পুঁজিবাজার সংস্কার ও আর্থিক খাতের উন্নয়ন
ড: মিহির কুমার রায়: দেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট কাটাতে বড় ধরনের সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আস্থাহীনতার কারণে বিগত ৮ বছরে কমপক্ষে ১৬ লাখ বিনিয়োগকারী বাজার থেকে বেরিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী কোনোভাবে টিকে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি, ভালো শেয়ারের মূল্য বাড়তে না দেওয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণে কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা সহ বেশ কিছু কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে গতি আনতে ৫টি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ওই দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নসহ পুঁজিবাজারের বড় ধরনের সংস্কার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়)। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভাগকে। প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনার মধ্যে আছে - ‘সরকারি মালিকানাধীন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত’ এবং দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করতে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ৩ মাসের মধ্যে বাজার সংস্কার, পুঁজিবাজারের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ব্যাংক ঋণের নির্ভরতা কমাতে বড় কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। আগে পুঁজিবাজার দেখার কেউ ছিল না, কোনো অভিভাবক নেই। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজার পুরোপুরি মনিটরিং করা হচ্ছে। বাজার নিয়ে কোনো কথা থাকলে সেটি কারও কাছে বলতে পারছে। আগে কথা শোনার কেউ ছিল না। ব্রোকার হাউজের বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন বাজারের যে চরিত্র সেটি এখন স্থিতিশীল এবং স্বাভাবিক। বাজার ভালো করার জন্য বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে।
২২ মে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সঙ্গে অর্থ বিভাগের বৈঠকে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এবং যেসব বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারি মালিকানা রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে মানসম্মত শেয়ার পুঁজিবাজারে আসবে। যা চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করবে। আলোচনায় আরও বলা হয়, ভালো ও মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। ওই বৈঠকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি মালিকানার ৫ শতাংশ শেয়ার এবং বিদেশি কোম্পানির ৫ শতাংশ শেয়ার অর্থাৎ উভয়ের মোট ১০ শতাংশ শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সরকারের লাভজনক ও সম্ভাবনাময় দেশীয় কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। তালিকাভুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আইপিও/ডিরেক্টর লিস্টিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির দায়িত্ব (ইস্যু ব্যবস্থাপনা) আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি. পালন করবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইসিবি ও বিএসইসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে আলোচনা হয় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার লক্ষ্যে প্রণোদনা হিসাবে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ হবে। সেখানে বলা হয় বিষয়টি বিবেচনা করলে ভালো ও মৌলিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। এছাড়া, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ তৈরি হলে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস পাবে। তবে এ বিষয়ে চলতি বাজেটে ইতোমধ্যে এটি কার্যকর করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে করপোরেট করের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ৩ মাসের মধ্যে বাজার সংস্কারের নির্দেশনা প্রসঙ্গে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া পুঁজিবাজার সংস্কার কমিশনের দাখিলকৃত সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্যগুলো দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারের অনিয়মগুলো উদ্ঘাটনের জন্য টাস্কফোর্স কাজ করছে। প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলমান। ওই বৈঠকে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের আলোকে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয় বিএসইসিকে। আলোচনায় উঠে আসে ঋণনির্ভরতার বিকল্প হিসাবে পুঁজিবাজারকে গড়ে তোলা। বৈঠকে বলা হয়, দেশের বড় কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঋণের পরিবর্তে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারে। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি সংগ্রহে ব্যাংক ঋণের বিকল্প তৈরি করতে হবে। এতে ব্যাংক খাতের চাপ ও ঝুঁকি হ্রাস পাবে। সেখানে শেয়ার বা বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের বেলায় প্রয়োজনীয় পলিসি প্রণয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে দেশের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ভূমিকা নিয়ে। এসময় আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে আইসিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু সাম্প্র্রতিক সময়ে আর্থিক সংকটের কারণে আইসিবি পুঁজিবাজারে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। নিজস্ব তহবিল না থাকার কারণে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ সুদে ফান্ড সংগ্রহ করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সুদহার বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে তাদের প্রদেয় সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে দরপতনের কারণে আইসিবির বিনিয়োগের বাজারমূল্য অনেক কমে গেছে। ফলে তারা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। এজন্য তিনি আইসিবিকে সরকারের পক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ, পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিশেষ তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন। বাজার পরিস্থিতি উন্নয়ন করতে ওই বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারের গতি আনতে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং বাজারে নগদ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ‘ক্যাপিটেল মার্কেট সাপোর্ট ফান্ড’ গঠন করা যেতে পারে। এ ধরনের একটি ফান্ড গঠনের ফলে বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবে। ওই