d

শারদীয় দুর্গোৎসব সার্বজনীন হউক

ড: মিহির কুমার রায়ঃ প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গোৎসবকে ঘিরে দেশব্যাপী আনন্দ-উৎসবের ফল্গুধারা থাকলেও দেশব্যাপি করোনায় (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ এবং এরই মধ্যে মৃত্যু বরন করেছে ২৭ হাজারেরও বেশী মানুষ। তারপরও জীবনতো আর থেমে নেই, থেমে থাকবেও না! শরতের শুভ্র আকাশ, কাঁশফুলে হাওয়ার নাচন আর আগমনী ঢাক-শাঁখের আওয়াজ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। গ্রাম-নগরে ধনী-গরিব ছোট-বড় সবাই মিলিত হন শরতের মিলনোৎসবে। এবারের দূর্গাপূজা পড়েছে আশ্বিন মাসে, যা শরৎকাল নামে পরিচিত। নভেল করোনার কারনে অনেক সাদাসিদেভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে থাকবে না কোন মেলা কিংবা শোভাযাত্রা। যার ফলে সাশ্রয়ী অর্থ মানবতার সেবায় গরীবদের মধ্যে বিতরন করা হচ্ছে বলে সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি জানিয়েছে।   

ভারতীয় উপমহাদেশে এটি হিন্দু ধর্মের প্রধান অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত এই শারদীয় দুর্গোৎসব, যা বাঙ্গালী সনাতন হিন্দু ধর্ম্মালম্বীদের সবচাইতে বড় উৎসব হলেও এখন সেটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। কথায় বলে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এই ধারনায় বাংলাদেশের সকল বাঙ্গালী ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে এর আমেজ আনন্দ  উপভোগ করে আসছে কালান্তরে। ওপার বাংলার বারো ইয়ার মানে বারোজন বন্ধুর অপার উৎসাহে যে পূজার শুরু তার নামেই চালু হয়ে গেল বারোয়াড়ি তথা সর্বজনীন শারদ উৎসব। বাংলাদেশ ও উভয় বাংলার সীমানা পেরিয়ে এই উৎসব এখন এমন এক রূপ ধারণ করেছে যার সঙ্গে আর কিছুর তুলনা চলে না। 

মহাভারত অনুসারে  দুর্গা বিবেচিত হন কালী শক্তির আরেক রূপে। দুর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী তাই দেবী মাতা হিসেবেও তার পূজা হয়ে থাকে। কৃত্তিবাসী রামায়ণে ব্রহ্মার পরামর্শে রামের দুর্গাপূজা করার কথা উল্লেখ আছে। সনাতন ধর্মের আর্য ঋষিরা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতীক হিসাবে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ লাভের জন্য আরাধনা করতেন। আজো বাংলায় শ্রীশ্রীচণ্ডী  নামে সাতশত শ্লোক বিশিষ্ট দেবী মাহাত্ম্য পাঠ দুর্গাপূজার প্রধান ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।

 দুর্গাপূজার প্রচলন নিয়ে বেশ কয়েকটি মতবাদ পাওয়া যায়। মার্কন্ডেয় পুরাণ মতে, চেদী রাজবংশের রাজা সুরাথ খ্রিষ্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে উড়িষ্যা) দুর্গাপূজার প্রচলন করেছিলেন,ইতিহাস বলছে দুর্গা পুজার প্রচলন এ দেশে শুরু হয়েছিল পনের শতকের শেষের দিকে এবং এ নিয়ে অনেক কল্প কথা রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার তাহিরপুরের জমিদার রাজা হরি নারায়ণের  তনয়  কংস নারায়ন দুর্গা পুজার আযোজন  করেছিলেন, যা সেই সময়কার মূল খরচ হয়েছিল নয় লাখ  রুপি, যা ছিল অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণ। আরও কল্পকথা আছে যে দিনাজপুরে এবং মালদহের জমিদার গন বঙ্গ দেশে প্রথম আচলা দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন। আবার তৃতীয় আরও একটি মতবাদ রয়েছে যে ১৭৫৭ সালে ইংরেজ শাসক লর্ড ক্লাইভ এর সম্মানে কলকাতার জমিদার রাজা নবকৃষ্ন জাকজমকপূর্ণ ভাবে এই পূজার বাংলাদেশে শরৎকালে শারদীয় এবং বসন্ত কালে বাসন্তী নামে দুর্গাদেরকে পুজা করা হয়। 

