মিহির

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু ও সরকারের সাফল্য

ড: মিহির কুমার রায়: গত এপ্রিলে মহান জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানান,  ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দেশের দীর্ঘ নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু ২০২২ সালের শেষ নাগাদ চালু করতে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে। কিন্তু গত ২৫শে মে বুধবার মিডিয়ার বদৌলতে জানা যায় আগামী ২৫শে জুন, ২০২২ তারিখ সকাল ১০টায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী গাড়িতে চড়ে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যাবেন,  সেখানে আরেক দফা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন এবং পরে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীতে জনসভা করার কথা রয়েছে। সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ চলছে,  মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে যেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে এবং এর পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক। এর ফলে পদ্মার ওপারে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলা, ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর,  মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী,  পোপালগঞ্জ জেলাসহ মোট ২১ জেলার ৩ কোটি মানুষ এ সেতুর ফলে সরাসরি উপকৃত হবে। বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার অর্থনৈতিক চিত্র। এর ফলে বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের পদ্মার ওপারে বিনিয়োগের ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে। 

এখানে উল্লেখ্য যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামি লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরি ১৯৯৮ সালে পদ্মায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন সেই সরকার এবং সেই উদ্যোগের পথ ধরে ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয় এবং ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু পরবর্তি সাত বছর আওয়ামি লীগ সরকার ক্ষমতায় না  থাকায় অন্য সরকারের সময় পদ্মা সেতু প্রকল্পের গতি থমকে যায়। তারপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামি লীগ সরকার বিজয়ী হলে প্রকল্পটি ফের গতি পায়। ২০০৯ সালের ১৯ জুন পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে এবং ২৯ জুন চুক্তি হয় পরামর্শকের সঙ্গে। 

দেশের মানুষের অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মায় যে সেতু গড়ে উঠছে শুরুতে সে প্রকল্পে একটি বড় অর্থায়ন করার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংক ও কয়েকটি বিদেশী উন্নয়ন সংস্থার। তখন এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। মোট অঙ্কের ভেতরে বিশ্ব ব্যাংক একাই অর্থায়ন করতে চেয়েছিল ১২০ কোটি মার্কিন ডলার। বাকি অর্থ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক,  ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক,  জাপানী উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের জোগান দেয়ার কথা ছিল। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। বিশ্ব ব্যাংক সরে যাওয়ায় অন্যান্য বিদেশী দাতা সংস্থাও প্রকল্পটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ঋণ চুক্তি ২০১২ সালের ২৯ জুলাই বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক। পরবর্তী কালে বিশ্ব ব্যাংক ও সরকারের মাঝে নানা আলোচনার এক পর্যায়ে বিশ্ব ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা না নেয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেন। এ লক্ষ্যে তিনি দেশের মানুষ ও প্রবাসীদের সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের প্রেক্ষিতে শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ। সব মন্ত্রী একমাসের সম্মানী জমা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন,  সচিবরাও দেন একটি উৎসব ভাতার সমপরিমাণ অর্থ। এভাবে চলতে থাকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ। অনেক চড়াই-উতরাই শেষে নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হয়। 

এটি একটি বহুমুখী বৃহদাকার বিনিয়োগ প্রকল্প তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে এর সম্ভাবতা যাচাই করেছে সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রকল্পের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে যা আলোচনার দাবি রাখে। পদ্মা সড়ক সেতুতে যে অর্থ বিনিয়োগ করা হবে তার বিপরীতে মুনাফার হার বছরে দাঁড়াবে ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশে সাধারণত বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার হার ১৫ শতাংশ। পদ্মা সেতুতে এ হার বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে - এটি বহুল ব্যবহৃত একটি অবকাঠামো হবে। যে কারণে এথেকে রাজস্ব আয় ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাড়তে থাকবে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সেতুকে কেন্দ্র করে এপারে এবং ওপারে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়ছে। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,  সেতুকে কেন্দ্র করে দুই পাড়ে ২৯ শতাংশ বাড়বে নির্মাণ কাজ, সাড়ে ৯ শতাংশ কৃষি কাজের প্রবৃদ্ধি,  ৮ শতাংশ বাড়বে উৎপাদন ও পরিবহন খাতের কাজ। এর প্রভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ কোটি লোকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হবে। ফলে পদ্মা নদীর ওপারে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার কমবে ১ শতাংশ। ওই অঞ্চলে দারিদ্র্য কমলে এর প্রভাব পড়বে সারাদেশে তখন জাতীয় ভাবে দারিদ্র্যের হার কমবে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। 

অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ১.৭ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে জিডিপির আকার ৩২ লাখ কোটি টাকা। এ হিসাবে সেতুর কারণে জিডিপিতে বাড়তি জোগান হবে ৫৫ হাজার কোটি টাকা, সারাদেশে বাড়বে ০.৫৬ শতাংশ,  ফলে জাতীয়ভাবে বাড়বে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এভাবে জিডিপির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সেতুর অবদানও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়,  ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের মধ্যে খুলনা বিভাগ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৬ শতাংশ,  ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৩.৫ শতাংশ,  বরিশাল বিভাগে মোট আমানতের পরিমাণ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা যা মোট আমানতের ৪.৫ শতাংশ,  মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা,  যা মোট ঋণের ৩ শতাংশ। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হলে ওপারে বিনিয়াগ বাড়লে ঋণের চাহিদা বাড়বে,  তখন ঋণের প্রবাহও বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ,  কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিক সূচকগুলো বেশি সচল হবে এবং নতুন নতুন খাত যুক্ত হলে মানুষের আয় বাড়বে। তখন সঞ্চয়ও বাড়বে,  যা জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়,  পদ্মা সেতু চালু হলে ২০২২ সালে প্রতিদিন গড়ে যানবাহন চলাচল করবে প্রায় ৩৫ হাজার। এ থেকে রাজম্ব আয় হবে ৮২২ কোটি টাকা। ২০২৫ সালে তা বেড়ে ৩৯ হাজারে দাঁড়াবে। রাজস্ব আয় হবে প্রায় হাজার কোটি টাকা। ২০৩০ সালে তা আরও বেড়ে ৫৮ হাজারে যানবাহন চলবে। রাজস্ব আয় হবে ১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। ২০৩৫ সালে তা আরও বেড়ে ৬৬ হাজার যানবাহন এবং রাজস্ব আয় হবে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। এভাবে ২০৫০ সালে যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে ৭৬ হাজার। রাজস্ব আয় বাড়বে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এক সমীক্ষা অনুযায়ী,  পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর জিডিপি ১.২৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, অপরদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২.৩ শতাংশ।

