মিহির

জমে উঠছে ঈদের বাজার

ড: মিহির কুমার রায়: রমজান মাস পবিত্র, বরকতময়, সংযম ও ধৈর্যের বার্তাবাহী একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাস সিয়াম সাধনার মাস, আত্মশুদ্ধির মাস ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অধীর আগ্রহে এ মাসটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এ বছর পহেলা মার্চ থেকে মাহে রমজান শুরু হয়েছে, এমন একটি সময়ে যখন প্রকৃতিতে চলছে বসন্ত কাল। যা ঈদের আনন্দকে অনেক উচু মাত্রায় নিয়ে চলছে।

যদি সব ঠিক থাকে তবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ মার্চ ঈদ উদযাপিত হবে। মাহে রমজানের ফজিলতের কথা কম-বেশি আমরা সবাই জানি।

আবার অন্যদিকে দেখা যায়, রমজান মাসটা যেন খাদ্যোৎসবের মাস যেখানে রোজাদাররা বেশি বেশি খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত থাকেন।

দাম যতই বাড়ুক না কেন, বেশি দাম দিয়ে হলেও তা কিনতে হবে। ইফতার বা সেহরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার না-থাকলে রোজা যেন পূর্ণতা পায় না।

কেউ কেউ রমজান মাসের কথা চিন্তা করে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ঘরে মজুদ করতে থাকে।

এবার ঈদ সামনে রেখে শুরু হয় কেনাকাটার ধুম, রমজানের প্রকৃত ফজিলত নিয়ে তেমনভাবে ভাবনার বিষয় কম দেখা যায়।

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর এগিয়ে আসছে। প্রতি বছর এ আনন্দে সব পরিবারেই থাকে বাড়তি কেনাকাটার চাপ। আবার রমজান জুড়ে সেহরি ও ইফতার বাবদও অতিরিক্ত ব্যয় হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে এবার রোজায় ভোগব্যয়সহ ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটায় সারা দেশে মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোর ২৫ লাখ দোকানে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা বাণিজ্যের প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

আবার ঈদকে কেন্দ্র করে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিনে ২০ হাজার ২৫২ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে। ফলে রেমিট্যান্সে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। ঈদুল ফিতরে রেমিট্যান্স ও শহরের মানুষ গ্রামমুখী হওয়ায় গ্রামীণ হাট-বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়েছে।

ঈদের সময় আর্থিক মানদণ্ডে অর্থনীতিতে কত টাকা প্রবাহিত হয়, তা নিয়ে সরকারিভাবে কোনো তথ্য নেই। তবে বেসরকারি গবেষণা অনুযায়ী ঈদ অর্থনীতিতে দেড় লাখ কোটি টাকার অতিরিক্ত লেনদেন হয়। এ টাকার বড় অংশই যায় গ্রামে। এ সময় নিম্ন আয়ের মানুষের হাতেও টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। এ সময় তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে।

সেক্ষেত্রে বাড়তি টাকা প্রবাহের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়। ফলে ঈদ অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে। তবে মানুষের আয়ের বেশির ভাগ খরচ হয়ে যায় দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে। সে কারণে ঈদে বিক্রি বাড়লেও তার হার গতবারের তুলনায় কম। উচ্চ মূল্যস্ফীতিই তার অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি পরিচালিত সমীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঈদ কেন্দ্র করে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়ে আসছে।

তবে এ বছর মূল্যস্ফীতির কারণে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কেনাকাটা কিছু কম হচ্ছে।

এদিকে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিনে ব্যাংক মাধ্যমে ১৬৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আয় দেশে এসেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ২০ হাজার ২৫২ কোটি টাকার সমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে ছয় কোটি ডলারের রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। ব্যাংক মাধ্যমে প্রথম সপ্তাহে ৮১ কোটি ও দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।

