জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কি মূল্যস্ফীতি বাড়াবে?
ড: মিহির কুমার রায়ঃ অতি সম্প্রতি সরকারের ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় বড় ধরনের আঘাত লেগেছে বলে মনে করেন দেশের বেশিরভাগ মানুষ। এ মূল্যবৃদ্ধি সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষের ওপর চাপ ফেলবে বলে অনেকেই মনে করেন। অর্থনীতি তার নিজ নিয়মে এগিয়েছে যেখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে কৃষক, কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষজন। মানুষ তার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সরকার বাংলাদেশোত্তর কালে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মূল্যস্ফীতি বেশির দিকে থাকে সাধারণত এমন অর্থনীতিতে, যাতে প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি ভালো থাকে। একটা সহনীয় মাত্রার মূল্যস্ফীতি অর্থনৈতিক উন্নতির নির্দেশক এবং সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করে। উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার ২/৩ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত আর আমাদের মতো দেশে এটা থাকা উচিত ৫ শতাংশের নিচে। এর বেশি যাওয়াটা অর্থনীতির সুস্বাস্থ্যের পরিপন্থী, আর যদি সেটা ডাবল ডিজিট স্পর্শ করে, তাহলে বিপজ্জনক পর্যায়ের শুরু।
বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি ডেটা অন্য সব সরকারি ডেটার মতোই বাজারে চলছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে সরকারিভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি। এটা আদৌ সঠিক তথ্য ছিল না। কারণ, গত বছরও এই সংখ্যাই বলা হয়েছিল। অথচ টিসিবির ২০২০ সালের ১ মার্চ ও সাম্প্রতিক বাজার দরের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সে সময়ের তুলনায় এখন মোটা চালের গড় দাম সাড়ে ৩১ শতাংশ, খোলা আটার ২০ শতাংশ, খোলা ময়দার ৩৩ শতাংশ, এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৪৩ শতাংশ, চিনি ১৯ শতাংশ, মোটা দানার মসুর ডাল ৩০ শতাংশ ও গুঁড়া দুধ ১৩ শতাংশ বেশি। মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা পেরিয়েছে। এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির আগেই বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।
সহনীয় মাত্রার মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বিরাট বিপদ তৈরি করে। এর কারণ মূল্যস্ফীতিজনিত প্রত্যাশা অর্থাৎ মানুষ যেহেতু জানে, তার হাতে থাকা অর্থ দ্রুতই মূল্য হারিয়ে ফেলবে, তখন মানুষ ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে, এমন যেকোনো পণ্য এখনই কিনে ফেলতে চায়। এতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ আরও বেড়ে যায়। ওদিকে পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এবং অনেক বেশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না থাকার কারণে পণ্য উৎপাদকেরা উৎপাদন কমিয়ে দেন এবং লোক ছাঁটাই করেন। তাতে আরও বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। এরপর ক্রমাগত এই দুষ্টচক্রটি চলতে চলতে পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) সম্প্রতি প্রকাশিত যৌথ জরিপে জানা গেছে, করোনাকালে নতুন করে দরিদ্র হওয়া মানুষের সংখ্যা বর্তমানে ৩ কোটি ২৪ লাখ। সরকারি হিসাবেই করোনার আগে বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ছিল পৌনে ৪ কোটি। অর্থাৎ নতুন দরিদ্রসহ বর্তমানে বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে সাত কোটি। জিডিপির প্রবৃদ্ধি আর মাথাপিছু আয় নিয়ে ফুলিয়ে - ফাঁপিয়ে সরকার যা–ই বলুক না কেন, এটা এখন খুব স্পষ্ট যে করোনার আগেই শ্লথ হয়ে আসা অর্থনীতি করোনার অভিঘাতে আরও অনেক খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। ওদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতি শ্লথ থাকা এবং বৈদেশিক অনেক কর্মী তাঁদের সঞ্চয় দেশে পাঠানোর কারণে করোনার সময় দেশে ডলার রিজার্ভের বিরাট উল্লম্ফন হয়েছিল। করোনার প্রভাব কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক কর্মীদের টাকা আসায় ভাটার টান শুরু হয়েছে। ফলে এখন দেশে প্রতিদিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমছে। এর ফলে সরাসরি ভোক্তার কাছে যাওয়া আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্যের প্রায় সব ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো আমদানি করা পণ্য প্রয়োজন হয়, ফলে দাম বাড়ছে সেগুলোরও।