দেশের বড় তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প হবে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র,  আছে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র। বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়লে এই এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন হবে, পায়রা বন্দর,  পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন,  ফোর লেনের পায়রা সেতু,  শেরে বাংলা নৌ ঘাঁটি ও ইপিজেড স্থাপিত হলে পুরো দক্ষিণাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে। সাগর কন্যা কুয়াকাটায় পর্যটনের প্রসার বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। পদ্মা সেতু পূর্ব-পশ্চিমকে এক সূত্রে গাঁথার ফলে টেলি যোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থায় পদ্মার দুই পাড়ের মধ্যে সুষম বণ্টন হবে। তাতে সব মিলিয়ে দক্ষিণ-পঞ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় সরকারি উদ্যোগে ২৫টি হাইটেক পার্ক ও আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপিত হওয়াসহ ব্যক্তি উদ্যোগে তথ্য আদান-প্রদান,  ডাটা প্রসেসিং ও আউট সোর্সিং, বৃহৎ ডাটা সেন্টার,  সফটওয়্যার তৈরি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা,  কম্পিউটার ও হাইটেক প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন,  ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতির জন্য কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্র গড়ে উঠবে। একদিকে বৈপ্লবিক যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা স্থাপন,  অন্যদিকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ শক্তিতে স্বয়ম্ভরতার ফলে আধুনিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল সমৃদ্ধ হয়ে নবরূপে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে মৃত প্রায় খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর এবং যশোরের শিল্পাঞ্চল। নতুন ভাবে উপকূলীয় জেলায় নারিকেল, পান, সুপারি, পেয়ারা, আমড়া ইত্যাদি সুস্বাদু,  মুখরোচক ফল ও ফসল নির্ভর আধুনিক কৃষি-শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে ধান, চাল,  শাক সবজি চাষাবাদ, উৎপাদন,  সংগ্রহ ও দ্রুত পরিবহন সম্ভব হবে। অন্যদিকে মাছের রাজা ইলিশসহ উপকূলবর্তী অঞ্চলের নানান প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ আহরণ,  ঘের ও পুকুরে চিংড়ি এবং নদী-নালা,  খাল-বিলে নানা প্রকার মিঠা পানির মাছ আধুনিক কৌশল ও পদ্ধতিতে  চাষাবাদ এবং দ্রুত পরিবহন করা যাবে। সম্ভবত এসব কথা মাথায় রেখে এরই মধ্যে সরকারি উদ্যোগে  'বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল'  প্রকল্পের অধীনে ২১টি জেলার মধ্যে বাগেরহাটে ৫টি,  ভোলায় ১টি, কুষ্টিয়ায় ১টি, বরিশালে ২টি, শরীয়তপুরে ২টি,  গোপালগঞ্জে ২টি, খুলনায় ২টি, মাদারীপুরে ১টি,  ফরিদপুরে ১টি সহ মোট ১৭টি 'অর্থনৈতিক অঞ্চল'  প্রতিষ্ঠা করে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান,  উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর এসব এলাকার সার্বিকভাবে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। একই সঙ্গে পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিটি জেলায় অনেক ঐতিহাসিক,  প্রসিদ্ধ ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ওখানেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনসহ গোটা অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্ত জুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত উপকূল। পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে অবাধ ও দ্রুত যাতায়াতের কারণে এসব স্থানে নৈসর্গিক পরিবেশে গড়ে উঠবে আধুনিক সব সুবিধা সংবলিত হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ,  রেস্টুরেন্ট ও আকর্ষণীয় ভ্রমণ কেন্দ্রসমৃদ্ধ পর্যটন শিল্প। পদ্মা সেতুর বহুমাত্রিক উপযোগিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দূরত্ব এবং যাতায়াতের সময় উভয়ই কল্পনাতীত কমে যাবে। রাজধানী ঢাকাসহ পদ্মার গোটা পূর্ব পাড়ের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর স্থানভেদে,  বিশেষ করে রেলপথে ৫০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব কমে যাবে। আর সড়ক ও রেলের উভয় পথে স্থানভেদে যাতায়াতে সময় কম লাগবে ৪০ মিনিট থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা।

এরি মধ্যে পদ্মা সেতুর টোলের হার নির্ধারণ করে সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে ফেরির চেয়ে গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ টোল বেশি ধরা হয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারে ফেরির চেয়ে দেড় গুণ টোল গুনতে হবে। এর ফলে যাতায়াতের সময় বাঁচলেও বেড়ে যাবে খরচ, টোল সাধ্যের মধ্যে আনার দাবি করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। দেশ উন্নয়নের মহাসড়ক বেয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে এক 'উন্নত বাংলাদেশ' হবে আর পদ্মা সেতুই হবে সেই 'উন্নত বাংলাদেশ' বিনির্মাণের কারিগর।

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), ডীন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)