রমজান এলে এ দেশের মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের প্রস্ততি তৈরি হয়, তারা এ পবিত্র মাসে আধ্যাত্মিকভাবে পুণ্য অর্জনের জন্য প্রস্ততি নেন, আবার কেউ প্রস্তুতি নেন সেহরি-ইফতার নানা পরিকল্পনায় উদ্যাপনের জন্য।

যেমন ঈদ উপলক্ষে অনেক প্রতিঠান ভোগ্য পণ্যেও মূল্যে অনেক ছার দিয়ে থাকে। পবিত্র ইসলামে অতিরিক্ত মূল্য আদায় কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ব্যবসায়ীরা যদি সীমাতিরিক্ত মূল্য আদায় করে এ সুযোগে যে, ক্রেতা পণ্যের মূল্য জানে না; তাহলে অতিরিক্ত পরিমাণের মূল্য সুদ হিসেবে গণ্য হবে।’ আবার মজুতদারি সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘মজুতদার খুব নিকৃষ্টতম ব্যক্তি।

যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায়, তবে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে, আর দাম বেড়ে গেলে আনন্দিত হয়।’ (মেশকাত)। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের অমীয় বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে মাহে রমজান। রমজান ও ঈদ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিশ্বের সব মুসলমানের ধারণায় এটি সুদৃঢ় যে, পবিত্র কোরআনের প্রথম ও শেষ আয়াত নাজিল হয় যথাক্রমে ৬১০ ও ৬৩২ সালে এবং দীর্ঘ তেইশ বছরের পরিক্রমায় এর পরিপূর্ণতা দৃশ্যমান হয়।

অবাধ মুক্ত বিশ্বাস ও যথার্থ জীবন-দর্শন উন্মোচন করে হাজার বছরের সংস্কার এবং ধর্মান্ধতার বৃত্ত ভেঙে পবিত্র কোরআন মানব জগৎকে করেছে অপরিমেয় আলোকবর্তিকায় উদ্ভাসিত। ইমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত- এই পাঁচটি পবিত্র ইসলামের মূল ভিত্তি।

এর মধ্যেই নামাজ-রোজা-জাকাতকে ঘিরে যে মাসটি সবচেয়ে সমাদৃত, সে মাসকেই যথাযোগ্য মর্যাদাসীন করার উদ্দেশ্যে মাস শেষে সর্বজনীন ঈদ বা সর্বোচ্চ উৎসবের দিন ধার্য করা হয়। পবিত্র রমজান মাসে ধার্মিক মুসলমান আত্মিক উৎকর্ষ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য হিসেবে রোজা আদায় করেন। আবার এই মাসেই ইমাম সাহেবরা নামাজ পরিচালনা করেও একটা অংকের টাকা উপার্জনের পথ খুজে পান।

বিভিন্ন খাবারও ঈদের কেনাকাটায় গুরুত্ব পায়। পোশাকের দোকানগুলোতে পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি, টি-শার্ট এবং নারীদের শাড়ি, থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, কুর্তা এবং শিশুদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, গেঞ্জিসেটসহ আধুনিক ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী এবং গহনার দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন।

এ ছাড়া সিল্ক, জামদানি, কাতান, কাশ্মীরি কাজ করা শাড়ি, সুতি শাড়ি ও লেহেঙ্গা, পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, টি-শার্ট এবং শিশুদের জন্য নানা রঙের আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বেশি। গরমকে প্রাধান্য দিয়ে ক্রেতারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুতি কাপড় কিনছেন। নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট এবং নূরজাহান ম্যানশনে মহিলা ক্রেতার পরিমাণ বেশি দেখা গেছে।

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট এবং গ্লোব শপিং সেন্টারের শার্ট-প্যান্টের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি ছিল তরুণ ক্রেতাদের। এ ছাড়া সাইন্সল্যাবের বাইতুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে পাঞ্জাবি-পায়জামার দোকান এবং এলিফেন্ট রোডের জুতার দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে শাড়ি কিনতে আসা তানিয়া খাতুন বলেন, যেহেতু বাচ্চার স্কুল বন্ধ সেজন্য শেষ সময়ে ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাব। তাই পরিবারের সদস্যদের জন্য কাপড় কেনাকাটা করছি।

