স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। এছাড়া সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি ও বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া, সরকারি হাসপাতালে জনবল নিয়োগ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা বৃদ্ধি, রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাতে নতুন হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব করেছে এ কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে সদস্যরা এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন থেকে যেসব সমস্যা রয়েছে, তা নিরসনে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বহুদিনের সমস্যা, এর মাধ্যমে আমরা যদি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারি তা হবে যুগান্তকারী ঘটনা।’
স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের সুপারিশগুলোকে সাতটি স্তম্ভে ভাগ করে উপস্থাপন করেছে কমিশন। স্তম্ভগুলো হলো—স্বাস্থ্য সেবাদান ও ভৌত অবকাঠামো, নেতৃত্ব, সুশাসন ও কর্মসংস্কৃতি, স্বাস্থ্য জনবল ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য জনবলের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধপত্র, চিকিৎসা প্রযুক্তি ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ, স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন ও স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের প্রধান অধ্যাপক এ কে আজাদ খান জানান, ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা তদারকি করবে। কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জবাবদিহিতার আওতাভুক্ত থাকবে এবং ১৭টি বিভাগের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
কমিশনের সদস্য ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন কমিশনের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার আনার জন্য তারা যেসব সুপারিশ করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো—সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং জনগণকে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান।
কমিশন সব স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট আইন আধুনিকায়ন এবং রোগীর সুরক্ষা, অর্থ বরাদ্দ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে।
তারা যে নতুন আইনগুলো প্রস্তাব করেছে, সেগুলো হলো—বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা আইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, ওষুধের দাম নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন, সহযোগী স্বাস্থ্য পেশাজীবী আইন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল আইন।
এছাড়া ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা চিকিৎসকের কাছে সরাসরি সাক্ষাৎ ও উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারবেন না।
ডা. আকরাম বলেন, ‘সবার জন্য সর্বজনীন ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিশন “বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস” গঠনের কথা বলেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবার পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করেছি।’
সংস্কার কমিশন স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগে স্বচ্ছতা আনার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে জনবল নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনের সুপারিশ করেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মো. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, অধ্যাপক ডা. সায়েরা আক্তার, এমএম রেজা, ডা. আজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ আহসানুর রহমান ও উমায়ের আফিফ উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের নভেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাপক এ কে আজাদকে প্রধান করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করে। সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লিয়াকত আলী, গাইনোকলজিস্ট ডা. সায়েবা আক্তার, শিশু স্নায়ুবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. নায়লা জামান খান, সাবেক সচিব এমএম রেজা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল) ডা. মোজাহেরুল হক, আইসিডিডিআর,বির গবেষক ডা. আজহারুল ইসলাম, স্কয়ার ক্যান্সার সেন্টারের ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, গ্রিন লাইফ সেন্টার ফর রিউম্যাটিক কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চের ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, আইসিডিডিআর,বির শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের উমায়ের আফিফ।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//