undefined

বিনিয়োগ ভাবনা: বিলুপ্ত প্রায় হাওর সংস্কৃতি ও পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে করনীয়

ডঃ মিহির কুমার রায়: বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর সর্বশেষ চলচ্চিত্র ঘেটু পুত্র কমলা আমাদেরকে আবার নূতন করে হাওর সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সেই ঘেটু গানের দল হাওর অঞ্চলের একটি অতি পুরানো পালা গানের আসর ছিল, যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে, যদিও এর সাথে তলিয়ে যেতে বসেছে অন্যান্য পালা গান, যাত্রা পালা ইত্যাদি। এর একমাত্র কারণ অনাদর, অবহেলা ও আকাশ সংস্কৃতির ছোবল। এর মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের বিলুপ্ত প্রায় সকল সংস্কৃতি স্থাপনা ও উপাদান গুলোকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বল্প পরিসরে হলেও যা আমাদের ঐতিহ্যকে বাঁচানোর আরও একটি প্রয়াস। সে যাই হউক না কেন বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানে হাওর অঞ্চল এবং এর সংস্কৃতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এটি একটি বিচ্ছিন্ন দূর্গম অঞ্চল, যা দেশের সাতটি প্রশাসনিক জেলায় ও ৫৭টি উপজেলার মধ্যে বিস্তৃত যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ভাটী অঞ্চল। এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার বাহক হলো জমি আর পানি যা তাদের জীবনের পথকে ভিন্ন ভাবে পরিচালিত করে। কারণ এই হাওর অঞ্চলে বছরের সাত থেকে আট মাস পানির নীচে থাকে এবং বছরের বাকি চার মাস মোটামোটি আয় রোজগারে সারাটি বছর চলতে হয় সে এলাকার বসতিদের। হাওর মানুষের জীবন যাপন, পানীর ঢেউয়ের সাথে সংগ্রাম, হাওয়ের ঢেউ এর সাথে মানিয়ে নেয়া জীবন শৈল্পিকতা, হাওরের সংস্কৃতি গান, বিচিত্র পেশা, মৎস্য সম্পদ, সোনার ফসল, জলে ভাসা দ্বীপ ছোট ছোট গ্রাম, ঢেউয়ের গর্জন, হিজল করচের বাগ, চাঁদনি উদযাপন প্রভৃতি বাঙ্গালী জাতি সত্বার অংশ যার সাথে জড়িয়ে আছে হাওর সংস্কৃতির কালাকানন। আবার শত শত বছরের নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতির এক বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে হাওর পাড়ের মানুষের সুখ-দু:খের গল্প, আনন্দ-বেদনা ও জীবন যাপনের বর্ণিল উৎসব আয়োজন। বছরের সিংহভাগ সময় যেহেতু জলবেষ্টিত এবং বিভিন্ন ধরনের নৌকা যেমন পানশি, বাজিতপুরি, ডির্গি ইত্যাদি এই অঞ্চলের জনগণের যোগাযোগের বাহক তাই নৌকায় পাল তুলে মাঝি ভাটিয়ালি সুরে গান গেয়ে যায় তার জীবন চলার পাথেয় হিসাবে। এখানে উল্লেখ্য যে, বাউল, জারি-সারি, দেহতত্ত্ব, শরিয়াতি, মারফতি, মরমী লোকগীতি, কবি গানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় গানের বিশাল সম্ভার এই হাওর অঞ্চল। এই মাটিই জন্ম দিয়েছে মরমী গায়ক হাছন রাজা, দার্শনিক দেওয়ান আজরফ, বাউল সম্রাট আব্দুল করিম, রাধারমন, দুর্বিন শাহ, শেখ ভানু, রাম কানাই, উকিল মুন্সী, মুনসুর বয়াতি, আব্দুল কুদ্দুস বয়াতি, সীতা লং, শাহ্ রশিদ উদ্দিন, জালাল খাঁ ও শাহ করীম সহ মনিষীগণ। ঊনিশ শতকের শেষ ও বিংশ শতকের প্রথমার্ধে এই সকল গানের ব্যাপক প্রচলন ছিল এবং প্রায় বাড়ীতেই ছিল ঘেটু গানের দল যেখানে ছেলেদেরকে মেয়ে সাজিয়ে অভিনয়ে দাড়া করানো হতো। আরও মজার ব্যাপার ছিল যখন কোন দালানের ছাদে ঢালাই দেয়া হত তখন ঘেটু গানের তালে তালে নৃত্য ও বাদ্য বাজিয়ে নির্মাণ কর্মীরা তাদের কাজ সম্পন্ন করত অর্থাৎ নদীনালা, হাওর-বাওর, বিলিঝিল বেষ্টিত হাওর জনপদই ছিল এ সকল গানের মূল চারণ ভূমি। হাওর অঞ্চলে অনেক উপজাতির বাস যেমন মান্দি, হাজং, বানাই, কোচ, বর্মণ, খাসি, বিষ্ণু প্রিয়া, মণিপুরী, লেঙ্গাম, চাবাগানী, ত্রিপুরী ইত্যাদি যাদের প্রত্যেকের আলাদা একটি সত্বা ও সংস্কৃতি মন্ডিত যা ছিল খুবই সমৃদ্ধ যা অনেকাংশে বিলীন হয়ে গেছে কেবল সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত লোক বিজ্ঞানী ড: দীনেশ চন্দ্র সেনের ময়মনসিংহ গীতিকায় উত্তর-পূর্ব ময়মনসিংহ বিশেষত: নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের অতি সমৃদ্ধ লোক সংস্কৃতির পরিচয় মেলে যার উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে অনেক নাটক, গান ও কবিতা। এই অঞ্চলের ধামাইল গীত কর্তাল বাজিয়ে নাচতে নাচতে মহিলারা হিন্দু বিবাহের অনুষ্ঠানে গেয়ে বেড়াত এবং ডক যাত্রার পালা নৌকা বিলাস, নিমাই সন্যাস ইত্যাদি পালা গানগুলো নিত্যদিনের সাথী ছিল। ‘চাঁদনি রাতে যাইও তুমি ভাটির গাঙ্গে বাইয়া, বাটা ভরা পান দেব যাইও তুমি খাইয়া’ এই গানটি হাওর অঞ্চলে একটি আদি গান হিসাবে পরিচিত ছিল কিন্তু সময়ের আবর্তে নৌকায় পালের পরিবর্তে এসেছে মেশিন চালিত জলযান যার ফলে প্রাকৃতিক উপাদানে মহিমান্বিত বিষয়গুলো থেকে সমাজ দূরে চলে এসেছে অনেকখানি। হাওর অঞ্চলের সমাজ জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাস অয়সয় ও পরিবর্তিত এর সফল নাট্যরূপ আমাদের অনেক অনুপ্রাণিত করেছে বিশেষত: ছোট মির্জার আবির্ভাব সহ সমাজ তথা সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিচ্ছবিতে। হাওর অঞ্চলের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও অনেকটা গণমানুষের বাম ঘেষা চিন্তার বর্হি:প্রকাশ যা সে অঞ্চলের মানুষের উদারতা, সরলতা, জ্ঞান নির্ভর, গান বাজনা নির্ভর সংস্কৃতির পূর্বাভাস ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘মাছ আর ধান হাওরের প্রাণ’ এই শ্লোকটি এক সময় হাওরের মানুষ গর্ব করে বলত। হাওর যখন শুকিয়ে যায় তখন পানির সাথে বেড়ে উঠা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ গিয়ে জমা হয় জল মহালে যা এক অপরুপ দৃশ্য। হাওর পাখীর জন্য অভয়ারণ্য এলাকা যেখানে শীত মৌসুমে বিরল প্রজাতির অসংখ্য পাখীর দেখা মেলে বন্ধ জলাশয়ে এবং বন হিজল বাগে। বর্ষায় হিজল তমাল করচ ও নলখাগড়া বুকে অবাধ হাওরের ঢেউয়ে যেগে উঠে প্রেম খেলা যা সাহিত্য সংস্কৃতির এক অপার ভান্ডার। 

এই গুলোর সংরক্ষণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা যথার্থ নয়। কারণ হাওর উন্নয়ন বোর্ড কেবল পানির ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে কিন্তু মানবিক উন্নয়ন তথা সংস্কৃতির বিষয়গুলোর পুনরুদ্ধারে ব্যাপক ভিত্তিক গবেষণা ধর্মী প্রতিষ্ঠান (অনেকটা বিরিশিরি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী এর আদলে) প্রতিষ্ঠা করা এখন অনেকটা সময়ের দাবি বলে প্রতিয়মান। কারণ বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ও তার রচিত গান আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। এই গানগুলো প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার আওতায় আনা হলে হাওরের কৃষ্টি, সভ্যতা, জীবন চর্চা ও আদি বাঙ্গালীর চিরায়ত সংস্কৃতির সংরক্ষণ চর্চায় বিকাশ ঘটাবে যা দেশীয় সংস্কৃতির ভান্ডার পূরণে আরও একটি সংযোজন বলা যাবে। এতে করে এই পেশার সাথে জড়িত শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীদের মর্যাদা বাড়বে এবং অর্থনৈতিক ভাবে কিছুটা আয়ের পথ দেখবে। এই সম্ভাবনা গুলোর বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা সমিচীন হবে তা নিয়ে ভাবনার এটাই প্রকৃষ্ট সময় কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের বিগত চার দশকের পথ পরিক্রমায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি সহ আরও দু’জন রাষ্ট্রপতি এই হাওর অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন। তার অর্থ হলো দেশের জাতীয় রাজনীতিতে এই অঞ্চলের একটি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে যা অনায়াসে কাজে লাগিয়ে হাওর অঞ্চলের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করা সম্ভব। বর্তমান সরকার হাওর উন্নয়নে বিশ বছর মেয়াদি মহা পরিকল্পনার আওতায় সতেরটি বিষয়ে একশত তেপ্পান্নটি প্রকল্পে মোট ২৭ হাজার ৯৬৩ কোটি ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে যা তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে যার মধ্যে শিল্প সংস্কৃতির খাতও রয়েছে। বর্ণিত অবস্থায় হাওর সস্কৃতির উন্নয়নের জন্য সরকারের বিবেচ্য বিষয় হতে পারে এক: হাওর এলাকার হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সাহিত্য, জীবন, জীবিকার সংগ্রাম ইত্যাদির সংরক্ষণে একটি হাওর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা যায়। এখনও হাওর অঞ্চলে ঐতিহ্যের ধারক বাহক হিসাবে অনেক ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে যা মিডিয়ার বদৌলতে আমরা প্রায়ই অবলোকন করতে পারি সত্যি কিন্তু এগুলোর যে একটি প্রত্বতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে যার সংরক্ষণ জরুরী তা নিয়ে পরবর্তীতে আর কোন কিছুই চোখে পড়ে না। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান হলেও যা পরবর্তীতে অনেক দিন যাবৎ আর দেখা যায় না। বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর তাদের প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় হাওর সংস্কৃতির রক্ষনাবেক্ষণে হাওর কেন্দ্রিক মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে পারে; দ্বিতীয়ত: হাওর অঞ্চল তুলনামূলক বিচারে সরকারের প্রাধিকারের তালিকায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো ইত্যাদির ক্ষেত্রে। সম্প্রতি বিগত তিন বছরের অধিক সময় ধরে হাওর এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তনগর ট্রেন এবং অতি সম্প্রতি মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে আরও একটি আন্তনগর ট্রেন ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জ রুটে চালু করেছে যাকে বলা যায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। মোহনগঞ্জকে বলা হয় হাওর অঞ্চলের প্রবেশদ্বার যার বৃহত্তর সিলেট জেলায় একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক রয়েছে যার মধ্যে রেলওয়ে অন্যতম পরে আসে জলপথ। একিভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রে অবহেলিত অঞ্চলে হাওর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একটি সময়ের দাবি যার মাধ্যমে হাওর শিল্প সংস্কৃতির উপর গবেষণা ও শিক্ষা জোড়দার হবে যা ঐতিহ্যগত ভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ বলা যায়; তৃতীয়ত: অতি সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে সেমিনারে মত প্রকাশ করা হয় যে হাওর এলাকার পিছিয়ে পড়া দরিদ্র ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সকল পর্যায়ে সমন্বয় প্রয়োজন বিশেষত: বাস্তবায়নযোগ্য টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে। এরিমধ্যে পি.কে.এস.এফ হাওর এলাকায় প্রায় চার হাজার খানা “সমৃদ্ধি’ কর্মসূচীর আওতায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও আয় উপার্জনের উপর কার্য্যক্রম থাকলেও এলাকার সাংস্কৃতিক উপাদানের উপর তেমন কিছু পাওয়া যায় না যা এই কর্মসূচী গুলোর একটি দুর্বল দিক। বাংলাদেশে অঞ্চল ভিত্তিক অনেক আঞ্চলিক গান যেমন গম্ভিরা, পট ইত্যাদি নিয়ে অনেক উন্নয়ন যোগাযোগের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে তা প্রশংসনীয়। এরিমধ্যে হাওর অবকাঠামো ও জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং এস.সি.আর এম.পি এর কার্য্যক্রম কয়েক ধাপে শেষ হয়েছে। এই সকল প্রকল্পের দলিলে আয় বর্ধনমূল ও জীবন মান উন্নয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক উপাদান থাকা বাঞ্চনীয় যা হাওর অঞ্চলের বিলুপ্ত প্রায় গান, পালা, ঘেটু ইত্যাদি সহ সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো আবার তাদের পুরানো হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পরে। এরি মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস বয়াতি নেত্রকোনা অঞ্চলের অনেকগুলো গান ও পালাকে মিডিয়ার মাধ্যমে সকলের কাছ নিয়ে আসতে পেরেছে প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর বদৌলতে। এরকম এই সকল অঞ্চলে আরও বয়াতি সঠিক পৃষ্টপোষকতা পেলে হাওর এলাকার সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো জনসম্মুখে নিয়ে আসতে পারে; চতুর্থত, সম্প্রতি বেংগল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সিলেটে এক সপ্তাহ ব্যাপী সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল যা ছিল অত্যন্ত প্রানবন্ত ও উৎসব মুখর। এই সম্মেলনে হাওর এলাকার আঞ্চলিক গানগুলো আসর মাতিয়েছিল যা সিলেটের মানুষের মনে সারা জাগাতে সক্ষম হয়েছে। এই ধরনের আয়োজন হাওর সাংস্কৃতিক পুনরোজ্জীবনে শুভবার্তা বয়ে এনেছে এবং এর গতিধারা ধরে রাখার জন্য সিলেট ভিত্তিক সুশীল সমাজের ভুমিকা অগ্রগন্য; পঞ্চমত: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলার  ও উপজেলা নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ এই হাওরাঞ্চলের আয়তন প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। বিশাল এই হাওর বাংলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প সমৃদ্ধ হতে পারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগমে। টাঙ্গুয়ার হাওর প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। তবে এটি স্থানীয় মানুষের কাছে ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল’ নামে পরিচিত। সমগ্র হাওরাঞ্চল পর্যটকদের কাছে এক স্বপ্নের ঠিকানা জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময়তার বিচারে ট্যুরিজমে দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। জলের কিনারায় বিশ্বের তাবৎ পর্যটনশিল্প গড়ে ওঠায় পর্যটনশিল্পের প্রাচীনতম ইকো ট্যুরিজম এবং গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়নে সর্বোৎকৃষ্ট তীর্থক্ষেত্র এখন হাওরাঞ্চল। প্রতিনিয়ত আহ্বান করছে অফুরন্ত পর্যটন সম্ভাবনার দুর্নিবার হাতছানিতে। মূলত প্রকৃতি সাজিয়েছে উদার নীড়ে তার সৃষ্টিকে। প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার মতো এখানে রয়েছে পর্যটকদের চিত্তাকর্ষণে যত সব উপজীব্য, যা ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে হয়ে উঠেছে রূপকন্যার স্বপ্নপুরীতে। হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা নৌকায় বসে বিস্তীর্ণ নীল জলরাশির মায়ায় যেমনি ডুব দিতে পারেন, তেমনি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেতে সাঁতার কাটতে পারেন নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে। সংস্কৃতিপ্রেমীদের কাছে রাতের চাঁদের আলোর নিচে নৌকায় বসে স্বাদ নিতে পারেন বাউল ও মরমি কবি-সাধকদের গানের সুর তুলে কিংবা হাওরের শীতল হাওয়া ও পূর্ণিমার আলোয় রাত্রী যাপন করে অনুভব করতে পারেন মানসিক প্রশান্তি। হাওরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইকো-ট্যুরিজমের তাৎপর্য বা গুরুত্ব ধরে রাখতে গেলে সর্বোপরি পরিবেশগত বিপন্নতা ঠেকাতে গেলে যোগাযোগের পাশাপাশি ইকোলজিক্যাল বা পরিবেশগত তথা জলবায়ুর অভিঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ব্যবস্থাপনা, পানি সম্পদ ব্যবহার, জীববৈচিত্র্য ও জলাশয় সংরক্ষণসহ আর্থসামাজিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নসহ কৃষিবিমা চালু ও সরকারি বিভিন্ন সাহায্য-সহায়তা, ত্রাণ-অনুদানে সুষম বণ্টন-ন্যায্যতা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি; সর্বশেষে বলা যায় সরকার বর্তমান বছরের বাজেটে  সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে যে বাজেট ধরেছে তা  চোখে পড়ার মত নয় কিংবা কোন প্রকার গুরুত্বই বহন করে না অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছর পুর্তিতে এই দুটি খাতই সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পাওয়ার কথা বলে প্রতিয়মান হয়। দেশে এসকল বিষযে সরকারি পর্যায়ে মন্ত্রনালয় রয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলুতে সংগীত, নাট্যকলা, নৃত্ব ও টুরিজম এর উপর নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে শিক্ষা ও গবেষনার খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য যা প্রশংসমীয়। এখন শুধু প্রয়োজন বিনিয়োগ, বিশেষত উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে যা সময়ের দাবি। এ ব্যপারে বেসরকারী উদ্যোক্তা গনও এগিয়ে আসতে পারে তাদের বিনিয়োগের পসরা সাজিয়ে যা হবে একটি সফল প্রয়াশ মাত্র।

লেখক: কৃষি অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি ও সাবেক জ্যৈষ্ঠ সহ সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি, ঢাকা।


Comment As:

Comment (0)