অর্থনৈতিক ধীরগতি, কর্মসংস্থানহীনতা এবং অতি দ্রুত কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া আর সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি আমাদের এই বার্তা দেয়, বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবেই এক স্থবির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিকে কোথায় নিয়ে যাবে, আশা করি বুঝতে পারছি আমরা। দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতায় আমরা জানি, এই দেশে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে জিনিসপত্রের দাম যতটা বাড়ার কথা, বেড়ে যায় তার চেয়ে অনেক বেশি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলো কৃষি। একথা ঠিক যে, জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান শতকরা হিসাবে হ্রাস পাচ্ছে ও তার মানে এই নয়, কৃষি উৎপাদন কমে গেছে। এবং অন্য দুটি প্রধান খাত, মেনুফ্যাকচারিং এবং সেবা খাতের অবদান কৃষির তুলনায় অধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আপেক্ষিক অর্থে কৃষির অবদান কমেছে। বাংলাদেশের কৃষিতে একটি লক্ষণীয় পরিবর্তন হলো বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদন বৃদ্ধি। এবারের ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বড় রকমের ধাক্কা লাগবে বোরো আবাদে এবং বোরো ধানের জন্য বীজতলাও তৈরি হচ্ছে, যা শুষ্ক মৌসুমের ফসল। বোরো আবাদের জন্য জমিতে ভূগর্ভস্থ সেচের পানি দিতে হয় শ্যালো টিউবওয়েল এবং ডিপ টিউবওয়েল ব্যবহার করে, যা এখন কৃষকের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। এই সকল টিউবওয়েল গুলোর কার্যকারিতা নির্ভর করে ডিজেল প্রাপ্তির ওপর যেখানে বিদ্যুৎ বিতরণের নেটওয়ার্ক নেই। হঠাৎ করে লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বৃদ্ধি করায় আসন্ন বোরো আবাদের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যার ফলে প্রতি একরে উৎপাদন খরচ বাড়বে কৃষকের। বিএডিসির সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট কৃষকের সংখ্যা ১ কোটি ৯৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮ জন অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি। এর মধ্যে সেচযন্ত্রের আওতায় ১ কোটি ৯৪ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭২ জন রয়েছে। শুধু ডিজেল সেচভুক্ত কৃষকের সংখ্যা হলো ১ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার। বছরে সেচ বাবদ প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেলের প্রয়োজন পড়ে। পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে, এখনো আমাদের দেশের কৃষকরা প্রধানত ডিজেল নির্ভর। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সূত্রে জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে সেচ ও চাষ দিতে দরকার ২০ লিটার ডিজেল। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষকদের বিঘা প্রতি ৩০০ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে। এর ফলে মুনাফাও প্রায় ৩ শতাংশ কমে যাবে। এবারের বোরো মৌসুমে কৃষকের সেচ বাবদ খরচ হবে ৭৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিসটিকস ২০১৮ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব উপকরণ ব্যবহারের কারণে কৃষকের খরচ হয় গড়ে ১৪ হাজার ৯০১ টাকা। যার প্রায় ৪৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ বা ৬ হাজার ৪৭৩ টাকা ব্যয় হয় সেচকাজে। আবার গোটা কৃষি খাতে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সেচ কাজে। দেশে গত অর্থবছরে প্রায় ১৬ লাখ সেচযন্ত্র পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ডিজেলে চলেছে ১২ লাখ ৪৪ হাজার ও বাকিগুলো বিদ্যুতে পরিচালিত হয়েছে। এছাড়া কৃষিপণ্য পরিবহনে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে। এতে চলতি রবি মৌসুমের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে। সম্প্রতি ডিজেলের দাম ৬৫ থেকে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। এ মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে কৃষি খাতে। বিশেষ করে আসন্ন বোরো মৌসুমে প্রথম ধাক্কা খাবেন কৃষক। বাড়তি খরচ করে উৎপাদনের পর ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি করা যাবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকের। এরই মধ্যে আমন ধানে বাড়তি ব্যয় গুনতে হচ্ছে তাদের। জমি চাষসহ নানা কাজে খরচও বাড়তে শুরু করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উফশী, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাত মিলিয়ে আবাদ হয়েছে প্রায় ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। চলতি অর্থবছরে সেটি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সেচের জন্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবারো বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা তৈরি করবে। বোরো ধানের আবাদ ছাড়াও সবজি, তেল, ডালজাতীয় খাদ্য ও দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন করা হবে। এসব খাদ্য পণ্য উৎপাদনেও সেচের ব্যবহার হয়।