আইপিওর নতুন পদ্ধতিতে সবপক্ষই লাভবান হবেন: ড. শেখ শামছুদ্দিন আহমেদ

পুঁজিবাজারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়ায় নতুনত্ব আনার ফলে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী উভয় পক্ষই লাভবান হবেন বলে মন্তব্য করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আইপিও প্রক্রিয়া সহজতর করতে আমরা সকল অংশীজনদের মতামত নিয়েছি। তাদের দেওয়া সুপারিশের আলোকে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া সেকেন্ডারি মার্কেটকেও কিভাবে আরও গতিশীল করা যায়, কিভাবে সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ডের লেনদেন চালু করা যায় এবং কতটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসএমই প্লাটফর্ম চালু করা যায় – তা নিয়েও গভীরভাবে কাজ করছে কমিশন। অচিরেই এসবের প্রতিফলন দেখতে পাবেন বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শামীম আল মাসুদ।  সহযোগিতা করেছেন দেওয়ান ফজলে এলাহী। আর ছবি তুলেছেন মঞ্জুরুল রেজা।

♦  আমরা লটারি ব্যবস্থাটিকে তুলে দিয়ে  তাদেরকেও যদি প্রায়োরিটি বেসিসে শেয়ার দিতে পারি- এলক্ষ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হয়েছে। এপ্লিকেশনসের সাইজ বুঝে তাদেরকে শেয়ার বন্টন করে দিতে চাই। এসব বিষয় নিয়ে আমরা আরও কাজ করছি।

♦ ডিজিটাল বিও আইডি হয়ে গেলে ফ্যাক একাউন্ট কমে যাবে।  প্রকৃত ইনভেস্টররা  সুযোগটা নিতে পারবেন।  এছাড়া আমরা ডিজিটাল বিও আইডি যেমন করছি একইভাবে  এ্যাপ্লিকেশন প্রসেসটাকেও ডিজিটালাইজেশন করছি। এটি হয়ে গেলে ঘরে বসেই বিনিয়োগকারীরা বিও একাউন্ট করা এবং আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন।

♦ ‘জেড’ ক্যাটাগরির কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যে ভাল পরফর্ম করছে। ওটিসি থেকে কিছু কোম্পানিকে উঠানোর চেষ্টা করছি। কোন সাহায্য লাগলে আমরা  করবো বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করছি। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্থ কোম্পানিগুলোকে পূনরুদ্ধার করতে চাই আমরা।

♦ একটি কথা না বললেই নয় যে, ক্যাপিটাল মার্কেটের যদি উন্নতি  না হয় তাহলে আমরা মিডল ইনকামের কান্ট্রি হিসাবে তো বেশিদূর যেতে পারবো না। আমাদের উন্নয়নের গতিটা স্লথ হয়ে যাবে।

শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছুদিন আগে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আইপিও প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসময় তারা  খুব সুন্দর সুন্দর প্রস্তাবনা রেখেছেন। তারা যে মার্কেটে অনেক কিছু করতে চায়, মার্কেটের উন্নয়নে তাদের যে আগ্রহ আছে, দেশের মানুষ যে মার্কেট থেকে আরও অনেক কিছু দেখতে চায়- সেসব ব্যাপারে তারা অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের দেওয়া প্রস্তাবগুলোর সাথে আমাদের চিন্তাভাবনার অনেকাংশে মিল রয়েছে। আর তাই ইতোমধ্যে আইপিওর ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্ঠা করেছি। তার চেয়ে বড় কথা যাদের জন্য এই মার্কেট তারা যেহেতু এসব বিষয়গুলো চাচ্ছেন- তাই আমরা এই পরিবর্তনগুলো ধীরে ধীরে আনার চেষ্টা করছি।

বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, আইপিওর  প্রসেসটাকে আরও সিম্পলিফাই করার চেষ্ঠা করছি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার।  বিভিন্নভাবে এটাকে সিম্পলিফাই করা যায়। যেমন- তথ্য ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সময়টা

