স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীদের মুনাফা লাভের কৌশল
মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদারঃ আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে প্রায়শই স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীগনের হতাশার কথা শুনতে পাই। পুঁজিবাজারের বড় বড় বিনিয়োগকারীগনের কৌশলের কাছে প্রায়শই হার মানতে হয় স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীদের। আমরা জানি, মার্কেট প্লেয়ারগন তাদের পুঁজি নিরাপদ রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়িক কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। বিশেষ করে তাদের কয়েক স্তরের বিনিয়োগ ফান্ড থাকে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগন পুঁজি স্বল্পতায় তেমন কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে না পেরে ক্ষতির সম্মুখীন হন।
স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীগন যদি নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখেন এবং নিজের বিনিয়োগ কৌশলে পরিবর্তন আনেন- তাহলে বাজার থেকে ভাল মুনাফা ঘরে তুলতে পারবেন।
১. বিনিয়োগকারী হয়ে পুঁজিবাজারে অবস্থান করতে হবে ব্যবসায়ী হয়ে নয়। অর্থাৎ পণ্যের মতো ব্যবসায়িক চিন্তা ভাবনা পরিহার করতে হবে।
২. দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারী হতে হবে। স্বল্পমেয়াদী চিন্তা না করে কোম্পানী ভেদে ৪৫ থেকে ১২০ দিনের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।
৩. এন্ট্রি পয়েন্ট নির্ধারণপূর্বক বিনিয়োগ করতে হবে । যে সকল শেয়ার আপট্রেন্ডে ঝুলে গেছে, তাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৪. যে সকল শেয়ারের মূল্য বটম লাইনে আছে, কোম্পানীর স্পর্শকাতর তথ্য পর্যালোচনাপূর্বক তাতেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।
৫. স্টপলসের ব্যাপারে স্পষ্ট ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে ,অন্যথায় ক্ষতির মাত্রা বড় হবে।
৬. বড় পূুঁজির কোম্পনীতে বিনিয়োগ না করে স্বল্প ও মাঝারি পুঁজির কোম্পনিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
৭. দ্রূত মার্কেট থেকে প্রফিট সংগ্রহ করুন। তবে টার্গেট মূল্যে না আসা পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন এবং আসার সাথে সাথেই প্রফিট গ্রহন করুন। এতে করে আপনার পোর্টফোলিওর গ্রোথ বাড়বে।
৮. বর্তমান বাজারের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। কোন কোন সেক্টরের দিকে পাবলিক সেন্টিমেন্ট ধাবিত হচ্ছে- তা জানা ও বুঝার চেষ্টা করতে হবে । অর্থাৎ মার্কেটের স্পর্শকাতর তথ্য সম্পর্কে সবসময় আপডেট থাকতে হবে।
৯. কোনো শেয়ারে পজিশনে যাওয়ার আগে কোম্পানীর ফিন্যান্সিয়াল তথ্য সম্পর্কে ভাল করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোথায় এবং কেন এন্ট্রি দিচ্ছেন -তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
১০. পজিশন নেওয়ার পর অথবা টেনশন না করে আপনার বিশ্লেষনকৃত তথ্য-উপাত্তের উপর আস্থা রেখে অপেক্ষা করুন। সফলতা আসবেই। এতে করে আপনার নিজের প্রতি আস্থা বাড়বে।
১১. ধৈর্য্য ধারন করার অভ্যাস করুন- শেয়ারবাজারে ধৈর্য্যরে কোন বিকল্প নাই। আমাদের পর্যবেক্ষন থেকে দেখা যায়, অধৈর্য্যরাই ভুল পথে পা বাড়ায় ও ক্ষতির সম্মুখীন বেশি হয়।
১২. সুশৃংখলভাবে বাজারে অংশ নিন। বিশৃংখলভাবে বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখীন না হয়ে অত্যন্ত সুশৃংখলভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ারে তথ্য পর্যালোচনা সাপেক্ষে নিশ্চিত হয়ে, কম সংখ্যক ট্রেড এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে সফলতা আসবেই।
১৩. দু:চিন্তা আপনাকে অনিয়ন্ত্রিত ট্রেড করতে সহায়তা করে, তাই দু:চিন্তা পরিহার করে নিয়ন্ত্রিত ও কম সংখ্যক ট্রেডের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করতে হবে। সিউর শট নিতে হবে।
১৪. তথ্য প্রবাহের দিকে নজর রাখুন। তবে বাতাসে ভাসা খবর বিশ্বাস করবেন না। আপনি চোখ ও কান খোলা রাখলে চারিদিকে শুধু ভূূয়া খবর পাবেন। এতে আপনার ক্ষতি হবার সম্ভাবনাই বেশী। তাই নির্ভরযোগ্য ও তথ্যভিত্তিক খবরে বিশ্বাস রাখবেন ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন।
১৫. শিক্ষা- সঠিক শিক্ষাগ্রহন,শিক্ষার বিকল্প নাই, একজন সফল বিনিয়োগকারী হতে হলে কোম্পানীর সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে হবেও বিনিয়োগের জন্য ভালো কোম্পানীর এনালাইসিস জানতে হবে।
আলোচ্য বিষয়গুলোর উপর যদি আমরা গুরুত্ব আরোপ করি ও বিনিয়োগের পূর্বে কোম্পানীর সকল আর্থিক বিষয়াদি বিশ্লেষন করি, বর্তমান বাজারের গতি-প্রকৃতি অনুধাবন করি, তাহলেই ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য গ্রোথ সম্পর্কে অনুমান করতে পারব। সংগৃহীত তথ্যাদি যদি সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করতে পারি- তাহলে একজন স্বল্প বিনিয়োগকারী বাজার থেকে সীমিতসংখ্যক ট্রেড এর মাধ্যমে তার কাংক্ষিত মুনাফা সংগ্রহ করতে পারবেন।
লেখকঃ পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।
বিনিয়োগবার্তা/এসআর/এসএএম//