আর সমগ্র আয়োজনের পক্ষটি দেবীপক্ষ নামে খ্যাত। পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়; দিনটি মহালয়া নামে পরিচিত। এই পুজা দশদিনের পর্ব যা শুরু হয় শুভ মহালয়া দিয়ে যা এই বছর পড়েছে ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬ আশ্বিন ১৪২৮ বৃহস্পতিবার অমাবস্যা রাত ১২/৫৩/১৪ সে: পর্যন্ত সেখানে হিন্দু ধর্ম্মাবলীরা  তাদের মৃত পুর্ব পুরুষদের জল ও খাদ্য দিয়ে তর্পন করে এবং এই দিনে দুর্গা দেবী তার স্বামীর বাড়ী কৈলাস থেকে মর্তে রওয়ানা হন। মহালয়ার দিন অতি প্রত্যুষে চন্ডীপাঠ করার রীতি রয়েছে। আশ্বনি শুক্লা প্রতপিদ তিথিতে দৌহত্রি মাতামহরে তর্পণ করেন। শ্রাদ্ধকর্তাকে  স্নান করে শুদ্ধ হয়ে ধুতি পরে শ্রাদ্ধ করতে হয়। মহালয়ার দিন ভোর বেলাতেই ঘুম ভাঙে বতোর বা টেলিভিশন বার্তায় (মহালয়ার গান-‘বাজল তোমার আলোর বেণু’) শুনে বা মর্তে দেবী আগমনের নাট্যরূপ দেখে। অবসান হয় প্রতিপক্ষের, সূচনা হয় দেবীপক্ষের। বছর ঘুরে আনন্দময়ীর এই আগমন সান্নাদ্ধি বাঙালি তার দুঃখ যন্ত্রণা ভুলে কিছুটা আনন্দ পেতে চায় মধুক টবৈনিাশিনী, মহিষু সুরমর্দিনী মহাদেবী আর্বিভার ঘটে মহালয়ার পবিত্র মুহুর্তে দুর্গা পুজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো মহা যষ্ঠী ০৬ কার্তিক, ১১ অক্টোবর ২০২১ রোববার দুপুর ০২/৫৪ পর্যন্ত যে দিন ভক্ত পূজারী বৃন্দ দেবীকে সম্বর্ধনা জানায়, যার মধ্য দিয়ে শারদীয় উৎসবের শুভ উদ্বোধন হয়। তারপর পর্য্যায়ক্রমে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী  যার মাধ্যমে দেবীকে বিদায় জানানো হয় তার স্বামী সহ সকলকে নিয়ে শুশুরালয়ে কৌলাসে গমন।  দেবীপক্ষের সমাপ্তি হয় পঞ্চদশ দিনে অর্থাৎ পূর্ণিমায়। এই পঞ্চদশ দিনটিতে বাৎসরিক লক্ষ্মীপূজা  অনুষ্ঠিত হয়। সার্বজনীন এই দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও বাস্তবে মহালয়া থেকে উৎসবের সূচনা এবং লক্ষ্মীপূজার সমাপ্তি। 