কমিয়ে আনা, বর্তমানে আমাদের যে ডাইমেনশনটা আছে-এর একটি লেটার অব ইন্সটেন্ড আর একটি লেটার অব কনসেপ্ট-  এ দুটোর মধ্যে একটা বিশাল টাইম গ্যাপ আছে। সেগুলোকে রিডিউস করা বা ইলিমিনেট করে দেওয়া।  এরকম বিভিন্ন কাজ করে এই সময়টাকে আমরা কমিয়ে আনতে চাই। এছাড়া আমরা আইপিওর ক্ষেত্রে ইলিজিবল ইনভেস্টরের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিমানের শেয়ার দিচ্ছি। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এটি তারা পাচ্ছেন। কিন্তু যারা সাধারণ বিনিয়োগকারী তারা কিন্তু এ ধরণের কোন সুযোগ পাচ্ছেন না। তারা লটারীতে শেয়ার পাওয়ার আশায় বসে থাকেন। আমরা এই প্রক্রিয়া থেকে তাদেরকে বের করে আনতে চাই। আমরা লটারি ব্যবস্থাটিকে তুলে দিয়ে  তাদেরকেও যদি প্রায়োরিটি বেসিসে শেয়ার দিতে পারি- এলক্ষ্যে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হয়েছে। এপ্লিকেশনসের সাইজ বুঝে তাদেরকে শেয়ার বন্টন করে দিতে চাই। এসব বিষয় নিয়ে আমরা আরও কাজ করছি। এছাড়া ইলিজিবল ইনভেস্টরদের নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে এসব কাজ করতে আরও সময় লাগবে। একদিনেতো কিছু করা যাবে না। সেজন্য সময় দিতে হবে।

শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, শেয়ারমার্কেট টাতো একটা ডিফিকাল্ট মার্কেট, এটা ফ্লাকচুয়েট করে খুব বেশি। এটাই স্বাভাবিক। আর ফ্লাকচুয়েট করলে অনেক মানুষ আফসোস প্রকাশ করে। অথচ, এটা কিন্তু কোনো বিষয় না। পৃথিবীর যেকোনো দেশেই একমাত্র স্টক মার্কেটেই প্রতিদিনই ইনডেক্স উঠে আর নামে। সেখানে খুব বেশি যদি ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হয়; তখন তাদের ম্যানেজ  করাটা একটা ডাইমেনশন হয়ে যায়। এজন্য করপোরেট ডাইমেনশনটাও একচ্যুয়ালি ইগনোর করার কোনো সুযোগ নাই। তাই  আমাদের এখানে সংস্কারগুলো অনেক মেরিট-ডিমেরিট ভেবেই করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে দুটির মধ্যেই সমন্বয় রাখতে হবে। তৃতীয় জিনিস যেটা হতে পারে,  আমরা দেখেছি যে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসতে রোডশো করে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এছাড়া লটারি করতেও অনেক খরচের ব্যাপার আছে। এজন্য প্রতিটি আইপিও আবেদনে ৬ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত লেগে যায়। তাই এই টাকাগুলোকে আমরা যদি  একটা স্ট্রাটেজিক সিস্টেমে সবার মধ্যে ইক্যুয়াল ডাইমেনশন আনতে পারি, তাহলে এই থরচাকে আমরা সিগনিফিকেন্টলি রিডিউস করতে পারি। আইপিওর কস্ট বলে যে খরচটা থাকে তা প্রায় কোটি দুয়েক টাকা হয়। কিন্তু আমরা  যদি এই প্রসেসগুলো ইমপ্রুভ করতে পারি তাহলে কিন্তু খরচের পরিমানটা কমে আসবে।এতে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী উভয়েই লাভবান হবেন।

বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, আমরা সর্বশেষ দশটা কোম্পানির বিডিংকে আমলে নিয়ে দেখলাম এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক একটি কোম্পানির প্রায় ৬০ লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে।  সেগুলো প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনা কোনো ব্যাপারই না। নতুন পদক্ষেপগুলো যদি ইমপ্রুভ করা যায় আর টাকা যদি সঞ্চয় হয়, তাহলে যারা শেয়ারটা পাচ্ছে তাদেরও তো সঞ্চয় হবে, তার কোম্পানির টাকাটাইতো বেচে যাচ্ছে। তাই আমরা প্রতিমূহুর্তেই এসব বিষয়ে কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি।

আইপিওতে আগ্রহীরা ১০/২০ গুন বেশী আবেদনকারিদের  শেয়ার ডিস্ট্রিবিউশনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটাকে  আমরা একটা প্রসেসের মধ্যে দাড় করিয়েছি এবং  এ বিষয়ে আরও কাজ করছি।  যেমন: প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে একটা মিনিমাম ইনভেস্টমেন্ট থাকতে হবে। এছাড়া ডিজিটাল বিও একাউন্ট  খোলার বিষয়ে বলেছি। ইতোমধ্যে ডিডিটাল একাউন্ট ওপেনিং উদ্বোধনও করা হয়েছে। ডিজিটাল বিও আইডি হয়ে গেলে ফ্যাক একাউন্ট কমে যাবে।  প্রকৃত ইনভেস্টররা  সুযোগটা নিতে পারবে।  এছাড়া আমরা ডিজিটাল বিও আইডি যেমন করছি  একইভাবে  এ্যাপ্লিকেশন প্রসেসটাকেও ডিজিটালাইজেশন করছি। এটি হয়ে গেলে ঘরে বসেই বিনিয়োগকারীরা বিও একাউন্ট করা এবং আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া আমরা ডিজিটাল বুথ খোলার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সেখানে গ্রামাঞ্চলের মানুষজন সহজে এ্যাপ্লিকেশন করতে পারবেন।এছাড়া বিদেশ থেকেও এ্যাপ্লাই করতে পারবেন। আপনার জানেন, ইতোমধ্যে দুবাইয়ে একটি ব্রোকারেজ হাউজের বুথ চালু হয়ে গেছে। এছাড়া আরও দু একটি দেশে চালূর প্রস্তুতি চলছে। এ ধরনের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আমরা পুঁজিবাজারে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছি, যে কাজগুলো করলে মার্কেটের ডেপথটা বাড়বে।

