বিশ্বজুড়ে কমেছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে শেয়ার ক্রয়

বিশ্বজুড়ে কমেছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে শেয়ার ক্রয়

ডেস্ক রিপোর্ট: ইউক্রেন-রাশিয়া ও ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের পর বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব-সংঘাত। রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি চীন-রাশিয়ার বাণিজ্য নিয়ে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা। এসবের প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর শেয়ারবাজারের ওপর। বিশেষ করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে শেয়ার ক্রয় (পাবলিক ইকুইটি) বিশ্বজুড়ে কমেছে। খবর: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।

স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পাবলিকলি ট্রেড করা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে পাবলিক ইকুইটি বিনিয়োগ হয়। এ বিনিয়োগগুলো সাধারণত তরলীকৃত হয়, অর্থাৎ খোলাবাজারে শেয়ার কেনা-বিক্রি করা যায়। অর্থনৈতিক মন্দায় বাজারে আস্থা ফেরাতে সম্প্রতি অনেক কোম্পানি শেয়ার পুনঃক্রয়ের (বাই ব্যাক) আশ্রয় নিয়েছে। এ পদক্ষেপেরও প্রভাব পড়েছে পাবলিক ইকুইটির বাজারে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগানের বিশ্লেষকদের পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাংকগুলোর নিজস্ব প্রত্যাশাজনিত বিভ্রান্তি ও নির্বাহীদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী আস্থার অভাবে চলমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান স্টক মার্কেট ও তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অর্থনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে তত্ত্বগতভাবে কোম্পানিগুলোকে নতুন শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ সংগ্রহ করা উচিত ছিল। এর বদলে তারা বাই ব্যাকের মাধ্যমে শেয়ার কেনার জন্য নগদ অর্থ খরচ করছে।

বৈশ্বিকভাবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১২ হাজার কোটি ডলার নিট পাবলিক ইকুইটি সংকুচিত হয়েছে। অথচ ২০২৩ সালে সারা বছর মিলিয়ে ৪ হাজার কোটি ডলার সংকুচিত হয়েছিল। এ নিয়ে টানা তৃতীয় বছর বিনিয়োগের এ খাতে পতন দেখা যাচ্ছে। ১৯৯৯ সাল থেকে এ বিষয়ে ব্যাংক ডাটা রাখা শুরু হয়, এরপর থেকে এমন পতন দেখা যায়নি।

এদিকে বাই ব্যাক প্রক্রিয়া তিন বছর ধরে মোটামুটি একই গতিতে চলছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে বাই ব্যাকের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। এছাড়া প্রাইমারি পাবলিক অফার (আইপিও) ও অন্যান্য শেয়ার বিক্রি কমার পূর্বাভাসও পাওয়া গেছে।

জেপি মরগানের বিশ্লেষক নিকোলাওস পানিগির্টজোগ্লো বলেন, ‘‌সারা বিশ্বের কোম্পানিগুলোর মধ্যে দুটি বিভ্রান্তিকর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা তাদের “‍অস্থির অনিশ্চয়তা’’র মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কোম্পানি নির্বাহীরা ভেবেছিলেন, চলতি বছর ইকুইটির বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কারণ পূর্বাভাস ছিল যে ইকুইটি বাজারের মন্দা এড়াতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। কিন্তু মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিজনিত দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের কারণে এমনটা ঘটেনি।’

গত নভেম্বরের জেপি মরগানের পূর্বাভাস ছিল, ২০২৪ সালে ইকুইটি মার্কেটে সরবরাহ ৩৬ হাজার কোটি ডলার বাড়বে। কারণ এরই মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বাই ব্যাকের গতি কমিয়েছে। একই সময়ে নতুন কোম্পানিগুলো পাবলিক অফার নিয়ে এগিয়েছে।

দর ও বিনিময় হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য সাপেক্ষে এমএসসিএ অল কান্ট্রি ওয়ার্ল্ড ইনডেক্স কোম্পানিগুলোর ইস্যু করা শেয়ার বিশ্লেষণ করে দেখেছে। এ সূচকে ১৯৯৯ সালের পর থেকে সবচেয়ে নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে ইকুইটি সরবরাহ। এমএসসির সূচকে বছরের শুরুতে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ যোগ করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্রেডিট রেটিং সংস্থা এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর সূচক ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

সূচকের তথ্য দেয়া প্রতিষ্ঠান উইলশায়ার জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কমছে। ২০০০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা সাত হাজার থেকে চার হাজারে কমে গেছে। একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে।

এছাড়া বিনিয়োগের বাজারে পাবলিক ইকুইটির চেয়ে প্রাইভেট ইকুইটির দিকে ঝোঁকার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগ প্রত্যাশী ছোট সংস্থাগুলো পাবলিক ইকুইটির সঙ্গে যুক্ত আর্থিক ও নিয়ন্ত্রক বাধা নিয়ে এখন সতর্ক। তাই বেসরকারি বাজার বা ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের দিকে ঝুঁকছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)