দুর্গা পুজায় দুর্গার সাথে বাহনে থাকেন তার সন্তানগন যেমন লক্ষী (ধন সম্পদের প্রতিক), স্বরস্বতী (জ্ঞানের প্রতিক), গনেশ (শুভ সুচনার প্রতীক) এবং কার্তিক (যুদ্ধ বিদ্যার প্রতিক)। এটা ধরেই নেয়া হয় দুর্গা দেবী তার সন্তানদের নিয়ে কৈলাসে থেকে মর্ত্যে আসেন আবার দশদিনে শেষে নিজের ঘরে ফিরে যান।। দুর্গা পূজার অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে রোধন (বিষপড়সব অধিবাস,নব পঞ্জিকা স্মান, স্বামী পূজা ও অষ্টমী পূজা ওমা ও ভোগ কুমারী পূজা, সিন্ধর খেলা ও ইমারশান (দশম দিনে বিজয় দশমীতে মহিলাদের দুর্গার কপালে সিঁদুর পড়ানো নিজেদের মধ্যে সিদুর পড়ানো ও বিদায় ও ধোনটি নাচ ইত্যাদি প্রানীর নামে বিসর্জন সাধারনত নেপাল, পশ্চিম বাংলা, আসাম ও ওরিষ্যার মন্দিরে দেয়া হয়, যার মধ্যে আছে মহিষ, ছাগল, পাঠা ইত্যাদি। দেবী দুর্গা বিভিন্নরূপে এ মর্তের পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে থাকেন এবং আমাদের সার্বিক মঙ্গল নিশ্চিত করেন বিধায় তিনি সর্বমঙ্গলা। মায়ের দুইরূপ - একটি ভয়ংকরী অপরটি ক্ষমেংকরী। দুষ্টের জন্য তিনি ভয়ংকরী আবার শিষ্টের জন্য তিনি ক্ষমাকরী।  আবার শিবের শক্তি বলেও তিনি শিবা। কারণ তিনি সব প্রার্থনা এবং আরাধনা মঞ্জুর করেন এবং অসাধ্যকে সাধন করেন। তাই তিনি শরণ্য, তিনি গৌরী। দুর্গা দশভূজ নামেও পূজিত এবং আরোধিত হয়ে থাকেন। এখানে নিয়ম আছে নদীর পাড় এবং পতিতালয়ের দরজা থেকে মাটি সংগ্রহ করে প্রতিমা তৈরি করা যার সাথে খড় পাট সহ আরও উপকরন মিশিয়ে কাঠামোটিকে শক্তিশালী করা হয়। এই প্রতিমা তৈরির কাজটি একটি গ্রুপ যাদেরকে বলা হয় থাকে কুমার তারাই বিশেষ ভাবে পারদর্শী যদিও বর্তমানে সময়ে আর্ট কলেজ /ইনিষ্টিটিউট থেকে পাস করা অনেক আর্টিষ্ট মৃত শিল্প কাজে প্রতিমা তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছেন যেখানে ধর্ম্ম কোন বিষয় নয়। শ্রী দুর্গা বার মাসে বার রুপে আমাদের মাঝে আবির্ভুত হয় এবং বাংলাদেশ সহ পশ্চিম বঙ্গ, বিহার, ওরিষ্যা, আসাম ও ত্রিপুরাতে এই পূজার  প্রচলন রয়েছে এবং এর বাহিরেও হিন্দি ভাষাভাষী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এ পুজার অনুষ্ঠান হয় ভিন্ন আচার রিতি, নীতি নিয়মাচারে। যেমন পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় দুর্গাপুজাকে বলা হয় আখাল বোধন যার অর্থ অসময়ের দেবীর পুজা শারদীয় পুজা যা শরৎ কালের প্রতিক, শারদ্যোৎসব, মহা পূজা, মায়ের পূজা ও পূজা । কিন্তুু বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে দুর্গা পাুজাকে আবারও বলা হয় শক্ত হিন্দু উৎসব যেমন নভরত্রী যা একি দিনে পালিত হয় ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যেমন গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, কেরালা এবং মহারাষ্ট্রে । আবার কুল্লু দেশিরা পালিত হয় কুল্লু উপত্যকায়, হিমাচল প্রদেশে, মাইশোর, কর্নাটক এবং বোম্বাই এ গোলে নামে পালিত হয়, তামিলনাডুতে বম্মালা কুলুড নামে পালিত হয়, অন্দ্রপ্রদেশে ও তেলেঙ্গানায় বাথুকামা নামে পালিত হয় । 