বৈঠকে এ ফান্ড গঠনের ব্যাপারে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিএসইসি ও আইসিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অপর দিকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে পুঁজিবাজারের স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। এই বাজেটকে ‘পুঁজিবাজারবান্ধব’ বলে আখ্যা দিয়েছে সংগঠনটি। ডিবিএ সভাপতি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিকাশে দীর্ঘ বছর ধরে আমরা সরকারের কাছে কর সুবিধাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে আসছিলাম। এবারের বাজেটে আমাদের দাবির আংশিক পূরণ হয়েছে। আমাদের দাবির মধ্যে- ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর উৎসে করের হার ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ করা হয়েছে, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের পার্থক্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য করপোরেট করের হার ১০ শতাংশ কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন বাজারের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। এর ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী, ইস্যুয়ার কোম্পানি, স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবেন। অন্তর্বর্তী সরকার পুঁজিবাজারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যার প্রতিফলন আমরা এবারের বাজেটে দেখতে পেয়েছি।
আবার শেয়ারবাজারে তারল্যের জোগান বাড়াতে গঠিত ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের মেয়াদ আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর মেয়াদ গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল। পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে এ তহবিলের মেয়াদ আরও ২২ মাস বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো আলোচ্য তহবিল থেকে অর্থ ওই সময় পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে তহবিলের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে নানা শর্ত আরোপ করা হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, বাড়তি মেয়াদে তহবিলের বিনিয়োগের স্থিতি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। নীতিমালাটি প্রতিটি ব্যাংকের পর্ষদে অনুমোদনের পর তা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে। বিশেষ তহবিলের স্থিতি কমানোর জন্য ব্যাংকগুলো এখন যে পরিকল্পনা করবে সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তহবিলের মেয়াদ বাড়ানোর নির্ধারিত সময়ের পরও যদি ব্যাংকগুলোর এ তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থাকে তবে সেগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসাবেই অন্তর্ভুক্ত হবে। এ বিনিয়োগের তথ্য ব্যাংকগুলোর মোট পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিবেদন করতে হবে। এর আগে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজারে তারল্যের জোগান বাড়াতে এই বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছিল।
এখন শেয়ারবাজারে সরকারি মালিকানাধীন ও বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্তি চায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)। এ ব্যাপারে ডিবিএ’র পক্ষ থেকে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি স্বাক্ষরিত চিঠি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। এতে বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানায় ডিবিএ। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারে চরম অনিয়ম, অপশাসন ও অস্থিরতা চলছে। এসব অনিয়মের ফলে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রায় অকার্যকর। কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যর্থতায় রূপ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৃত রিটার্ন এবং মূলধন কমেছে। এর ফলে আলোচ্য সময়ে প্রকৃত অর্থে বাজার প্রায় ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অতীতে বিভিন্ন প্রতিকূল ঘটনা এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বিশেষ করে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে কারসাজির কারণে বাজারের আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। এতে বিনিয়োগকারীসহ সামগ্রিকভাবে বাজারের স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে। এসময়ে অসংখ্য কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে কৃত্রিমভাবে। এতে বিনিয়োগকারীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ২০২০ সালে করোনা এবং পরে প্রায় ২০ মাস শেয়ারের দামের ওপর ফ্লোর প্রাইস দিয়ে আটকে রাখা হয়। এতে বাজারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক তহবিল ব্যবস্থাপকরাও বাংলাদেশ থেকে দূরে সরে গিয়েছে। অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের। ডিবিএ’র চিঠিতে বলা হয়, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনিয়ম হলো, তালিকাভুক্ত হয়েছে মানহীন আইপিও (প্রাথমিক শেয়ার)। এর মাধ্যমে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। এতে বাজারে তৈরি হয় স্থায়ী তারল্য সংকট। চিঠিতে আরও বলা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পরিচালনাকারী সংস্থা, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বাজার মধ্যস্থতাকারী এবং আর্থিক নিরীক্ষক, রেটিং এজেন্সিসহ অন্যান্য অংশীজনের মাঝে সুশাসনের অভাব। ডিবিএ’র চিঠিতে বলা হয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ঘাটতির কারণে বাজারে আস্থার সংকট মারাত্মক রূপ নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার নেতৃত্বে আমরা এই সংকট থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আসতে চাই।’ নাহলে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং শিল্পায়নে মূলধন সংগ্রহের পরিবেশ তৈরির চমৎকার একটি সুযোগ হারাতে হবে। চিঠিতে বলা হয়, বাজারে জবাবদিহিতার জন্য অবশ্যই ভালো আইপিও আনতে হবে। তালিকাভুক্ত করতে হবে নতুন পণ্য ও কোম্পানি। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ও অবকাঠামো খাতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানি তালিকাভুক্তি জরুরি। এসব কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য তৈরি হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সুশাসিত, বড় বহুজাতিক কোম্পানি দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছে। এসব কোম্পানিতে সরকারের অংশীদারিত্বতে থাকা শেয়ার পূঁজিবাজারে ছাড়তে হবে।
লেখক: গবেষক ও অধ্যাপক (অর্থনীতি)
বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই//