বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশে যারা বিনিয়োগ করেছে সবাই সফল হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত স্থান। আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন।
মঙ্গলবার (৬ মে) সন্ধ্যায় ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট-বাংলাদেশ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ আহ্বান জানান উপদেষ্টা। জুমে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারের সঞ্চালক ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আশিক চৌধুরী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সফলতা তুলে ধরেন। এরপর অনুষ্ঠানে যুক্ত বাণিজ্য উপদেষ্টা শ্রোতাদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। রেজিস্ট্রেশন করে একটি পোলের মাধ্যমে আগেই প্রশ্ন গ্রহণ করা হয়। এরপর সেগুলোর মধ্যে থেকে নির্বাচিত কিছু প্রশ্ন উপদেষ্টাকে করা হয়। সেসব প্রশ্নের জবাব দেন শেখ বশিরউদ্দীন।
এ সময় প্রশ্ন করা হয়, বিনিয়োগ করার জন্য বাংলাদেশ কেমন পরিবেশ? জবাবে তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ উপযুক্ত স্থান। দেশের মানুষ খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। এখানে বিনিয়োগ করলে পারস্পরিক লাভ রয়েছে। দেশের মানুষের কর্মসংস্থানসহ নানাভাবে আমরা লাভবান হব। বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবে। কেননা যারাই আগে বিনিয়োগ করেছে সবারই রেকর্ড ‘সফল’।
আশিক চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে ব্যবসায় এখনো চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো— বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া, গ্রসরুট লেভেলে পুরনো রীতি, নতুন ট্যারিফ বাস্তবায়ন ও প্রভাব এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ধীরগতি।
বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে কিছুটা সংকট আছে। প্রাকৃতিক গ্যাসে আমরা স্বয়ংসম্পুর্ণ নই। আমাদেরকে এলএনজি আমদানি করতে হয়। লাইনের মাধ্যমে সবাইকে গ্যাস দিতে পারি না। বিদ্যুৎ উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। আশা করছি বছর দুয়েকের মধ্যে একেবারেই বিদ্যুৎ সমস্যা থাকবে না।
বাংলাদেশের বিমানবন্দরে বিদেশীদের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো হয় না। এমন প্রশ্নে বশিরউদ্দীন বলেন, বিমানবন্দরে নিউ টার্মিনাল চালু হচ্ছে। যাত্রীদের বিশ্বমানের সেবা দিতে আমরা কাজ করছি।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পর সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্গো এয়ারপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। সরকার পরিবহন সময় ও খরচ কমিয়ে আনতে কাজ করছে। ঢাকার পাশাপাশি সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে কার্গো ফ্লাইট চলছে। প্রয়োজনে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা হবে। কার্গো ফ্লাইটগুলো যথাসময়ে পরিচালনা ও পণ্য উঠানোর জন্য নতুন যন্ত্র যুক্ত হচ্ছে।
সংস্কারের বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন তৈরির কাজও চলছে।
বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের স্থানীয় পর্যটকদের ওপর বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। তারাই পর্যটন খাতকে টিকিয়ে রেখেছেন। এখানে রিজনেবল বিনিয়োগ প্রয়োজন। পর্যটনে বিনিয়োগে আগ্রহী যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারে। আমরা তাদের স্বাগত জানাব।
বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তখন অর্থনৈতিক খাতে নানা সমস্যা ছিল। ধীরে ধীরে কিছুক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১.৪ শতাংশ। এরপর প্রতি মাসেই এটি কমেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ৯.২ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে মূল্যস্ফীতি আরো কমিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার।
এ সময়ে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে জানান আশিক চৌধুরী। তিনি জানান, গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে দেশে ৪৯ কোটি (৪৯০ মিলিয়ন) ডলার বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। যেটি ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৭ কোটি ৯০ লাখ (৩৭৯ মিলিয়ন)। আর ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ছিল মাত্র ১০৪ মিলিয়ন (১০ কোটি ৪০ লাখ) ডলার।
তবে বর্তমানে প্রাইভেট সেক্টরে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে বলে তিনি জানান। গত বছরের জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১০ দশমিক ১ শতাংশ ছিল। যেটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিলে রফতানি ১১ শতাংশ ও রেমিট্যান্স ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিনিয়োগবার্তা/এসএএম//