বিশ্বব্যাংক: খাদ্য মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
ড: মিহির কুমার রায়:-
ভুমিকা:
বিশ্বব্যাংক প্রতি ছয় মাসে খাদ্য নিরাপত্তা ও মূল্যস্ফীতি–সম্পর্কিত হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বাংলাদেশ দুই বছর ধরে বিশ্বব্যাংকের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকির ‘লাল শ্রেণি’তে রয়েছে। এই শ্রেণি মানে হচ্ছে, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে, যা বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি লাল শ্রেণিতে রয়েছে ভারত, কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।
বিশ্বব্যাংকের খাদ্য পরিস্থিতি নির্ণয়ের মানদন্ড:
খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোন দেশে কত বেশি—তা বুঝাতে বিভিন্ন দেশকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশকে ‘বেগুনি’ শ্রেণিতে; ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি, তাদের ‘লাল’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘হলুদ’ ও ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘সবুজ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।
বিশ্ব খাদ্য মূল্যস্ফীতি:
প্রতিবেদন বলছে, বছর দুয়েক আগে পাকিস্তান ও অর্থনীতি নিয়ে বিপদে পড়ে। পাকিস্তানেও মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশে পৌঁছায়। মূলত খাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তানও আইএমএফের কাছ থেকে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতি মাইনাস ৪ দশমিক ১ শতাংশ। সর্বশেষ ১০ মাসের মধ্যে পাঁচ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি মাইনাস ছিল। বিশ্বব্যাংকের সবুজ তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান। আর কয়েক বছর ধরে অর্থনীতি নিয়ে ভারতও চাপে পড়ে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি না থাকলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ে চাপে ছিল দেশটি। কিন্তু দেশটির মূল্যস্ফীতি কয়েক মাস ধরে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, গত জানুয়ারি মাসে ভারতের খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। যদিও ভারত এখনো বিশ্বব্যাংকের ‘লাল’ তালিকায় রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ৬ শতাংশের কম। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি এখন ‘মাইনাস’ (নেতিবাচক), অর্থাৎ খাদ্যপণ্যের দাম কমছে। শ্রীলঙ্কায়ও একই চিত্র। নেপাল ও মালদ্বীপে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কম। সার্কভুক্ত দেশ আফগানিস্তানেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন মাইনাস। জানা গেছে, ২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। অনেক দেশ নিজেদের অর্থনীতি নিয়ে বিপদে পড়তে শুরু করে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি ছিল। বেশি বিপাকে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। তারা এখন মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে পেরেছে। ভারতও চাপ সামলে নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ আফগানিস্তানের খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক বছর ধরে মাইনাস রয়েছে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে আফগানিস্তানের মূল্যস্ফীতি ছিল মাইনাস ৩ শতাংশ। দেশটিতে ব্যাপক হারে খাদ্যের দাম কমেছে। বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, নেপালে গত এক বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে ছিল। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে নেপালে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। মালদ্বীপে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। ভুটানের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হিসাব দেয়নি বিশ্বব্যাংক। উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের তালিকায় টানা এক বছর ধরে সবচেয়ে খারাপ শ্রেণি বেগুনিতে রয়েছে ছয়টি দেশ। এই দেশগুলো হলো মালাবি, দক্ষিণ সুদান, হাইতি, মিয়ানমার, আর্জেন্টিনা ও তুরস্ক। খাবারের দাম নিয়ে সবচেয়ে ভালো আছে আটটি দেশ। সবুজ শ্রেণিভুক্ত দেশগুলো হলো সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সৌদি আরব, ম্যাকাও, চীন, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড ও বেনিন। তালিকায় থাকা অন্য দেশগুলো গত এক বছরে কখনো লাল, কখনো বেগুনি, কখনো-বা হলুদ বা সবুজ তালিকায় ছিল। কেউ নিজেদের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির উন্নতি করেছে, কারও অবনতি হয়েছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি:
বাংলাদেশের আরো অবনতি হয়েছে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির। গত অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতি আবারো দুই অংক ছাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই মূল্যস্ফীতির সর্বোচ্চ হার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর শেষে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে, যা এর আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত মাসে দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে। আর সেপ্টেম্বরে এ হার খাদ্যপণ্যে ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সময় শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির তীব্রতা বেড়েছে। অক্টোবরে শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে তা ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর প্রচলিত পথেই হাঁটছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি নীতি সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা কম। এ কারণে বাংলাদেশে উন্নত বিশ্বের মতো কেবল সুদহার বাড়ানোর পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধের পাশাপাশি কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা না নিয়ে পণ্য মূল্য নির্ধারণের মতো পদক্ষেপ মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সেভাবে কার্যকরী হয় না। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, মার্চ শেষে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক সর্বশেষ ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা-বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে। এর আগের টানা এক বছর বাংলাদেশ লাল তালিকায় ছিল। প্রতি ছয় মাস পর এই চিত্র প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি। সেই অনুসারে, প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ লাল তালিকায় অর্থাৎ অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।