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য বলছে, গত বোরো সেচ মৌসুমে ছয় মাসে প্রয়োজন হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টন ডিজেল। গত অর্থবছরের চাহিদার সমপরিমাণ ডিজেলের ব্যবহার হতে পারে চলতি বছর। এর মধ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরে তেলের চাহিদা থাকবে ১ লাখ ৯৪ হাজার টন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ২ লাখ ৩৩ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ৪ লাখ ৬৬ হাজার, মার্চে ৫ লাখ ৫ হাজার, এপ্রিলে সাড়ে তিন লাখ ও মে মাসে প্রায় এক লাখ টন। এসব ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়লে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে কৃষকের পণ্য পরিবহন ও যান্ত্রিকীকরণের বাড়তি খরচও যুক্ত হবে। ফলে সেচ ও পরিবহন ব্যয়ের বাড়তি খরচ মিলিয়ে কৃষকের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বাড়তি ব্যয় হতে পারে। অবশ্য এ বাড়তি খরচ মেটাতে হলে কৃষককে বাড়তি দাম দিতে হবে। বাড়তি দাম দিলে চালের দাম বাড়বে। ফলে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জাতীয় মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভর্তুকি দিয়ে এক বছর জ্বালানি তেলের মূল্য একই জায়গায় রাখতে গিয়ে সরকারের কম-বেশি ছয় হাজার কোটি টাকা খরচ হতো। অথচ গত সাত বছরে জ্বালানির নিম্ন মূল্যের কারণে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন আয় করেছিল ৪৩ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি না দিলেও সরকারকে কিন্তু কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে এমনকি এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না কিনেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। জ্বালানির দাম বাড়ানো সরকারের জন্য সত্যিকারের বিপদ তৈরি হচ্ছে, যেমন সমাজে ব্যাপকভাবে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়াজনিত ঝুঁকি, ভুখা মানুষ সরকারের ক্ষমতায় থাকার জন্য চরম বিপদ তৈরি করতে পারে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবারই শেষ নয়, আরও হতে পারে, এ রকম একটি ইঙ্গিত করে পরিকল্পনামন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে সরকার গঠনের মাত্র সাত দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ডিজেল এবং কেরোসিনের মূল্য কমিয়েছিলেন। এর প্রায় দুই মাসেরও কম সময়ে শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালের ১ মার্চ জ্বালানি মূল্য কমিয়েছিলেন। এর তিন মাসের মাথায় ২০০৯ সালের ১ জুন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে আবার জ্বালানির মূল্য কমানো হয়। এরপর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল এবং একই বছরের ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জ্বালানি মূল্য কমানো হয়। অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০০৯ সাল থেকে এ যাবৎ মোট পাঁচবার জ্বালানি মূল্য কমানো হয়েছে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য বৃদ্ধির কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ৬ মে ২০১১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১১ নভেম্বর ২০১১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১১ এবং ৪ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মোট পাঁচবার জ্বালানি মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করেছিল।
জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা বিশ্লেষণ করে বলা হয়, গত সাত বছরে এ বাবত সরকারের লোকসানের চেয়ে মুনাফার পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিক্রি এবং সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিলেই দাম বৃদ্ধির কোনো প্রয়োজন পড়ে না। করোনার অভিঘাত থেকে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় জ্বলানির দর বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে সাধারণ জনগন চাপে পড়বে ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে। অর্থনেতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক মুহূর্তে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। নৈতিক ভাবে ও রাজনৈতিক ভাবেও নয়।
লেখক: অর্থনীতিবিদ ও গবেষক।