সাংবাদিক সম্মেলনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী
জাতীয় পাট দিবসে পুরস্কার পাচ্ছে ১১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিবেদক: পাটশিল্পকে লাভজনক করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে, পরিবেশবান্ধব বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এ সুযোগ নেয়ার জন্য পাটজাত পণ্যে বৈচিত্র্য আনা হবে এবং পাটশিল্পকে লাভজনক করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। পাটশিল্পে বেসরকারি খাতের উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে। অঙ্গীকার পূরণ করতে পাটজাত পণ্যকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় নানামুখী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দুপুরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জাতীয় পাট দিবস ২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী।
পাটমন্ত্রী বলেন, পাট খাতের সমৃদ্ধির ধারা চলমান রাখতে ও এ খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এ বছর পাট দিবসে ১১ টি ক্যাটাগরিতে ১১ জন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। এছাড়াও পাটসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় অন্যান্য বছরের মতো এবারো ৬ মার্চ ‘জাতীয় পাট দিবস ২০২৪’ উদযাপন করতে যাচ্ছে। এবারের জাতীয় পাট দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ, স্মার্ট পাটশিল্পের বাংলাদেশ’।
আগামী ১৪ মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) পাট দিবসের মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ দিন ইজারার জন্য নির্ধারিত বিজেএমসির ৬টি মিলের বাণিজ্যিক উৎপাদন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এছাড়াও ১৪-১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও মেলা আয়োজন করা হয়েছে।
বিজেএমসির বন্ধ মিল চালুর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ইজারার জন্য নির্ধারিত বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ২০টি মিল হতে এরই মধ্যে ১৪টি মিলের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, ২টি মিলের চুক্তি সম্পাদনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং অবশিষ্ট ৪টি মিলের ইজারা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইজারাকৃত ১৪টি মিলের মধ্যে ৬টি মিল উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী ১৪ মার্চ তারিখে প্রধানমন্ত্রী ৬টি মিলের বাণিজ্যিক উৎপাদন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
বহুমুখী পাটপণ্যের প্রসারে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) মাধ্যমে পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্ভাবন ও ব্যবহার সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ করেছে। জেডিপিসির নিবন্ধিত উদ্যোক্তারা ২৮২ রকম দৃষ্টিনন্দন পাটপণ্য উৎপাদন করছেন, যার অধিকাংশই বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। বহুমুখী পাটজাত পণ্যকে জনপ্রিয় করতে প্রচার প্রচারণাসহ বিদেশে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এসব মেলা পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ব্যবহারকারী এবং বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে অধিক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
পাট বীজ সম্পর্কে সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করে পাটবীজ উৎপাদন পাটচাষিদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটি দেশের ৪৫টি জেলার ২৮৮টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাট খাত উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম, পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন, প্রচলিত ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ বছর পাট দিবসে ১. পাটবীজ, পাট ও পাটজাত পণ্যের গবেষণায় সেরা গবেষক/বিজ্ঞানী/উদ্ভাবক ২. সেরা পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষি; ৩. সেরা পাট উৎপাদনকারী চাষি ৪. পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল; ৫. পাটজাত পণ্য রফতানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান ৬. পাটের সুতা উৎপাদনকারী সেরা পাটকল ৭. পাটের সুতা রফতানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান ৮. বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল; ৯. বহুমুখী পাটপণ্য রফতানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান; ১০. বহুমুখী পাটপণ্যের সেরা মহিলা উদ্যোক্তা ১১. বহুমুখী পাটজাতপণ্য উৎপাদনকারী সেরা পুরুষ উদ্যোক্তা মোট ১১ টি ক্যাটাগরিতে ১১ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও পাট সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তসলিমা কানিজ নাহিদা, সুব্রত শিকদার (অতিরিক্ত সচিব) বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।