একটি কথা না বললেই নয় যে, ক্যাপিটাল মার্কেটের যদি উন্নতি  না হয় তাহলে আমরা মিডল ইনকামের কান্ট্রি হিসাবে তো বেশিদূর যেতে পারবো না। আমাদের উন্নয়নের গতিটা স্লথ হয়ে যাবে। তাই পুঁজিবাজারকে আমরা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাজ শুরু করেছি।

‘জেড’ ক্যাটাগরি এবং ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারের সকল ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনতে কাজ করে চলেছি। এরই ধারাবাহিকতায় ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক ধারায় পড়ে আছে, তাদেরকে কিভাবে গতিশীল করা যায়- তা নিয়ে কাজ করছি। আইনানুযায়ি তাদের কাছে তথ্য চাওয়া,, তাদেরকে ডেকে আনা ও তাদের বক্তব্য এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া- এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

আমরা চাই যে, ওই প্রতিষ্ঠানটা সঠিকভাবে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানটা তার নিজ দায়িত্ব পালন করে যে উদ্দেশ্যে গঠিত সেই  কাজটা করবে। যখন ফেইল করবে তখন আমরা তাদেরকে হাত ধরবো, আমরা তাদের কাছে জানতে চাইবো যে, তোমাদের কি সমস্যা আমাদেরকে বলো-আমরা সাহায্য করবো। আমি মাসের পর মাস বসে বসে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে গাইড করেছি। তাদের মধ্যে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যে ভাল পরফর্ম করছে। ওটিসি থেকে কিছু কোম্পানিকে উঠানোর চেষ্টা করছি।  এ রকম বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এগুলো কিন্তু হঠাৎ করে হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের সাথে আমরা কিন্তু রেগুলার বসছি, তাদের সমস্যা জানার চেষ্ঠা করছি। তারা কি করতে চায়, কিভাবে করতে চায়- সেটা জানার চেষ্ঠা করছি। কোন সাহায্য লাগলে আমরা  করবো বলে আশ্বস্ত করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, আমরা কেউই চাই না তালিকাভূক্ত কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাক। আমি ব্যক্তিগত ভাবেতো নই-ই, আমার কমিশন, আমার সরকারও কোনভাবে চায় না যে কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হোক। আমরা সকলেই চাই যেকোনোভাবেই হোক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকবে। কখনও কখনও তো সমস্যা হবেই। সেই সমস্যা উত্তরণে আমরা সবাই মিলে সহায়তা করবো। তারপরেও না হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে যেভাবে যাবার যাবে।

কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে তাহলো আমরা যে সহযোগিতার মন নিয়ে ডেকে পাঠাচ্ছি –  তাতে তাদের মধ্যে কেউ কেউ রেসপন্স করছে না,  পাত্তা দিচ্ছে না। আর এরফলে তারা বেনিফিটের টাকাটা রেখেছে নাকি নিয়ে নিয়েছে, কি করেছে, কোথায় আছে-তার কিছুই আমরা জানতে পারছি না। সেক্ষেত্রে আমরা যেমন সন্দেহপ্রবন হয়ে উঠছি, আবার বিনিয়োগকারীরাও বঞ্চিত হচ্ছেন। সেজন্য আমরা চাচ্ছি যে, তারা যেন আমাদের কাছে আসে, আমাদের কাছে যেন সমস্যাগুলো বলে। তাই তাদেরকে আমাদের কাছে আনার জন্য চেষ্ঠা করছি।

তিনি বলেন, অতীতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, অনেকে টাকা পয়সা নিয়ে বিদেশ চলে গেছে, তখনতো তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে পারছি না, আমরা আইনানুগভাবে কোর্টে গিয়ে বলছি, কিন্তু ফিরে আসছে না। তাই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্থ কোম্পানিগুলোকে পূনরুদ্ধার করতে চাই আমরা। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে খোলা মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

(শামীম/২৬ জানুয়ারি ২০২১)

 

 

 

 

 

 

 

 


Comment As:

Comment (0)