ব্যবসায়ীরা দাম কিছুটা বেশিই চাচ্ছেন। দামাদামি করে নিতে হচ্ছে। তা ছাড়া এবার সবাই রোজা রেখে কষ্ট হলেও দিনের বেলাতেই কেনাকাটা শেষ করতে চাচ্ছেন। সেজন্য ভিড়ও একটু বেশি।

ঈদ উপলক্ষে শপিংমলগুলোতে দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের অফার। ফুটপাতের বিক্রেতারা বলছেন, ফুটপাতে দোকান ভাড়া না থাকায় কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারেন তারা। অপেক্ষাকৃত কম দামে পণ্য পেয়ে ফুটপাতের মার্কেটে ভিড় করছেন অনেক ক্রেতা। ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে মিরপুরের বিভিন্ন মার্কেটেও। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাজমা আক্তার বলেন, ঈদের বাকি আর মাত্র কিছু দিন। মেয়েদের একটু আগেভাগেই কেনাকাটা করতে হয়। কারণ পোশাকগুলো আবার সেলাই করতে দিতে হয়।

তাই আগেই এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতদিন ক্রেতাদের তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। ঈদে ক্রেতাদের চাপ ১৪ রমজানের পর থেকে বেশি হয়। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এখনো বেচাবিক্রি কম।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মী রাফিউল হাসান বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার আগে থেকেই কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় দেখতে পাচ্ছি। সকালে আউটলেট খোলার পর থেকে প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে। দুপুরের পর থেকে সেটি আরও বেড়ে যাচ্ছে।

পাঞ্জাবি, শাড়ি, ওয়ান পিস ও বাচ্চাদের পোশাকের পাশাপাশি বিভিন্ন কসমেটিকস আইটেম, গহনা, লেডিস ব্যাগ-পার্টস অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইনেও ঈদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। যেসব বড় প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ক্রেতাগোষ্ঠী রয়েছে, তারাই অনলাইনে ভালো বিক্রি করতে পারছে। অন্যরা ফেসবুকে বিক্রির চেষ্টা করছে ।

ইফতার কেন্দ্রীক বিশেষ ধরনের যে সকল উদ্যোক্তা এরই মধ্যে সারা দেশের রাজধানী ঢাকা সহ জেলা উপজেলায় ছড়িয়ে রয়েছে তারা কি পরিমান রোজার মাসজুড়ে ব্যবসা করছে এবং টাকায় এর মূল্য কত এনিয়ে তেমন তথ্য উপাত্ত পাওয়া না গেলেও পরিমান যে বিশাল অংকের টাকা এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই যা দেশের জিডিপিতে মূল্যসংযোজন করছে।

আবার যারা পারিবারিক পর্যায়ে ঈফতারের ব্যবস্থা করে থাকে তাদেরকেও একিভাবে বাজারের উপর নির্ভর হতে হয়। যার বেশীরভাগ উপকরন আসে কৃষিখাত থেকে যার উৎপাদনে সরকার বাজেটের আওতায় কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকে যাতে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে।

তারপরও এই পবিত্র রমজান মাসের জন্য সরকারের কৃষি পণ্য/খাদ্য সরবরাহে বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা করে থাকে বিশেষত: মধ্যবিত্ত/দরিদ্র্য শ্রেণীর কথা বিবেচনায় রেখে। যেমন রমজানের আগে থেকেই সরকার টিসিবির কার্যক্রম কিছুটা বাড়িয়েছে, সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ট্রাকে করে নিত্যপণ্য বিক্রি করা হচ্ছে এবং এসব পণ্য কিনতে ট্রাকের পেছনে লোকজনের দীর্ঘ সারি লক্ষ করা যাচ্ছে যা থেকে অনুমেয় নিম্ন আয়ের মানুষগুলো আসলে কতটা কষ্টে আছে।

