থমকে আছে বিকন-আনোয়ার গ্যালভানাইজিংসহ ৯ কোম্পানির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি তদন্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তাঃ সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক হারে দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯টি কোম্পানির দাম বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিটিকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো তদন্তসংশ্লিষ্ট কোনো কাজের অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। ফলে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজারে সর্বকালের সর্বাধিক চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। নতুন কমিশনের গৃহীত নানামুখি পদক্ষেপে সূচক-লেনদেনে নতুন উচ্চতায় আবির্ভূত হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ফলে দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হচ্ছে। কিন্তু পুঁজিবাজারের এই চাঙ্গাভাবের মধ্যে যেন ভাল-মন্দ সব এক হয়ে গেছে। বরং ভাল কোম্পানির চেয়ে অনেক দূর্বল মৌলের কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে বেশি। আর বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহসহ বিনিয়োগকারীরা। তাদের এই উদ্বেগের কারণেই বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে বিএসইসি।
যে কোম্পানিগুলোর াস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধি তদন্ত হবে, সেগুলো হচ্ছে- বিকন ফার্মা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জিবিবি পাওয়ার, এমারেল্ড অয়েল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স, ন্যাশনাল ফিড মিল, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ঢাকা ডায়িং ও ফুয়াং সিরামিক।
এলক্ষ্যে গত ১০ আগস্ট ৯টি স্বল্পমূলধনী কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধি তদন্তের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে দিয়েছে কমিশন। আর পরেরদিন মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সকালে তদন্ত সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিএসইসির পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমানকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- বিএসইসির সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট বিভাগের প্রধান মইনুল হক।
কমিটিকে কমিশনে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৬০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারছে না তদন্ত কমিটি।
জানা গেছে, আলোচ্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমারেল্ড অয়েল, ন্যাশনাল ফিড মিল, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ও ঢাকা ডায়িংয়ের উৎপাদন মাঝখানে বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। তারপরও গত ৬ মাসে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম ৫ থেকে ৭ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
এদিকে তিন বছর আগেও বিকন ফার্মা তার উৎপাদনক্ষমতার বেশিরভাগ ব্যবহার করতে পারতো না। কারণ বাজারে এর উৎপাদিত ওষুধের ওই পরিমাণ চাহিদা ছিল না। তাই কোম্পানিটি তার কারখানায় নিজেদের ওষুধের পাশাপাশি ভাড়ায় স্কয়ার ফার্মার ওষুধ তৈরি করে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। তবে গত ২ বছরে কোম্পানিটির আয় কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু আয় ৩৬ শতাংশ বাড়লেও শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ৭৫০ থেকে ৮০০ শতাংশ।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিনিয়োগবার্তাকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে দেখছি কিছু লো-ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি, যাদের ইপিএস এবং পারফমেন্স তুলনামূলক খারাপ এবং এসকল কোম্পনির মাঝে কয়েকটির উৎপাদনও বন্ধ আবার কিছু কোম্পানি মোটামুটি ভালো কিন্তু তাদের শেয়ারের মূল্য অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে- এ ধরনের কিছু কোম্পানি আমরা খুজে বের করেছি। যার প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ৯টি কোম্পানির আর্থিক বিবরণ অনুসন্ধান এবং ফাইন্যান্সিয়াল বিষয়াদিসহ খুটিনাটি বিষয়গুলো তদন্তের জন্য আমরা কমিটি করে দিয়েছি ।
এছাড়াও তাদের কোন প্রাইস ম্যানুপ্যুলেশন কিংবা অভ্যন্তরীণ লেনদেন হয়েছে কি-না এবং সিকিউরিটিজ এন্ড রেগুলেশন এর নন- কমপ্লাইন্স থাকে এগুলো তদন্ত করে ৬০ কার্যদিবসের ভিতর প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই তদন্তের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
তিনি বলেন, নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে বাজারের ওপর কমিশনের নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে। কমিশনের নানামুখি পদক্ষেপের কারণে বাজারে এখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এসেছে। কোনো অবস্থায়ই এ বাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হতে দেওয়া হবে না। বাজারকে অস্থিতিশীল করতে চায় এমন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম/