বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও আমাদের চাওয়া-পাওয়া

শেয়ারবাজার নিন্মমুখী হওয়ার কারনসমূহ

মো: শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার: সাধারন বিনিয়োগকারীদের মতে শেয়ার কিনলেই দাম কমে যায়, আসলে কি তাই?

আজকের আলোচনায় এ ব্যাপারে সাধারন বিনিয়োগকারীগনকে সহযোগীতার জন্যই এই বিনিয়োগ শিক্ষামূলক লেখনী।

মূল ঘটনা হলো- যারা সঠিক দামে শেয়ার কিনতে পারেন না তাদেরই কেনার পর দাম কমে যায়। আসলে কিছু গতানুগতিক কারণে শেয়ারবাজার নিন্মমুখী হয়।

আজকে কিছু বিষয় তুলে ধরব যদি সাধারন বিনিয়োগকারীগন মনে রাখেন ও মেনে চলেন তাহলে সফলতার সাথে এগিয়ে যাবেন বলে আশা করি।

১. লভ্যাংশ বিতরণ: যখন কোনো কোম্পানী তার বাৎসরিক লভ্যাংশ প্রদান করে এবং রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করে, উক্ত রেকর্ড ডেট এর পরে শেয়ার মূল্য কমতির দিকে থাকে। কারণ লভ্যাংশ গ্রহনের পর ক্রেতার আগ্রহ কমতে থাকে। অথবা শেয়ার ডিভিডেন্ড পাওয়ার পর বাজার মূলধন বেড়ে যায় ই পি এস কমার সম্ভাবনা থাকে। তাই শেয়ার মার্কেটে শেয়ার দর হারাতে থাকে।

২. বাজার চাহিদা: কোম্পানীর উৎপাদিত পণ্য বা সেবার বাজার চাহিদা নিন্মমুখী হলে অর্থাৎ চাহিদা কমতে থাকলে শেয়ারের বাজার মূল্য নিন্মমুখী হতে থাকে। কারন এতে করে কোম্পানীর লভ্যাংশ কমে যেতে থাকে এবং বিনিয়োগকারীগনও স্বল্প পরিমানে লভ্যাংশের ভাগীদার হবেন।

৩. আন্তর্জাতিক বাজার: ব্যবসা বানিজ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো রকম নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে কোম্পানীর উৎপাদিত পন্যের চাহিদা কমলে উক্ত কোম্পানীর শেয়ারের বাজার মূল্য নিন্মমুখী হতে থাকবে। 

৪. কাঁচামালের অনিশ্চয়তা: কোম্পানীর উৎপাদন প্রক্রিয়ার মূল উপাদান কাঁচামালের সহজলভ্যতার উপর কোম্পানীর মূল্যমান অনেকটা নির্ভরশীল। কারন কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন ব্যহত হলে বিক্রি কমে এতে কোম্পানীর লাভ কমে যায় ফলে শেয়ারের দামের উপর নেতীবাচক প্রভাব পড়তে থাকে অর্থাৎ শেয়ারের দাম কমতে থাকে।

৫. কোম্পানী সম্পর্কে নেতিবাচক খবর: কোম্পানীর পণ্য এবং ব্যবস্থাপনা পরিষদ সম্পর্কে একটি নেতীবাচক খবর শেয়ার দরের ব্যাপক পতন ঘটাতে পারে, তাই সাধারন বিনিয়োগকারীগনকে এ ব্যাপারে কোম্পানীর প্রয়োজনীয় সব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সচেতন থাকতে হবে।

৬. আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা: উৎপাদন ব্যবস্থা আধুনিকায়ন না করলে কোম্পানীর ভাল লাভ করা সম্ভব হয়না। বর্তমান বাজারে উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিক মেশিন আবিস্কার হয়েছে যা পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আধুনিকায়ন করেছে এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করেছে। পণ্যের গুনগত মান বৃদ্ধি করে কোম্পানী যদি আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি অনুসরন করতে না পারে, তাহলে শেয়ার বাজারে উক্ত কোম্পানীর শেয়ার দর নিন্মমুখী হবে।

