BSEC CHAIRMAN 1

সাক্ষাৎকারে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

‘সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়েই এটিবি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে’

‘আসলে একটা দেশে মানুষ যেকোন বিনিয়োগে তখনই আগ্রহী হয় যখন সেই বিনিয়োগটায় একটা এক্সিট প্লান থাকে। যে কাউকে যদি কেউ বলে যে আপনি এখানে বিনিয়োগ করেন, কিন্তু সেখান থেকে কখন কবে বের হতে পারবেন এটা আমি জানি না, তখন সেখানে কেউ তার সঞ্চয় নিয়ে আসবে না। ব্যাংকিং সেক্টরে টাকা জমা দেয়া যায়, তোলা যায়, এফডিআর করা যায়, ভাঙ্গানো যায়- এজন্য এসব ক্ষেত্রে সবাই বিনিয়োগ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। কিন্তু আমাদের অনেক ব্যবসা আছে যাদেরকে শর্ট্ টার্ম, লং টার্ম, মিডিয়াম টার্মের ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য ক্যাপিটাল মার্কেটে আসতে হয় কিন্তু তারা সেখান থেকে আর বেরোতে পারেনা। সেজন্য কি করা যায়-তা নিয়ে আমরা অনেক দিন ধরেই কাজ করে আসছিলাম। আর সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

বিনিয়োগবার্তা’র সঙ্গে একান্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিনিয়োগবার্তা সম্পাদক শামীম-আল-মাসুদ। আর সহযোগিতায় ছিলেন স্টাফ রিপোর্টার কামরুল হুদা কায়েস। আর সাক্ষাৎকারটি প্রস্তুত করেছেন দেওয়ান ফজলে এলাহী।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এটিবি চালু করার লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষকে সবরকম ফাইন্যান্সিং থেকে একটা এক্সিট প্লান রাখার সুযোগ দেওয়া। এতদিন সেই সুযোগের একটা অভাব ছিল বলেই বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায় মানুষ বিনিয়োগ করত না। আর বিনিয়োগ যারা করতো তারাও আটকে যেত এবং তাদের প্রয়োজনে টাকা আর ফেরত পেত না। এখন ইচ্ছা করলে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের মাধ্যমে যে কেউ লিস্টেড হয়ে অন্যের কাছে তার কোম্পানির একটা অংশ বা পুরোটাই বেচা-কেনার কাজটি করতে পারবে। আর এই এক্সিট প্লানটা থাকলে যে কোন দেশি-বিদেশি ইনভেস্টর এখানে বিনিয়োগে আসবে্। এখন এই বোর্ডটি চালুর ফলে এদের বিনিয়োগ পাওয়া এবং বিনিয়োগ করার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে- এতে অনেক ছোট-বড় ফ্যাক্টরি বা কোম্পানি বা ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান যাই হোক তারা এখন বেনিফিটেড হবে বলে আমি মনে করি।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এটাতো শুধু পুঁজিবাজারের জন্য বললে ছোট হবে, এটি সার্বিক অর্থনীতির জন্য করা হয়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য করা এই কারণে যে, সারা পৃথিবীতে যেসব বড় বড় ক্যাপিটাল মার্কেট রয়েছে, তাদের প্রায় সবখানে এ ধরনের মার্কেট চালু রয়েছে। আপনারা খেয়াল করবেন গত কয়েক দিনে আমেরিকায় দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে, আর সেটার কারণে স্টক মার্কেট সবচেয়ে বেশি ইফেক্টেড হয়েছে। এদিকে সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইচের মতো একটা রেপুটেড ব্যাংক, তারও কিছু একটা উলটপালট হওয়ার কারনে শেয়ারপ্রাইজ ব্যাপকভাবে ডাউন। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, পৃথিবীতে যেখানেই যাই হোক, সেটা রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক হোক তার ইমপ্যাক্ট স্টক মার্কেটে এসে পড়ে। তিনি বলেন, এই মার্কেটটা অনেক সেনসিটিভ। এই বাজারে  অনেকগুলো জিনিস রয়েছে, এতদিন যেগুলোর অভাব বোধ করতাম। এই এটিবি মার্কেটও কিন্তু এরকম একটা ছিল- যেটা আমরা অভাব বোধ করতাম।

আমরা এখন নতুন নতুন ডেরিভেটিভস, নতুন নতুন ডেট ইন্সট্রুমেন্ট, নতুন নতুন মার্কেট বা নতুন নতুন উইন্ডোগুলো ওপেন করতে পারছি। এরফলে ক্যাপিটাল মার্কেটের যে আসল চেহারা সেটা এখন আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে আসছে। 

তিনি বলেন, রোডশোগুলো করার সময় মানুষ আমাদেরকে বলত যে আপনি কেন এটা করেন, এটাতো আপনার কাজ না, এটা করলে কি লাভ হবে। আমি বলেছিলাম যে, এজন্য একটু সময় দিন, দেখেন রেজাল্ট পাবেন। আজকেতো আমরা দেখতে পাচ্ছি এসব রোডশোর ইতিবাচক প্রভাব। পৃথিবীর সব দেশ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক যে কথাবার্তা ছিল তা থেকে সরে গিয়ে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে।