এই দুর্গা পূজায় প্রথমে রাজাদের অনুদান শুরু হয়েছিল যেমন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী  আগতলা দুর্গাবাড়ী মন্দিরে রাজা রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুর কর্তৃক প্রথম দুর্গা পুজা শুরু হয়েছিল। দুর্গা পূজা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও জটিল নিয়ম সিদ্ধ কার্য্যক্রম যা কেবল সম্পদশালী  ধনী ব্যক্তিদের দ্বারাই আয়োজন সম্ভব ছিল। কিন্তু পরবর্তিতে ১৯ শতকের শেষ ভাগে কলকাতা ও পূর্ব বঙ্গের মধ্যশ্রেনীর সনাতন ধর্ম্মাবলম্বীগন এই প্রথার একটি রুপান্তর আনয়ন করেছিলেন যাকে বলা হয় কমিউনিটি ভিত্তিক সার্বজনীন পুজা এবং অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন পুজা কমিটির দলে ভাগ হযে পুজার বিশাল ব্যয়ভার বহর করার জন্য বিশেষত প্যান্ডেল তৈরি , আলোক সজ্জা, প্রতীমা তৈরি, পূজা অর্চনা, প্রতীমা সাজসজ্জা, ভক্ত সহ অতিথী আপ্যায়ন, ডাকডোল বায়না, ধরলীয় পালাগান আয়োজন ইত্যাদি। দুর্গা পুজা একটি ধর্মীয় উৎসব হলেও সময়ের আবর্তনে বর্তমানে তা সামাজিক ও সাংস্কতিক উৎসরে পরিণত হয়েছে সত্যি কিন্তুু এর একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে। কারন দেশের রাজনৈতিক দল ও সরকার শারদীয় দুর্গোৎসবে মোটা অংকের টাকা অনুদান হিসাবে ডোনেসন দিয়ে থাকে আবার বারোয়ারী পুজা মন্ডপগুলোর আয়োজকদের চাউল, চিনি, ডাল ইত্যাদি সরবরাহ করে থাকে। সরকার প্রধান প্রতি বছর হিন্দু কল্যান ট্রাষ্টের মাধ্যমে অনেক অনুদান দিয়ে থাকে। শারদীয় উৎসবকে ঘিরে সাহিত্যেও  বলয় সৃষ্ঠি হয়, নতুন লেখকের সৃষ্টি হয় এবং পূজা সংকলন নিয়মিত প্রকাশ হয় যা সাহিত্যের বাহক কিংবা সংস্কৃতির বাহক। ঢাকার বড় বড় পূজা উজ্জাপন কমিটির পক্ষ থেকে পূজা সংকলন বাহির করা হয় যা  দিন দিন বাড়ছে। দেশের প্রথম শ্রেনীর পত্রিকাগুলো শারদীয় উৎসবকে ঘিরে বিশেষ ক্রোরপত্র প্রকাশ করে এবং  সরকারী/বেসরকারী টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে।