দামজনিত বহিস্থ অভিঘাত মোকাবেলার আরেকটি উপায় হলো কর-শুল্ক কাঠামোর সমন্বয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, চিনি থেকে শুরু করে ভোজ্যতেল জাত খাদ্য ও কৃষি খাতের সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে।

বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী মূল্য মানেই এসব পণ্য বাড়তি দামেই কিনতে হবে বাংলাদেশকে। মানুষের জীবনধারণ, কৃষি, অবকাঠামো, শিল্পসহ পুরো অর্থনীতিতে এর প্রভাব অনেক। আমদানি শুল্ক কমানো হলে খরচ কম পড়বে এবং স্থানীয় বাজারেও দাম কমে রাখা যাবে। এখন পর্যন্ত সরকার কেবল চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক সমন্বয়ের সময় এসেছে যা গ্রহন করা যেতে পারে যার সাথে ঈফতার সামগ্রী মূল্যেও কমবেশী হওয়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে।

উৎসবকেন্দ্রিক কেনাকাটার ব্যাপারটি যেন ঐতিহ্যের, সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। দিনে দিনে আর্থিক সক্ষমতা, ক্রয়সামর্থ্য বেড়ে যাওয়ায় উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারের সম্প্রসারণ ঘটেছে। তবে এ বছর বাংলা মাহে রমজান এবং বসন্ত আমাদের অর্থনীতিতে চাঙাভাব ধরে রাখার সুযোগ সৃষ্ঠি হয়েছে।

উৎসব খুব কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় তথা বসন্তের প্রভাব ফিরে এসেছে উৎসবকেন্দ্রিক বাজার। বাজারে চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী, পণ্যসামগ্রী সরবরাহকারি, প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে গেছে ইদানিং। জামাকাপড় পোশাক, শাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, কারখানা তাঁতি, বুননশিল্পী সবার মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য বিরাজ করছে এখন। ফলে গোটা অর্থনীতিতে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে ইতোমধ্যেই।

ঈদ উলক্ষে সেবা খাতগুলো রমরমা ব্যবসায় ব্যস্ত রয়েছে যেমন হোটেল, রেস্তোরা, যানবাহন, সিনেমা হল, মিষ্ঠির দোকান ও সর্বপরি পর্যটন শিল্প। ঐতিহ্যগতভাবে ঈদের ছুটিতে মানুষ শহর থেকে গ্রামে এবং গ্রাম থেকে শহরে ছুটে যায়। কারণ, এই সময়ে বেশ লম্বা ছুটি পাওয়া যায়, তাই তারা পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।

ভ্রমন পিপাসু মানুষদের শৈবাল দ্বীপ, সেন্ট মার্টিন, রামুর বৌদ্ধ মন্দির, হিমছড়ির ঝরনা, ইনানী সমুদ্রসৈকত, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ, টাঙ্গুয়ার হাওড়, টেকনাফ সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবুজ পাহাড়ী অঞ্চল দেখে কেউ কেউ আত্মভোলা হয়ে যায়।

আবার আমাদের দেশে অনেক ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্বিক স্থানও রয়েছে যেমন বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, ঢাকার লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলীর মাজার, রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর, কুষ্টিয়ার লালন সাঁইয়ের মাজার, রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি শুধু দেশীয় নয়, বরং বিদেশী পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিকটও সমানভাবে জনপ্রিয়। সর্বপরি বলা যায় ঈদ অর্থনীতি বাংলাদেশের জিডিপিতে একটি বড় অবদান রাখছে।

ঈদ উৎসব হউক সার্বজনীন ও আনন্দ মুখর। ঈদ বারে বারে আসুক আনন্দের বার্তা নিয়ে।

লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ, গবেষক, সাবেক ডীন ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্নিটি, ঢাকা।  

বিনিয়োগবার্তা/ডিএফই/এসএএম//


Comment As:

Comment (0)