ইউনাইটেড এয়ারের তাসবির

একান্ত আলোচনায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান

নীতিসহায়তা পেলে ফের ইউনাইটেড এয়ারের দায়িত্ব নেবেন ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী

শামীম আল মাসুদ: দেশে চলমান অন্তবর্তীকালিন সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে নীতিসহায়তা পেলে ফের পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) এর দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী।

সম্প্রতি বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলোচনায় দৃঢভাবে এ আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন তিনি। 

ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের কিছু লোকের অসহযোগিতার কারণে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউনাইটেড এয়ারের অপারেশন বন্ধ হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার ও তার দোসরদের নানামূখী অসহযোগিতার কারণে তখন বিমান চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। দীর্ঘদিন চালু না থাকায় বিমানগুলো এখন ব্যবহারের অনুপযোগি হতে চলেছে। এগুলো দেশের সম্পদ।

তিনি জানান, কোম্পানিটিতে প্রায় দেড় লক্ষাধিক বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশিদেরও বিনিয়োগ রয়েছে। তাই এগুলো রক্ষায় সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু বিগত সরকার উদ্দেশ্য পরায়ণভাবে এ কোম্পানিটিকে গলা টিপে হত্যা করেছে। অনেক চেষ্টার পরও আমি এটিকে সচল করতে পারিনি। উল্টো নানাভাবে হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হয়েছি। তবে বর্তমানে দেশে দায়িত্বরত বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বতীকালীন সরকার এ কোম্পানিটিকে পূণরায় চালুর উদ্যোগ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করছি। এক্ষেত্রে সরকার যদি মনে করে আমাকে এ কোম্পানিটি পূনপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেবে-তাহলে আমি তা গ্রহণ করতে চাই।

তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদে থেকে কিংবা পর্ষদের বাহিরে থেকেও যদি কোনোভাবে কোম্পানিটি পূণপ্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে পারি-তাতেও আমি করতে রাজি আছি।

ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০০৫ সালের জুনে লাইসেন্স পায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি)। আর ২০০৭ সালের ১০ জুলাই মাত্র একটি বিমান দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এর কয়েকমাস পর ২০০৮ সালে আরো একটি বিমান কেনা হয় এবং পর্যায়ক্রমে ১০টি বিমান ইউনাইটেড এয়ারের বহরে যুক্ত হয়। বিশ্বের ১৩টি দেশে নিজস্ব নামে ইউনাইটেডের বিমান চলাচল করে। 

তিনি জানান, ২০১০ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হয়। তালিকাভুক্তির পর থেকে বেশ কয়েকবছর কোম্পানির বিজনেস গ্রোথ-গ্রাহক সন্তুষ্টি ও  ডিভিডেন্ড হিসট্রি খুবই সন্তুষজনক ছিল। দেশ-বিদেশে কোম্পানিটির অনেক সুনামও ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এই সুনামই সরকারে থাকা কারো কারো কাছে হিংসার কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল। আর তারা কোম্পানিটিকে নিযে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে সু-প্রতিষ্ঠিত এবং দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত প্রথম ও একমাত্র এয়ারলাইনটি ধ্বংসের পথে যেতে বাধ্য হলো।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ বলেন, ওইসময় শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে শুরু করে বিএসইসির অনেকের কাছে গিয়েছিলাম। নীতি সহায়তা দিতে তাদের বহুবার অনুরোধ করেছিলাম। তারা কেউ আমার কথাগুলো বুঝতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদ থেকেও আমাকে বিতাড়িত করা হয়েছে। 
কেন তারা সে সময় আমাকে অসহযোগিতা করেছে, তা অনেক পরে বুঝতে পেরেছি।

বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস ও তার উপদেষ্টা পরিষদকে অভিনন্দন জানিয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি)'র সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ইউনাইটেড এয়ারের বিমানগুলো দেশের সম্পদ। বিগত সরকারের অনেক ভুল সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আমি দেশের সম্পদগুলো ব্যবহার করে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে দেশকে রাজস্ব দিতে চাই। এজন্য সরকারের নীতি সহযোগিতা বিশেষভাবে প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি- এয়ারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তারা বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক স্বার্থে নতুন সরকারকে এটি রক্ষার অনুরোধ জানাই। 

কোম্পানিটির প্রধান এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্তির পরে ২০১২ সালে বিএসইসি নির্দেশনা দেয়- কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তাদের ধারণ করতে হবে এবং মূল উদ্যোক্তদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক। নতুন নির্দেশনার বিরুপ প্রভাব পুরো পুঁজিবাজারে পড়তে শুরু করে। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে যেতে থাকেন। সেই সময়ে উদ্যোক্তাদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ নিয়ে সরকারের শীর্ষমহলে বৈঠক করেছি, মামলাও ঠুকেছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত খুব কম  এয়ার কোম্পানি ১০টি এয়ারবাস দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পেরেচে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিমানেরও ১০টি এয়ার ছিলনা; যা ইউনাইটেড এয়ারের ছিল। আর এটি ছিল হাসিনা সরকারের প্রেতাত্নাদের অসন্তোষের মূল কারণ। অন্যদিকে, আমি রাজনীতি বিমুখ মানুষ; যার শাস্তি হিসেবে বন্ধ হয়েছে এ কোম্পানি।’ 

সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কোম্পানির উদ্যোক্তা হিসেবে আমার এখনও ২ শতাংশের অধিক শেয়ার রয়েছে। আমি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবুও নানান অভিযোগ তুলে স্বেচ্ছাচারি মনোভাব নিয়ে আমাকে হেনস্থ করা হয়েছে। বোর্ডের অনান্য সদস্যদেরও ডিসকোয়ালিফাই করা হয়েছে। পরবর্তীতে অপেশাদার লোকদেরকে প্রখ্যাত এই বিমান কোম্পানিটির বোর্ডে আনা হয়েছে আর কোম্পানিটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

ক্যাপ্টেন তাসবির বলেন, বিএসইসি কর্তৃক মনোনীত নতুন পর্ষদের সময় অনেক পার করেছে, একটি বিমানও অপারেশনে নিতে পারেনি। পারবে কি করে- অভিজ্ঞতা থাকা চাই। এখন শেয়ার বিক্রি করে শুধুই বেতন নিচ্ছে। শুনতে পাচ্ছি- দেশের হাজার কোটি টাকার সম্পদ এসব এয়ারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তারা বিক্রি করে দিচ্ছে।

তাই বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক স্বার্থে নতুন সরকারকে এটি রক্ষার অনুরোধ জানাই। 

ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ বলেন, এই কোম্পানিতে ১ লাখ ৬০ হাজার বিনিয়োগকারী রয়েছেন। দেশি-বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক সবধরনের বিনিয়োগকারী এই কোম্পানির শেয়ার ধরে রেখেছেন। তাদের স্বার্থে আমি সরকারের কাছে প্রার্থনা করছি- দেশের সম্পদ রক্ষায় সবার সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতায় নুতন করে আবারও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ শুরু করতে চাই। 

বিনিয়োগবার্তা/শামীম//
 


Comment As:

Comment (0)