শাহনেওয়াজ মজুমদার

বিনিয়োগ শিক্ষা পর্ব-১

শেয়ারবাজারে কাঙ্খিত মুনাফা পেতে কার্যকরী বিনিয়োগ পরিকল্পনা থাকা জরুরী

মোঃ শাহনেওয়াজ মজুমদারঃ বিনিয়োগ পরিকল্পনার সারমর্ম হলো -আপনার  অর্থ সম্পদে বা এমন জিনিসগুলোতে রাখার পরিকল্পনা, যা আপনি মনে করেন যে মূল্য বাড়বে বা ভবিষ্যতে দুর্দান্ত বৃদ্ধি পাবে। আমরা যখন সঞ্চয় করি তা শুধু খারাপ সময়ের মোকাবেলার জন্যই না, ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার জন্যও করি। তাই আমরা যখন কোন বিনিয়োগ পরিকল্পনা করি -তা অবশ্যই ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের নির্দিষ্ট লক্ষ্য, স্বপ্ন, আকাংখা ইচ্ছের তালিকা থাকে। বিনিয়োগের সূত্র জানা থাকলে তবেই আমরা আমাদের ভবিষ্যৎতের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে পারবো। বিনিয়োগের পরিকল্পনা কোন কাজের অর্ধেক। ব্যবসা শুরু করতে হলে অর্থাৎ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করার আগে দরকার একটি কার্যকরী বিনিয়োগের পরিকল্পনা। তাই ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে চাইলে দরকার একটি সঠিক পরিকল্পনা। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির বিনিয়োগ শুরু করার আগে ব্যবসা পরিকল্পনা তথা বিনিয়োগের পরিকল্পনা কি জানা দরকার। বিনিয়োগ পরিকল্পনা আর্থিক পরিকল্পনার একটি মূল উপাদান। একটি ছাড়া অপরটি থাকা অসম্ভব।

এরপর আপনাকে কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে এবং সংজ্ঞা অর্জনের জন্য সর্বোত্তম বিনিয়োগের বিকল্পগুলি নির্বাচন করবেন। একটি শেয়ার মার্কেট বিনিয়োগ পরিকল্পনা আপনি আপনার প্রয়োজন পরিকল্পনার ভিত্তিতে যতটা ভালভাবে তৈরি করবেন তার উপর নির্ভর করবে সফলতার হার। ব্যক্তিগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরি এবং তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কখনই দেরি করতে হয় না, কারন তা ভবিষ্যতের জন্য নীড়ে ডিম তৈরি শুরু করে দেয়।

আপনার বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি বুঝুন। আপনার বিনিয়োগের জন্য কত ডিসপোজেবল আয়ের ব্যবস্থা রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন হন। আপনার বাজেটটি একবার দেখুন এবং নির্ধারণ করুন আপনার মাসিক ব্যয়ের পরে বিনিয়োগের জন্য এবং আপনার জন্য তিন মাসের ব্যয়ের সমতুল্য জরুরি তহবিল আলাদা রাখার পরে কতটা অর্থ অবশিষ্ট রয়েছে তা স্থির করুন। তা হবে আপনার বিনিয়োগযোগ্য তাহবিল।

 তাইতো বিশ্ববিখ্যাত ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট  বলেছেন, ‘কখনোই আয়ের একমাত্র উৎসের উপর নির্ভর করবেন না। বিনিয়োগের মাধ্যমে আরেকটি উৎস তৈরী করুন।’  তিনি আরও বলেছেন, ‘সফল বিনিয়োগের জন্য দরকার সময়, শৃঙ্খলা, আর ধৈর্য্য।’

আমরা নিন্মোক্ত প্রক্রিয়াগুলো অনুসরন করলে অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের স্টক নির্বাচন করতে পারবোঃ

১। স্টকের ঝুঁকি মূল্যায়নঃ আমরা যে সকল ষ্টকে বিনিয়োগ করবো সেই কোম্পানিগুলির তালিকা তৈরি করে নিচের কিছু বিষয় মূল্যায়ন করলে আমরা স্টকের ঝুঁকি বুঝতে পারবো। কোম্পানির মালিকানা, রেজিস্ট্রেশন, পরিচালকদের জীবনী, পণ্য, মার্কেট শেয়ার ইত্যাদি। ঝুঁকি বিশ্লেষণ বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য বিনিয়োগের সুযোগের ঝুঁকি নির্ধারণ করতে ব্যবহার করতে পারে- এমন বিভিন্ন পদ্ধতির সরবরাহ করে। বিনিয়োগের মূল্যায়ন করার সময় বিনিয়োগকারী দুটি ধরণের ঝুঁকি বিশ্লেষণ প্রয়োগ করতে পারেন তা হলো- পরিমাণগত বিশ্লেষণ এবং গুণগত বিশ্লেষণ।

