শারদীয় দূর্গোৎসবকে সামনে রেখে নরসিংদীতে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু, বিনিয়োগবার্তা, নরসিংদী: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নরসিংদীর মন্ডপগুলোতে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমার পাশাপাশি পূজা মন্ডপগুলোও সাজানো হচ্ছে বাহারি সাজে। এবার নরসিংদী জেলায় মোট ৩৪৬ টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে অনেক মন্ডপে দেবীর প্রতিমা স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে। এখন শুধু আল্পনার আঁচড়ে মুখ ফুটিয়ে তোলার অপেক্ষা।

আগামী ১৫ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে দেবীদুর্গাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পূজার দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মন্ডপে মন্ডপে চলছে সাজসজ্জার কাজ। এবার দেবীদুর্গা আসছেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে এবং যাবেন দৌলায় (পালকি) চড়ে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এবছর নরসিংদী জেলায় ৩৪৬ টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে নরসিংদী পৌরসভায় ৩৩টি ও মাধবদী পৌরসভায় ১৬টি সহ নরসিংদী সদর উপজেলায় ৯৮টি, পলাশ উপজেলায় ৪২টি, শিবপুর উপজেলায় ৭৪টি, মনোহরদী উপজেলায় ৪৬টি, বেলাব উপজেলায় ২২টি এবং রায়পুরা উপজেলায় ৬৪টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে

নরসিংদীর মৃম্ময়ী প্রতিমালয়ের স্বত্বাধিকারী প্রতিমাশিল্পী সম্ভুনাথ পাল জানান, ‘পূজা শুরুর আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে মৃৎশিল্পীরা বিরামহীনভাবে কাজ করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের কর্মযজ্ঞ। চাহিদামত প্রতিমাকে গড়ে তুলতে চেষ্টার কোনও কমতি নেই।’ তিনি আরো জানান, প্রতিমা তৈরিতে প্রচুর কাঁচাপণ্যের প্রয়োজন হয়। তবে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় এবার প্রতিমা তৈরিতে খরচ কিছুটা বেড়েছে। প্রতিমা তৈরি শেষ হলে এরপর শুরু হবে যাবে সাজসজ্জার কাজ।’

নরসিংদীর তুর্য্য প্রতিমা শিল্পালয়ের স্বত্বাধিকারী দুলাল পাল জানান, ‘প্রতিমা তৈরিতে মূলত মাটি, বাঁশ-খড়, দড়ি, লোহা, ধানের কুঁড়া, পাট, কাঠ, রঙ, বিভিন্ন রঙের শিট ও শাড়ি-কাপড়ের প্রয়োজন হয়। প্রতিমা গড়া শেষ হলে রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয় অবয়ব। প্রতিমা তৈরি করা অনেক কষ্টের। বছরের অন্যান্য সময় তেমন কাজ না থাকলেও এই সময় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তবে সময়ের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও সে অনুযায়ী প্রতিমা তৈরির মজুরি বাড়েনি।

বিশ্বকর্মা প্রতিমা শিল্পালয়ের সঞ্জিত পাল বলেন, আমার কারখানায় ৫ জন কারিগর নিয়ে মোট ২০ প্রতিমা তৈরি করেছি। বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে অজন্তা, অরিয়েন্টেল, দেবী ও স্বাম্য নামে চার প্রকারের প্রতিমা তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা। আয়োজকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে অজন্তা প্রতিমা।

নরসিংদী জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার সাহা জানান, ‘অতীতের চেয়ে এবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা সম্প্রতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। এছাড়াও দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন যথেষ্ট নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এবছর নরসিংদী জেলায় ৩৪২টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। দেবীদুর্গা এবার আসছেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে এবং যাবেন দৌলায় (পালকি) চড়ে।’

নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রফেসর সূর্যকান্ত দাস জানান, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতি বছরের মতো এবারও এ উৎসবটি জাকজমকভাবে উদযাপন করা হবে। গত বারের চেয়ে এবার মন্দির সংখ্যা বেশি। তাই উদযাপনটাও বেশি হবে বলে আশা করছি। এখন প্রতিমা তৈরি এবং প্যন্ডেল নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। পূজা নির্বিঘ্নে করতে প্রশাসন থেকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা পাবার আশ্বাস পেয়েছি।’

এদিকে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম-পের সৌন্দর্য্য ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।

(এসএইচআর/এসএএম/ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮)


Comment As:

Comment (0)