে।
প্রসঙ্গত, গ্রাহক বা বিনিয়োগকারীদের ঠিকানা পরিবর্তন, মৃত্যু, ঠিকানা ও ব্যাংক হিসাবে ভুল ইত্যাদি কারণে তাদের প্রাপ্য লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারেনি অনেক কোম্পানি। এক সময় কাগজের শেয়ার ইস্যু করা হতো। তখন বিও অ্যাকাউন্ট বা ডিপোজিটরি সিস্টেম ছিল না। তাই লভ্যাংশের চেক (Dividend Warrant), বোনাস শেয়ার, রাইট শেয়ার ইত্যাদি ডাকযোগে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে পাঠানো হতো। কিন্তু ঠিকানা পরিবর্তনসহ নানা কারণে অনেকের শেয়ার সার্টিফিকেট ফেরত এসেছে, যা অবণ্টিত অবস্থায় কোম্পানিগুলোতে পড়ে আছে। এগুলোর মধ্যে যেসব টাকা ৩ বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে সেগুলো আলোচ্য ফান্ড বা তহবিলে জমা দিতে হবে।
তবে তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্নিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
তহবিল থেকে বাজারের মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানকে শেয়ার কেনাবেচা করা তথা বিনিয়োগের জন্য স্বল্প মেয়াদি ঋণ দেওয়া হবে। শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে যাতে তহবিলের কোনো লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি।
আলোচ্য তহবিল পরিচালনায় ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্ণ্যান্স থাকবে। যার মধ্যে একজন চেয়ারম্যান ও তিন জন সদস্য থাকবেন, যাদের মনোনীত করবে বিএসইসি।
বোর্ড অব গভর্নসে বিএসইসি থেকে ৪ জন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) থেকে একজন করে মনোনীত সদস্য থাকবেন।
এছাড়াও একজন প্রফেশনাল চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট বা কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট বা চার্টার্ড সেক্রেটারি বা চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট এবং একজন চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) থাকবেন।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে বর্তমান কমিশন। আর এ কারণেই কোভিড মহামারির এই ক্রান্তিকালেও দেশের পুঁজিবাজার সন্তুষজনক পারফরমেন্স দেখিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষনের লক্ষ্যে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে কাজ করছে কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। ইতোমধ্যে যা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। আর বহুল প্রত্যাশিত এ ফান্ডে অ-বন্টিত অর্থ জমা করতে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টাকা জমা করার পর এ ফান্ড গঠন ও ব্যবহারের পরিকল্পনা তৈরি ও তা বাস্তবায়ণ করবে কমিশন।
এ ফান্ড দেশের পুঁজিবাজারকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
(এসএএম/০৭ জুলাই ২০২১)