আমার একটি স্বপ্ন আছে
বিনিয়োগবার্তা ডেস্ক, ঢাকা: তরুণটির নাম যাফির শাফিঈ চৌধুরী। ১৪ বছর বয়স থেকেই ইলেকট্রনিকস নিয়ে তাঁর আগ্রহ। সার্কিট ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্প বানানোর কাজ তিনি সে বয়স থেকেই করে আসছেন। কদিন পর শুরু করলেন প্রোগ্রামিং। ফলাফল—কলেজ পর্যায়ের প্রায় সব ধরনের সায়েন্স প্রজেক্টে চ্যাম্পিয়ন খেতাব জুটল তাঁর ঝুলিতে। কুইজ অনুষ্ঠানগুলোতে যে ‘বাজার সিস্টেম’ ব্যবহার করা হয়, সে রকম একটা ‘বাজার’ তৈরি করেছিলেন যাফির। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের তৈরি বাজারটিকে আরও উন্নত করেছেন। এখন স্পেলিং বি, কুইজ কুইজের মতো অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হচ্ছে যাফিরের তৈরি বাজার। যাফির পড়ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষে।
২০১১ সাল থেকে একজন ফ্রিল্যান্স অ্যানিমেটর ও সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিছু টাকাপয়সা রোজগার হয়। আয়ের পুরোটুকু দিয়ে খুলে বসেন নিজের কোম্পানি। বন্ধু মীর শাহরুখ ইসলাম এবং কাজী মো. আসিফকে সঙ্গে নিয়ে ২০১২ সালে শুরু করা স্টার্টআপটির নাম দেন ‘সিঙ্গুলারিটি ইন্টারেকটিভ’। যাফির বলছিলেন, ‘আমাদের সিঙ্গুলারিটি ইন্টারেকটিভ বর্তমানে তিন ধরনের কাজ করছে—সফটওয়্যার অ্যান্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যানিমেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন স্টুডিও আর হার্ডওয়্যার সলিউশন। ১৭ জনের বেশ বড় একটা দল কাজ করছে এসব নিয়ে।’ তাঁদের এই স্টার্টআপের সঙ্গে এখন নিয়মিত কাজ করছে বেশ কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান।
যাফির বলছিলেন তাঁর কোম্পানির সাফল্যের কথা। ‘লাফার্জ ও জিমেইলের একটি ক্যাম্পেইন প্রতিযোগিতার জন্য আমরা একটি মডেল রোবট বানিয়েছিলাম, ২০১৩ সালে যেটা ব্র্যান্ড ফোরামের ‘কমওয়ার্ড’ পুরস্কার জিতে নেয়। আমরাই প্রথম অগমেন্টেড রিয়্যালিটি অ্যাপ তৈরি করি, যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে উদ্বোধন করেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে অগমেন্টেড ছবি তোলার ব্যবস্থা করা হয়।’
উদ্যোক্তা যাফিরের সাফল্য এখানেই শেষ নয়। কনজ্যুমার মার্কেটিংয়ের কথা মাথায় রেখে ২০১৪ সালে সিঙ্গুলারিটি ইন্টারেকটিভের পাশাপাশি কাজ শুরু করেন আরও একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। নাম ‘বন্ডস্টাইন টেকনোলজিস লিমিটেড’। তাদের স্লোগান ‘মেড ইন বাংলাদেশ’।
স্বল্পভাষী যাফিরের তৈরি ভিডিও ডিজিটাল মার্কেটিং সামিটে বেস্ট ক্যাম্পেইন ভিডিওর খেতাব হিসেবে জিতে নেয় ‘ডিগিবাজ’ অ্যাওয়ার্ড। বর্তমানে তিনি বুয়েট ডিবেটিং ক্লাব এবং বুয়েট ব্রেইনিয়াক কুইজ ক্লাবের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালে হয়ে যাওয়া ব্যাটল অব মাইন্ডসে তাঁর দল প্রথম রানারআপ এবং হুওয়েই সিডস ফর ফিউচার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। সে সুবাদে চায়নায় হুওয়েইয়ের প্রধান কার্যালয়েও ঘুরে এসেছেন তাঁরা।
বাবা মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ও মা সুরাইয়া বেগমের দুই সন্তানের একজন যাফিরের বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। পড়াশোনার এত চাপের মধ্যেও পুরোদস্তুর দুটো কোম্পানির কাজ কীভাবে করেন? প্রশ্ন শুনে বললেন, ‘এটা সত্যি যে সারা দিন ক্লাস শেষে বাসায় ফিরে রাত পর্যন্ত অফিসে কাজ করা কঠিন। এমনও দেখা গেছে, অফিসের কাজের জন্য ভার্সিটির ক্লাস মিস হচ্ছে, কিংবা ভার্সিটির জন্য ভালো কোনো চুক্তি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বন্ধুরা সব সময় পাশে ছিল বলেই এতটা পথ আসতে পেরেছি।’ শেষে আরেকটি প্রশ্ন, কোথায় পৌঁছাতে চান? যাফিরের উত্তর, ‘যেদিন দেখব আমার কাজ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে কোনো না কোনোভাবে উপকৃত করছে, সেদিনই আমার স্বপ্ন পূরণ হবে।’
(আরজেডআর/ ৭ মার্চ ২০১৭)