 

সব জায়গায় বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ এবং ব্যবসা করার একটা উৎসাহ তৈরি হয়েছে, সবাই এখন বাংলাদেশমূখি। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব্-পশ্চিম ও মধ্যপ্রাচ্যসহ  বিনিয়োগ করার মত অবস্থায় যত দেশ আছে, সবাই এখন বাংলাদেশমূখী। 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অ্ধ্যাপক বলেন, সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমরা যে কাতার সফর করে আসলাম সেখানেও আমরা অনেক ইতিবাচক বিষয়াদি লক্ষ্য করেছি। সুতরাং কোন কিছু করলে রেজাল্ট আসতে একটু সময় লাগে, আমাদেরকে সেই সময়টুকু দিতে হবে। আপনারা দেখবেন আগামী ৫ বছর বাংলাদেশে কিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আসে, জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রজেক্ট বাড়ে, তখনই বুঝবেন যে কোনো কিছু করলে রেজাল্ট সাথে সাথে আসেনা, এতে ২/৩ বছর বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি সময় লাগে। 

 

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এখন কিন্তু আমরা এটিবি মার্কেটের কি প্রয়োজন বুঝতে পারছিনা। কিন্তু ১/২ বছর পরে ঠিকই বুঝা যাবে যে, এটার মাধ্যমে কত বড় বড় ট্রানজেকশন হয়, কত ব্যবসা-বাণিজ্যের হাতবদল হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন,  রোডশোগুলার ফলোআপতো আমরা রেগুলেটর বা সরকার করবে না। আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করবেন আমাদের সাথে সবসময় ১০/২০/২৫ জন ব্যবসায়ী এবং ইন্টারমেডিয়ারিজরা যায়। আমাদের যখন মাঠে ঘাটে যখন কেউ জিজ্ঞেস করে যে, এই ব্যাপারে আমরা কি করতে পারি- তখন আমরা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেই।  তখন তারা ওদের সাথে যোগাযোগ করে এবং ইন্টারমিডিয়ারিজরা তাদের সাথে ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে।  অনেক এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও অনেক কোম্পানি দেশ-বিদেশের লোকদের সাথে রোডশোর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে গেছে।

আমার জানামতে, বিভিন্ন দেশ ও ব্যবসায়িদের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে অনেক কাজ শুরু হয়ে গেছে। প্রায়ই আমার সাথে তারা তাদের নতুন বিদেশী  বন্ধুদের দেখা করাতে নিয়ে আসে- তখন বুঝতে পারি যে, আমাদের রোশোতেই তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। এখন তারা বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ দেখতে ও বুঝতে আসছে। আমরা বুঝতে পারি সামনে তাদের মধ্যে জয়েন্ট ভেঞ্চার বা ব্যবসায়িক পার্টনারশীপ প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে।

আমাদের এটিবি বোর্ডে যেসমস্ত কোম্পানিগুলো লিস্টেড হবে ও এখানে যারা ইনভেস্ট করবে তাদের উদ্দেশ্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, অর্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একটি খুবই চমৎকার উদ্যোগ। এটি সর্বাধুনিক ও উন্নত একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ডিএসই ম্যানেজমেন্ট একটা ভাল এফিশিয়েন্সি নিয়ে এই বোর্ডকে আরও বিনিয়োগবান্ধব করতে কাজ করছে।

এই বোর্ডের মাধ্যমে যখন, যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবেই তাদের শেয়ার মালিকানা হস্তান্তর করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে তাদেরকে আর এনলিস্টমেন্ট বা আইপিও করতে হচ্ছে না, যেকোনো পর্যায়ে যে কোনো কোম্পানি এই বোর্ডটাকে ব্যবহার করতে পারছে। তাই এর সুযোগ নিয়ে যাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন তারা বিনিয়োগকারীদের সাথে লেনদেন করতে পারেন, যিনি তার কোম্পানি আর চালাতে পারছেন না - ম্যানেজমেন্টের সমস্যা, ক্যাপিটালের সমস্যা, নানা কারণে বন্ধ হওয়ার আগে মালিকানা কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারে, কাউকে পুরা শেয়ার দিতে পারছেন না, খন্ডিত অংশ সেটাও দিতে পারেন।

তিনি বলেন, এই বোর্ড চালুর ফলে অনেক অপরচ্যুনিটি এখন ওপেন হয়ে গেছে। সুতরাং কখনও অর্থের দরকার, কখনও মালিকানা পরিবর্তন দরকার, কখনও এক্সিট দরকার- এরকম অনেক সল্যুশন এখন এই মার্কেটের মাধ্যমে পাবেন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা।

 

তিনি বলেন, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান আপনারা নতুন এই প্লাটফর্মে আসুন, নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও প্রসারে এই বোর্ডকে বেছে নিন।

 

বিনিয়োগবার্তা/কেএইচকে/ডিএফই/এসএএম//
 


Comment As:

Comment (0)