বাংলাদেশে দুর্গা পূজার মন্ডপগুলোতে মহা সপ্তমী থেকে মহা দশমী পর্যন্ত বিপুল পুজারীর সমাগম হয় এবং গত ২০১৯ শে আঠাশ হাজারেরও বেশি পুজা মন্ডপ পারিবারিক ও বারোয়ারী ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যা গত ও বর্তমান বছরে করোনার কারনে সম্ভব হয়ে উঠছে  না। বাংলাদেশ পুজা উজ্জাপন কমিটি ও  ঢাকা মহানগর পূজা উজ্জাপন কমিটি সার্বিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষন করে থাকেন। দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা খুবি জটিল যা পন্ডিত ও তার সহযোগিদের দ্বারা পরিচালিত হয় যেমন মহা সপ্তমীতে পুজারম্ব, অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরন, সন্ধা আরতি; মহাষ্টমিতে সন্ধি পুজা, কুমারী পুজা ( রামকৃষ্ন মিশন মট), অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরন, সন্ধা আরতি; মহানবমী পুজারম্ভ, অঞ্জলী প্রদান, চন্ডী পাঠ, সন্ধ্যা আরতি এবং সর্বশেষ বিজয়া দশমী পুজারম্ভ ,দর্পন বিসর্জন ও শান্তির জল গ্রহন, সিঁদুর পরানো ও প্রতিমা বিসর্জন। দুর্গাপুজার ধর্ম্মীয় আচরনের মধ্যে রয়েছে ভক্তীমুলক গান, ডজন, যাত্রা পালা, লক্ষী বিলাস, নৌকা বিলাশ, নিমাই সন্নাস ইত্যাদি। এদের আয়োজনটি থাকে সূচনা হয় দূর্গাপূজার সময় থেকে আর শেষ হয় পহেলা বৈশাখের (১৪ই এপ্রিল) অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এমনিতেই এই যাত্রা শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে তার উপর মরার উপরে খারার ঘায়ের মত কভিড-১৯ এসে সার্বিক আনন্দকে ম্লান করতে বসেছে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ে এই পূজার গুরুত্ব অপরিসীম, বিশেষত: শিল্পী কুশলীদের বা সাজ সজ্জায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর মধ্যে শারদীয় উৎসবকে ঘিরে ব্যবসা বানিজ্যের যে প্রসার তা এই খাতটিকে প্রসারিত করে থাকে যেমন ফুল-ফল, ডাকি, বাদ্য বাজনা, কাপড় চোপড় বিতরন, পরিতমা শয্যা, অলংকরন, মুদ্রন শিল্প, ভোগ্য পণ্য যেমন চাল, ডাল, শাড়ী ক্রয় বিক্রয়, মিষ্টি ইত্যাদি। প্রতি বছরই এই দিনটির জন্য ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করে থাকেন, যা দেশের সংস্কৃতি, ব্যবসা বানিজ্য ও সামাজিক উন্নয়নের এক অপূর্ব নিদর্শন। এই বৎসর দেবীর ঘোটাকে আগমন ও গমন। ঢাকা শহরের পূজা মন্ডপগুলোর মধ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ মিশন, বনানী ও কলাবাগান সার্বজনীন পুজা মন্ডপ, সনাতন সমাজ কল্যান সংঘ পুজা মন্ডপ খামারবাড়ী, শাখারী বাজার পূজা মন্ডপ উল্লেখযোগ্য ।

বাংলাদেশ পুজা উজ্জাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদকের মতে এবার সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজারের মত স্থায়ী ও অস্থায়ী পুজা মন্ডপ স্থাপিত হতে পারে যার মধ্যে রাজধানী ঢাকাতে মন্ডপের সংখ্যা প্রায় দুইশত চৌত্রিশটির মত  হবে। পুরাতন ঢাকার লালবাগ থানার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কর্তৃপক্ষ করোনার মহামারীর কারনে সকল স্বাস্থ্য বিধি মেনে পাঁচদিনে সিমিত আকারে কর্মসুচি ঘোষনা করেছে যার মধ্যে রয়েছে ভক্তি মুলক গান পরিবেশন, গরীবদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, মহা প্রসাদ বিতরণ, আরতী প্রতিযোগিতা,  সেচ্ছায় রক্তদান কর্মসুচি ও বিজয়া দশমির পর্ব। বাংলাদেশের পূজার জগৎ অনেকটা পারিবারিক গন্ডি পেড়িয়ে এখন দেশে  কিংবা বিদেশে বিস্তৃতি ঘটেছে বিশেষত:যেখানে বাঙলা ভাষা ভাষিরা আছে যেমন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রা, যুক্তরাজ্রো ও ভারতে। উংসবের আমেজ যত বাড়ে ততই ব্যাপ্ত হয আনন্দের সীমানা । পূজার মসুমে অনেকেই  দেশে আসে আত্মীয় স্বজনদের সাথে পূজা উজ্জাপন করতে এবং আশা করা যায় আগামিতে এক অসাম্প্রদায়িক বংলাদেশ গড়তে শারদীয় দুর্গোৎসব বিশেষ ভুমিকা রাখবে। 

লেখক: অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)