জবি

অবন্তিকার আত্মহত্যা

ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরোজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার বিকেলে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ছয় দফা দাবি ঘোষণা করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে তারা উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করবেন।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে আত্মহত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা, অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনা, দ্রুত সিন্ডিকেট ডেকে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার, ভিকটিমের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করা।

এ বিষয়ে আন্দোলনকারী নাট্যকলার শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা বলেন, ‘‌আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেসবের বিচার হয়নি। এ ক্যাম্পাসে এমন বিচারহীনতার সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের। আমরা যখনই কোনো অভিযোগ নিয়ে যাই, এগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। আমরা চাই, অবন্তিকার এ ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হোক। আর কোনো শিক্ষার্থীর যেন এমন ঘটনার শিকার হতে না হয়।’

এর আগে শুক্রবার কুমিল্লার বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস পুকুরপাড়ের নিজ ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ফাইরোজ অবন্তিকাকে উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ফাইরোজ সাদাফ অবন্তিকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রয়াত জামাল উদ্দিনের মেয়ে। মৃত্যুর আগে অবন্তিকা একটি ফেসবুক পোস্টে তার মৃত্যুর জন্য সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেছেন। অবন্তিকা ওই পোস্টে জানিয়েছেন, সহপাঠী আম্মান তাকে ক্রমাগত হুমকি দিত। তিনি এ বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করলে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম তাকে আম্মান সিদ্দিকীর হয়ে ভয়-ভীতি দেখান এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। এছাড়া তাকে নিয়ে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এসব ঘটনায় তিনি আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

অবন্তিকা ওই পোস্টে আরো দাবি করেছেন, তিনি বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি তার আত্মহত্যাকে ‘‌টেকনিক্যালি মার্ডার’ বলেও উল্লেখ করেন।

অবন্তিকার আত্মহত্যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে রাতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। এদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আম্মান সিদ্দিকী ও দ্বীন ইসলামকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশও। 

শনিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা। তবে কখন এবং কোত্থেকে তাদের আটক করা হয়েছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) অ্যাডভোকেট রঞ্জন কুমার দাসকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এসএম মাসুম বিল্লাহ ও সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘‌আমি অবন্তিকার অভিযোগের বিষয়ে অবগত ছিলাম না। আত্মহত্যার ঘটনার পর আমি যতটুকু জেনেছি তা হলো এ বিষয়ে দুই বছর আগে একটি মীমাংসা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তিন মাস আগে অবন্তিকা পুনরায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু এরপর বিষয়টি আর সামনে এগোয়নি। কেন বিষয়টি নিয়ে এগোনো হয়নি, এটি তৎকালীন প্রক্টর বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে পূর্ববর্তী প্রক্টর মোস্তফা কামালের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘‌আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। আগামীকাল দুপুর ১২টায় আমাদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘অবন্তিকা যে অভিযোগের কথা বলেছে, সেটি আমাকে দেয়া হয়নি। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজে যুক্ত হতে পারবেন না।’

বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)