বরিশাল ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন

বরিশাল ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনে ভোটগ্রহণ শুরু

সারাদেশ ডেস্ক: শিল্প নগরী খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ  শুরু। সোমবার সকাল ৮টায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তা চলবে। নির্বাচন উপলক্ষে দুই সিটিতে আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনা সিটির ২৮৯টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৭৩২টি বুথে ভোটগ্রহণে প্রায় ৩ হাজার ইভিএম ব্যবহার হবে। আর বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৩০টি ওয়ার্ডে ৮৯৪টি কক্ষে ভোটগ্রহণের জন্য দেড় হাজার ইভিএম বরিশালে পৌঁছে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ভোটগ্রহণের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন ভোটগ্রহণ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন

খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) মোট ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ৭৩২টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে। এসব কেন্দ্রের ৫৬ শতাংশই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে ৫টি ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।

কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন, ৩১টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৪জন এবং ১০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ৩৯জনসহ মোট ১৭৩জন প্রার্থী কেসিসি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা), জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) এবং স্বতন্ত্র পার্থী শফিকুল রহমান (টেবিল ঘড়ি)।

কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. আলাউদ্দিন এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মাসুদুর রহমান ভুইয়া রোববার নগরীর বয়রা পুলিশ লাইন মাঠে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী প্রস্তুতির সার্বিক দিক তুলে ধরেন। তারা জানান, কেসিসি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকা।

কেএমপি কমিশনার জানান, ৪ হাজার ৫২০ পুলিশ সদস্য, ৩শ’ এপিবিএন, ৩ হাজার ৪৬৮ জন আনসারসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর মোট ৮ হাজার ৩শ’ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮টি রিজার্ভ ফোর্স এবং ৫টি স্ট্যান্ডবাই ফোর্সসহ ১৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম, ৬২টি মোবাইল পেট্রল টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও অন্তত ১১ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নগর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়েছে আরও ৫ প্লাটুন।

রিটার্নিং অফিসার জানান, কেসিসি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য ব্যাপক প্রস্ততি নেয়া হয়েছে। নির্বাচনী বুথের ভেতরে ও বাইরে মোট ২ হাজার ৩২০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ভোটার ছাড়া অন্য কাউকে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে ইসি কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে সরকারি জেলা স্কুল মাঠে রোববার এক ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৬ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল ফিরোজ কবীর বলেন, ‘কেসিসি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে র‌্যাবের ১৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে কোনো বিস্ফোরক লুকানো আছে কিনা তা খুঁজে দেখছে।’

কেসিসি নির্বাচনে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৮ জন পুরুষ ও ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৮ জন নারী ভোটার আজ ভোধিকার প্রয়োগ করবেন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন

বরিশাল সিটি করপোরেশনে (বিসিসি) ৭জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ১১৮ জন সাধারণ ও ৪২ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটে লড়ছেন। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন নারী।

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, জাতীয় পার্টির প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান, স্বতন্ত্র হিসেবে সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপন প্রমুখ।

নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে সব কেন্দ্র ও বুথে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহিন শরীফ বলেন, ‌‘এই নির্বাচনে ৮৯৪টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ভোটকক্ষে ১টি ও প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশ পথে ২টি করে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

বিসিসি নির্বাচনের ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টিই গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, পুলিশের হিসাবে ৭০টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রার্থীরা যেসব কেন্দ্র নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেগুলো যুক্ত করে মোট ১০৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার জানান, নির্বাচনের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‍্যাব, এবিপিএন ও আনসার মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৪শ’ সদস্য মোতায়েন থাকবে।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বরিশাল সিটি নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে যে কোনো অপতৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা হবে। র‌্যাব-৮ এর পক্ষ থেকে এমন হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকেই র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বরিশাল নগরীতে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচন চলাকালে নগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে মোট ১৬টি টিম তৎপর থাকবে।

বিনিয়োগবার্তা/টিআর/কেএইচকে//
 


Comment As:

Comment (0)