কি করনীয়:
১. শ্রীলঙ্কা উদাহরন: ২০২২ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এরপর ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২৯০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশটি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সেই অবস্থা থেকে এখন উত্তরণ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে মাইনাস দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, শ্রীলঙ্কা এখন সবুজ তালিকায়। এক বছর ধরে শ্রীলঙ্কার খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি হয়নি। মূল্যস্ফীতি কমাতে জ্বালানি তেলসহ সরকারি পরিষেবার বিলের খরচ কমিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বৃদ্ধি, মুদ্রার বিনিময় হারকে নমনীয় করা এবং কঠোর আর্থিক ও মুদ্রানীতির মতো পদক্ষেপ নেয়ায় এর সুফল মিললেও তাতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছে।
২. বাজার ব্যবস্থাপনা: সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা কম। যদি বাজার ব্যবস্থাপনায় তাদের ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণও থাকে, সেটা মোকাবেলায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। অ্যাডহক ভিত্তিতে হয়তো পণ্যমূল্যের দাম বেঁধে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এটি ভুল চিন্তা। বরং সিন্ডিকেট কমিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোয় জোর দিতে হবে। যথাযথ বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে বলে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারকে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। বন্যার কারণে বেশ কিছু জেলায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগী ও চাঁদাবাজদের এখনো বিতাড়িত করা সম্ভব হয়নি। কৃত্রিম সরবরাহ সংকটের চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা, সেটি দেখতে বাজার ব্যবস্থাপনাকে আরো জোরদার করতে হবে।
৩. প্রতিযোগিতা কমিশন: এটি অবশ্যই কার্যকর করতে হবে। সরবরাহ সংকট পূরণে সরকারের এখনই আমদানি বাড়ানো প্রয়োজন। আমদানি পণ্যের ট্যারিফ কমানো উচিত এবং এর সুফল যাতে ভোক্তারা পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আরো বেশি আমদানিকারককে পণ্য আমদানির সুযোগ দিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে বাজার কিছু ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি হয়ে না পড়ে। এছাড়া পণ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলারের জোগানও নিশ্চিত করতে হবে।’
৪. নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতকরন: এটি করতে সরকার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এলসি মার্জিন ছাড়াই নিত্যপণ্য আমদানির সুযোগ দেয়া এবং খাদ্য, নিত্যপণ্য ও সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সময় সাময়িকভাবে একক গ্রাহক ঋণসীমায় ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার নজরদারি বজায় রাখা হলেও এক্ষেত্রে বেশি কঠোর অবস্থানে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে, যেটা আমরা ডিমের বাজারে দেখেছি। তাই সরকার বাজারে পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। নীতি সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যাংক খাতের তারল্য প্রবাহে লাগাম টানা হয়েছে এবং এতে করে মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে এক্ষেত্রে এর সুফল পেতে হলে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে।’
৫. বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার:
এ ব্যাপারে সরকার জেলায় জেলায় ১০ সদস্যের বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে অভিযান। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযানে যুক্ত হচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। নজরদারির পাশাপাশি কৃষি পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো বাজারে সবজি বিক্রির উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এমনকি নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাসে পেঁয়াজ, চাল, তেল, চিনি, আলু ও ডিমের মতো পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে এসব উদ্যোগের সুফল মেলেনি। শুল্ক ছাড় দেয়া হলেও চাল-পেঁয়াজের দাম কমছে না। তাহলে এসব অর্থ কি ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাচ্ছে? সরকার পরিবর্তন হলেও সুবিধাভোগীরা আগের মতোই বহাল রয়েছে। অস্থিরতা তৈরির জন্য একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আস্থার পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। বাজার তদারকির পদক্ষেপগুলোও দায়সারাভাবে করা হচ্ছে।’
উপসংহার:
আর্থিক ও রাজস্ব নীতিতে কৃচ্ছ্রসাধন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি মোকাবেলায় আমদানি উদারীকরণের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি কমাতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে কেবল আমদানি শিথিল করলেই হবে না, এর সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমানোও প্রয়োজন। এছাড়া চাঁদাবাজি বন্ধ করার মাধ্যমে উৎপাদনকারী পর্যায় থেকে বাজার পর্যন্ত পণ্যের অবাধ সরবরাহের বাধা দূর করতে হবে, যা পণ্যের দাম কমাতে সহায়ক হতে পারে।
লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//