৭. কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদ: অযোগ্য ও অদক্ষ্য কোন ব্যক্তিকে যদি পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে শেয়ার বাজারে নেতীবাচক ধারনা তৈরি হবে এবং কোম্পানীর প্রতি শেয়ার হোল্ডারগণ তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলবেন যার ফলশ্রুতিতে বাজার নিন্মমুখী।

৮. চুক্তি বাতিল: কোন প্রকার বানিজ্যিক চুক্তি বাতিল হলে কোম্পানীর মার্কেট ভ্যালুতে এফেক্ট করে। ফলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ার দর কমে যায়। সুতরাং কোম্পানীর প্রতিটি চুক্তি ও চুক্তির মেয়াদ, কার্য সম্পাদন সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। তা না হলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

৯. নতুন বাজার ধরতে না পারা: কোম্পানীর বানিজ্য শাখার লোকজন যদি প্রতিনিয়ত নতুন বাজার সৃষ্টি বা কাষ্টমার তৈরি করতে না পারে তাহলে ব্যবসা খারাপ হবে দাম কমবে।

১০. প্রাকৃতিক দুর্যোগ: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোন দৈব দুর্যোগ আমাদের বাজারকে বড় ধরনের প্রভাবিত করে। অর্থাৎ বন্যা, খরা, মহামারীর কারনে বাজারে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করা যায়। কারন দৈব দুর্যোগে ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা বা উৎপাদন সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে শেয়ার বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

১১. যুদ্ধ বিগ্রহ: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিগ্রহ বাজার চাহিদাকে প্রভাবিত করে, আবার কাঁচামালের যোগানের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এর ফলে কোম্পানীর উৎপাদন ও বিক্রয় ব্যবস্থা ব্যহত হয়। কোম্পানী ক্ষতির সম্মুখীন হয় তাই শেয়ার মূল্যে সরাসরি নেতিবাচক এফেক্ট করে। 

১২. শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা: বাজারে যদি নতুন করে বড় কোন বিনিয়োগকারী আসে এবং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে, যা মোকাবেলা করা বর্তমানে কোম্পানীর সক্ষমতা নাই তাহলে তা কোম্পানীর অর্থনৈতিক কাঠামোতে আঘাত হানবেই।

১৩. বৈদেশিক বিনিয়োগ হারানো: কোন কোম্পানীর বৈদেশিক বিনিয়োগকারীগন যদি তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ প্রত্যাহার করে তাহলে শেয়ার বাজারে নিন্মমুখী হওয়ার প্রবনতা লক্ষ্য করা যাবে।

১৪. উদ্যোক্তাদের শেয়ার হ্রাস: কোম্পানীর উদ্যোক্তাগন যদি তাদের ধারনকৃত অংশের শেয়ার বাজারে ছেড়ে দিয়ে নগদায়ন করে তাহলে বাজারে নিন্মমুখী প্রবনতা লক্ষ্য করা যাবে।

১৫. অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে কোম্পানীর শেয়ারের বাজার দর পড়ে যায় অর্থাৎ নিন্মমুখী প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়।

১৬. নীতিমালার প্রভাব: আমাদের দেশে সরকারি অথবা ব্যাংক বীমা কোম্পানীর বিভিন্ন ব্যবসায়িক নীতিগত পরিবর্তনের ফলে কোম্পানীর উৎপাদন পর্যায়ের পরিবর্তন হয়। আবার সরকারের কর কাঠামো বা ব্যাংকের সুদ কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে নিন্মমুখী ধারা পরিলক্ষিত হয়।

সর্বশেষে আমরা বলতে পারি, এই অর্থবাজার একটি অতি সংবেদশীল বাজার, এখানে উপরোক্ত যে কোনো ধরনের পরিবর্তন মার্কেটকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই আমাদেরকে বিনিয়োগ মুহুর্তে উপরের বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে, নিজের পুঁজিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। ওয়ারেন বাফেট এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি “সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, তুমি কি করছ সেটা না জানা”।

লেখক: কলামিস্ট ও শেয়ারবাজার বিশ্রেষক, হেড অব অপারেশন ও সহকারী অধ্যাপক, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্রগ্রাম।

বিনিয়োগবার্তা/এসএনএম/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)