যে কারণে ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্পর্কে জানান দেওয়া ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে দেশকে ব্র্যান্ডিং ও বিনিয়োগ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সুইজারল্যান্ড, জাপান, কাতার, সাউথ আফ্রিকা, মরিশাস, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়ামসহ বিশ্বের প্রায় ১৫টি উন্নত ও বড় শহরে এ ধরনের সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট দেশের হাইকমিশন ও ব্যবসায়িদের সংগঠনগুলো সার্বিক সহযোগিতা করেছে।
এসব আয়োজনের মাধ্যমে বিগত সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেসব অর্জন, সে সম্পর্কে বিদেশি ও প্রবাসীদেরকে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে-সে সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দেওয়া হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিপুল আগ্রহ দেখা গেছে। এসময় সম্মেলন ছাড়াও ব্যক্তি ও সংগঠন বা সংস্থা পর্যায়ে অনেক পার্শ্ব বৈঠক হয়েছে।
বিশ্বের বড় গণমাধ্যগুলো যেমন- বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, নিউজউইক, গালফ নিউজ, টাইমসসহ অন্যান্য মিডিয়াগুলো এসব খবর ফলাও প্রচার করেছে। এসব আয়োজনের ফলে এতদিন তারা যে বাংলাদেশকে জানতো বা চিনতো, সেখান থেকে তারা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৩৯টি হাইটেক পার্ক গঠন করা হয়েছে, যেখানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কগুলো নানাভাবে বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। এগুলোর মাধ্যমে যেমনিভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, সেই সঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থান। পাশাপাশি, রপ্তানি আয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
এদিকে দেশের পুঁজিবাজারেও বিদেশিদের বিনিয়োগ অত্যন্ত নগন্য। বিদেশিদের বিনিয়োগযোগ্য ফান্ডের তুলনায় এ বাজারের আকার এখনো অনেক ছোট। ভালো ভালো কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান, কিংবা প্রকল্প এখানে তালিকাভূক্ত করে বড় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। একইসঙ্গে সহজ এক্সিট ব্যবস্থাসহ তাদেরকে পুঁজির নিরাপত্তাও দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজার এগুতে পারছে না।
দেশে ব্যাংক একাউন্ট ও বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) একাউন্ট অনলাইন হয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগের সুযোগ এখন খুব সহজ হয়ে গেছে। এছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন কিংবা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনলাইন ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) এর আওতায় এক ছাদের নীচে অনেক ধরনের সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। ফলে খুব সহজেই এখন যে কেউ শিল্প-বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি, ২০০৯-১০ হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর অর্থাৎ বিগত ১৩ বছরে ১৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানীয় বিনিয়োগ এবং ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন করা হয়েছে। এ সকল বিনিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
কয়েকমাস আগে ‘সেকেন্ড পারসপেকটিভ প্ল্যান ২০২১-২০৪১’ ঘোষণা করেছে সরকার। এতে ভবিষ্যৎ ৩০ বছরে দেশের অর্থনীতির আকার কেমন হবে-তার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩১ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৪১ সালে জিডিপির বৃদ্ধির হার হবে ৯.৯০ শতাংশ।
যদি এখন থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমরা আকৃষ্ট করতে না পারি তাহলেই কোনোভাবেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়।
আগামী দিনে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য দেশের অভ্যন্তরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি দেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাও জরুরি।
পাশাপাশি, বাণিজ্য-বিনিয়োগে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আরও কী কী সমস্যা রয়েছে- তা পর্যালোচনা করে দ্রুত সমাধানের পথ আবিষ্কার করাটাও জরুরি।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//