বাংলাদেশ ব্যাংক 89

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন

৪৫ বছর বয়সের আগে ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: এখন থেকে যেকোনো ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ন্যূনতম ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ৪৫ বছর বয়সের আগে কেউ ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। সর্বোচ্চ ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত এ পদের দায়িত্ব পালন করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগ থেকে বুধবার জারি করা স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগসংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে এসব শর্তের কথা তুলে ধরা হয়েছে। 

প্রজ্ঞাপনে স্বতন্ত্র পরিচালকের দায়িত্ব, কর্তব্য ও সম্মানীর বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, স্বতন্ত্র পরিচালককে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, ফাইন্যান্স, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন, হিসাববিজ্ঞান বা কস্ট অ্যাকাউন্টিং বিষয়ের ওপর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। নতুন প্রবর্তিত ডিজিটাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বা ব্যবসায় প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক, আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি, হিসাব পেশায় নিয়োজিত হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে প্রফেশনাল ডিগ্রিধারী ব্যক্তি, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থ বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা যাবে। তবে কোনো ব্যাংক বা ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কোনো প্রকৃত বা দৃশ্যমান স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জড়িত কেউ ওই ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না।

কোনো ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগের জন্য মনোনীত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা ওই ব্যাংকের কোনো শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না বলেও শর্তারোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনীত কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যাংক, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩-এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি বা এ ধরনের কোম্পানিগুলোর কোনো সাবসিডিয়ারির পক্ষে পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না। ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত, জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কেউই এ পদে নিযুক্ত হতে পারবেন না। এছাড়া ঋণখেলাপি, করখেলাপি, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তিরাও স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিযুক্তির অযোগ্য হবেন।

স্বতন্ত্র পরিচালকদের আর্থিক সুবিধার বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বতন্ত্র পরিচালকরা প্রতি মাসে স্থায়ী সম্মানী বাবদ ৫০ হাজার টাকা প্রাপ্য হবেন। ব্যাংকের পর্ষদ বা সহায়ক কমিটির প্রতিটি সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানী পাবেন সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। তবে কোনো মাসে ব্যাংকের পর্ষদ ও অন্যান্য সহায়ক কমিটির যত সংখ্যক সভাই অনুষ্ঠিত হোক না কেন, প্রতি মাসে সর্বোচ্চ পরিচালনা পর্ষদের দুটি সভা, নির্বাহী কমিটির চারটি সভা, অডিট কমিটির একটি সভা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভায় উপস্থিতির জন্য তিনি এ সম্মানী পাবেন। 

স্বতন্ত্র পরিচালকের দায়িত্ব, কর্তব্য ও জবাবদিহিতার বিষয়টিও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যাংক পরিচালনায় ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও বিধি-বিধানের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করবেন। পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ বা অন্য কোনো আইন/বিধি লঙ্ঘনবিষয়ক যেকোনো তথ্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথভাবে অবহিত করবেন। তিনি পর্ষদ সভায় অংশ নেবেন এবং পর্ষদ সভায় উত্থাপিত এজেন্ডাগুলোর বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত দেবেন। স্বতন্ত্র পরিচালক কোনো স্মারক উত্থাপন করলে পরিচালনা পর্ষদকে তা গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে। পর্ষদ বা পর্ষদের বিভিন্ন সহায়ক কমিটিতে স্বতন্ত্র পরিচালকের মতামতকে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া হলে অথবা ব্যাংক পরিচালনায় যেকোনো ধরনের অসংগতি দেখা গেলে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনসহ ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত কোনো পরিদর্শনে স্বতন্ত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে বা দায়িত্বে অবহেলাজনিত বিরূপ পর্যবেক্ষণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্য থেকে ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান বা সভাপতি নির্বাচন করতে হবে। অডিট কমিটির চেয়ারম্যান বা সভাপতির মেয়াদ হবে তিন বছর। কোনো স্বতন্ত্র পরিচালক পরপর দুই মেয়াদে অডিট কমিটির চেয়ারম্যান বা সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি পরিচালনা পর্ষদে আমানতকারী ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের (পরিচালক ব্যতীত) স্বার্থ সংরক্ষণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।

প্রজ্ঞাপনে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংজ্ঞাও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ‘স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন তিনি, যিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও শেয়ারধারক থেকে স্বাধীন। যিনি কেবল ব্যাংকের স্বার্থে স্বীয় মতামত প্রদান করবেন এবং ব্যাংকের সঙ্গে কিংবা ব্যাংকসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যার অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কোনো প্রকৃত স্বার্থ কিংবা দৃশ্যমান স্বার্থের বিষয় জড়িত নেই।’ 

কোনো ব্যাংকের পরিচালক সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০ জন হলে সেখানে সর্বনিম্ন তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকবেন। আর পরিচালকের সংখ্যা ২০ জনের কম হলে স্বতন্ত্র পরিচালক হবেন সর্বনিম্ন দুজন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের অনুমোদন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য এ পদে ব্যাংক প্রস্তাবিত ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও উপযুক্ততা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনটি জারির আগে যেসব ব্যক্তি স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, নিয়োগের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে যেসব বিদেশী ব্যাংক বাংলাদেশে শাখা স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করছে বা করবে সেগুলোর ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//

 

 


Comment As:

Comment (0)