IMF Mission Complete 080524

আইএমএফের রিভিউ মিশন শেষ হচ্ছে বুধবার

নিজস্ব প্রতিবেদক: তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে বেঁধে দেয়া শর্ত ও সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি দেখতে বাংলাদেশে অবস্থান করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) রিভিউ মিশন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ মিশন আজ শেষ হচ্ছে। এবারের মিশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিট রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূচকে আরো ছাড় দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে আইএমএফের কর্মকর্তারা বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, ভর্তুকি কমিয়ে আনা ও কর আদায় বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।

আইএমএফের এবারের ১০ সদস্যের মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। এর আগের মিশনে তিনি ডেপুটি চিফ হিসেবে ছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আইএমএফের এবারের মিশন শুরু হয়। এরপর মিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা, বিপিসিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক হয় বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও গবেষণা সংস্থার সঙ্গেও। মিশন শেষে সংস্থাটির কর্মকর্তারা আইএমএফ পর্ষদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। এর ভিত্তিতে আইএমএফের পর্ষদ তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বৈঠকে আইএমএফের কর্মকর্তারা নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারার কারণ জানতে চেয়েছেন। এছাড়া প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় না হওয়া, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা, সুদের হার ও মুদ্রা বিনিময় হার এখনো পুরোপুরি বাজারভিত্তিক না হওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের কর ছাড় সুবিধায় কাটছাঁট করা, ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মিশন কর্মকর্তারা। কর্মসূচির আওতায় অধিকাংশ শর্ত পূরণ হওয়ার কারণে আইএমএফের কর্মকর্তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তবে নিট রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সূচকের লক্ষ্যমাত্রা আরো কমিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ অনুরোধ মিশনটির কর্মকর্তারা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। 

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি অনুসারে, কোয়ান্টিটেটিভ পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়া (কিউপিসি) বা পরিমাণগত সক্ষমতার মানদণ্ড, ইন্ডিকেটিভ টার্গেটস (আইটি) বা নির্দেশক লক্ষ্য এবং স্ট্রাকচারাল বেঞ্চমার্ক (এসবি) বা কাঠামোগত মাপকাঠি পূরণের শর্ত রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেঁধে দেয়া এসব শর্ত পূরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবে আইএমএফ। এর মধ্যে নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর), প্রাইমারি ব্যালান্স ও এক্সটার্নাল পেমেন্টস অ্যারিয়ার্স সংক্রান্ত শর্তগুলো কিউপিসির অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে নিট রিজার্ভ সংক্রান্ত শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। 

গত বছরের জানুয়ারিতে ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। যদিও দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সময় এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করে দেয় সংস্থাটি। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারেও রিজার্ভ সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এ বছরের মার্চে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা যায়নি। কিউপিসির অন্তর্ভুক্ত প্রাইমারি ব্যালান্স ও এক্সটার্নাল পেমেন্টস অ্যারিয়ার্স সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। 

আইএমএফের নির্দেশক লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে রিজার্ভ মানি, কর রাজস্ব, সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয় ও সরকারের মূলধনি বিনিয়োগ। দ্বিতীয় কিস্তির সময় আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আহরণ করতে পারেনি এনবিআর। তবে এবার গত বছরের ডিসেম্বর সময়ে আইএমএফের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আয় করা সম্ভব হয়েছে। যদিও গত মার্চ শেষে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বাকি নির্দেশক লক্ষ্যগুলোও এ সময়ে অর্জিত হয়েছে।

আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এবারের মিশন ইতিবাচকভাবেই শেষ হচ্ছে। বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, স্মার্ট সিস্টেম বাদ দিয়ে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা এবং নিট রিজার্ভের মতো ইস্যুগুলো এবার গুরুত্ব পেয়েছে। তবে নিট রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকে উন্নতি হয়নি। এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি মূল্যস্ফীতি। এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে আমাদের অর্থনীতি উপকৃত হতো। আগামীতে যদি আমরা এভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হই, তাহলে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির কারণে আমরা যে সুবিধা পাব বলে আশা করেছিলাম, সেটি অর্জিত হবে না।’

গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা ও শর্ত পরিপূরণ এবং সংষ্কার বাস্তবায়ন মূল্যায়ন করে আগামী মে মাসের শেষে কিংবা জুনের প্রথম দিকে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করা হতে পারে। তৃতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ইসিএফ/ইইএফের আওতায় ৩৫ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার এসডিআর এবং আরএসএফের আওতায় ১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার এসডিআর মিলিয়ে মোট ৫১ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার এসডিআর পাবে।

প্রচলিত মুদ্রার পরিবর্তে আইএমএফের রিজার্ভ বা ঋণ কার্যক্রমের হিসাবায়ন হয় এসডিআরের (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) ভিত্তিতে। এটিকে একক কোনো মুদ্রা বলা যায় না। এসডিআর হলো মূলত পাঁচটি মুদ্রার (ডলার, ইউরো, রেনমিনবি, ইয়েন ও পাউন্ড স্টার্লিং) কারেন্সি বাস্কেটের ভিত্তিতে নির্ধারিত মুদ্রামান। গতকা‌ল প্রতি এস‌ডিআরের মূল্যমান ছিল ১ দশমিক ৩২ ডলার।

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//


Comment As:

Comment (0)