 

২। সম্পদ বরাদ্দঃ কৌশলগত সম্পদ বরাদ্দ একটি পোর্টফোলিও বিল্ডিং- যা একটি ঐতিহ্যগত পদ্ধতি। আপনি কোন স্টকে কতো পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করবেন তা পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে। অনেকটা বেসিক গতিশীল সম্পদ বরাদ্দের মতো, কৌশলগত সম্পদ বরাদ্দের জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রতিটি শ্রেণির বিনিয়োগের জন্য আদর্শ অনুপাত স্থাপন করা এবং পর্যায়ক্রমে তাদের পোর্টফোলিও ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন। আমরা জানি শক্ত Fundamental শেয়ারে তহবিলের ৬০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে। বাকি অর্থ দিয়ে বর্তমান ট্রেন্ডযুক্ত শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। শক্ত Fundamental ওয়ালা শেয়ারগুলো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হতে হবে। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, উদাহরণস্বরূপ, আপনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে আপনার তহবিলের ৪০ শতাংশ, ঔষধ শিল্পে ২০ শতাংশ, ইন্সুরেন্স খাতে ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করবেন। তবে মনে রাখবেন, বিনিয়োগকারীরা কীভাবে তাদের মূল কৌশলগুলির অংশ হিসেবে সম্পদ বরাদ্দ ব্যবহার করতে পারেন সে সম্পর্কে এটি কেবলমাত্র সাধারণ নির্দেশিকা। তাই আপনি  আপনার  বিনিয়োগের জন্য আদর্শ অনুপাত তৈরি করুন এবং আপনার কৌশলটির ত্রূটিগুলোর সংশোধন করে একটি ঝুঁকিমুক্ত সম্পদ বরাদ্দ  প্রক্রিয়া তৈরি করুন।

 

৩। স্টক নির্বাচনঃ আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে আপনি আপনার সঞ্চিত অর্থ শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি নির্ভরযোগ্য স্টক নির্বাচন করতে হবে। আপনার মূল লক্ষ্য হল একটি মানসম্মত লাভজনক স্টক খুঁজে বের করা -যা আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে মুনাফা ভোগ করার সুযোগ দিবে। শেয়ারে বিনিয়োগ একটি সাধারণ লেনদেন বা ক্রয়-বিক্রয় নয়। শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি একটি কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা লাভ করেন এবং কোম্পানির পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোট করার অধিকার পেয়ে থাকেন। তাই যেকোন কোম্পানির শেয়ারে আপনার সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের আগে স্টকটির কার্যকারিতা এবং লাভজনকতা যাচাইয়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি।

আপনার কষ্টে অর্জিত অর্থ যেকোনো কোম্পানির স্টকে বিনিয়োগের আগে গুরুত্বপূর্ণ ৭টি বিষয় সম্পর্কে আপনার অবশ্যই জানা উচিত। সেগুলো হলঃ

•             কোম্পানির আয় প্রবৃদ্ধি

•             প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর তুলনায় টিকে থাকার ক্ষমতা

•             ঋণ অনুপাত (Debt-to-Equity ratio)

•             মূল্যআয় অনুপাত (Price-Earnings ratio বা P/E ratio)

•             কোম্পানিটির লভ্যাংশ বণ্টন পদ্ধতি

•             দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ

•             দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার মত ক্ষমতা স্থিতিশীলতা

 

৪। স্টকগুলো পর্যবেক্ষণ পুনঃভারসাম্যঃ আমাদের মনে হতে পারে যে বিনিয়োগের পোর্টফোলিওতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হলো এমন এক প্রক্রিয়া  'কর এবং ভুলে যাও' এমন ক্ষেত্রেও পর্যবেক্ষণ বা পুনরায় মূল্যায়নের প্রয়োজন হয়। আপনার বিনিয়োগগুলি অযত্নে রেখে যাওয়া একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পদ্ধতির-যা আপনাকে খুব বেশি ঝুঁকির সামনে ফেলে। আপনার পোর্টফোলিওটির পর্যায়ক্রমিক পুনর্বিবেচনা, কাঙ্ক্ষিত অনুপাতে সম্পদ ও ঝুঁকির বাইরে ভারসাম্য বজায় রেখে এটি পুনরায় ভারসাম্যকরন করে একটি সহজ পোর্টফোলিও তৈরি করা যেতেপারে।

লেখকঃ কলামিস্ট।

ইমেইলঃ mshahnewazmazumder@gmail.com

(ডিএফই/এসএএম/০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১)


Comment As:

Comment (0)