চট্টগ্রাম বন্দরে নিষিদ্ধ পণ্য আমদানিকারকের খোঁজ নেই

প্রতিবেদক, বিনিয়োগবার্তা, চট্রগ্রাম: সিঙ্গাপুর থেকে দুইটি চালানে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা ৯টি কন্টেইনার আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর মধ্যে একটি চালানে আমদানিকারক হিসেবে হেনান অ্যানহুই অ্যাগ্রোকে দেখানো হয়েছে; আমদানিকারকের নাম খোরশেদ আলম। ঢাকার খিলক্ষেতের ঠিকানা দেওয়া হলেও সেখানে খোঁজ নিয়ে ওই নামের কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।

আজ রোববার এ তথ্য জানান শুল্ক গোয়েন্দার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান। তিনি বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে আসা এমভি ভাসি সান নামের জাহাজ থেকে গত শুক্রবার ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩টি কন্টেইটরার জেটিতে নামানো হয়। চালানে মূলধনী যন্ত্রপাতি উল্লেখ করা হলেও কন্টেইনারগুলোতে সনি ব্র্যান্ডের এলইডি টিভি ও বাকি তিনটিতে ইজি ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া গেছে। পণ্যগুলো গণনা করা হচ্ছে। এতে কী পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে- তা হিসাব করা হচ্ছে।

ওই চালানের বরাত দিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, আটক ৩ কন্টেইনারের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে চট্টগ্রামের রাবেয়া অ্যান্ড সন্সের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। রাজধানীর মতিঝিলের এফবিসিসিআই ভবনে আইএফআইসি ব্যাংকের ফেডারেশন ব্রাঞ্চ থেকে ৩১ হাজার ৪৬২ মার্কিন ডলারের লেটার অব ক্রডিট (এলসি) দেখানো হয়েছে এ চালানে।

তিনি আরও জানান, এ ৩ কন্টেইনার পণ্যের রপ্তানিকারক হিসেবে চালানে চীনের জ্যাম রাজ ইন্ডাস্ট্রিজের কথা উল্লেখ আছে। তবে সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাং হয়ে আসা একটি জাহাজে করে কন্টেইনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়েছে।

মইনুল খান জানান, গত শুক্রবার ৩টি কন্টেইনার আটকের পর চালানে উল্লেখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করা হলেও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কিন্তু ওই তিনটি কন্টেইনার বহনকারী জাহাজটি বহিঃনোঙরে থাকার সময় বিল অব এন্ট্রি দাখিল এবং ডিউটি পেমেন্ট করা হয়। পরবর্তীতে কন্টেইনারগুলো জেটিতে না নামিয়ে ফিরিয়ে নেওয়ারও চেষ্টাও করেছিল আমদানিকারক।

এদিকে গত ১ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গর করা এমভি সিনার সুভাং নামের জাহাজে করে আনা ৬টি কন্টেইনার আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাং হয়ে গত ১ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে আসা আরেকটি জাহাজে থাকা ৬টি কন্টেইনার আটক করা হয়েছে। কন্টেইনারগুলো এখনও জেটিতে নামানো না হলেও সতর্কতামূলকভাবে সেগুলো আটক করা হয়েছে।

তবে দ্বিতীয় দফায় আসা ৬ কন্টেইনারের আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ, এলসি সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। মইনুল খান জানান, দ্বিতীয় দফায় আটক করা ৬টি কন্টেইনার আগামীকাল সোমবার খোলা হবে।

তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় দফায আটক হওয়া কন্টেইনারগুলোর বিল অব এন্ট্রি এখন পর্যন্ত করা হয়নি। তবে আইজিএম দাখিল হয়েছে। আইজিএম অনুযায়ী এই চালানে ক্যাপিটাল মেশিনারিজের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে এ চালানেও আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মদ ও সিগারেটসহ আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য থাকতে পারে এমন সন্দেহ থেকেই দুইটি চালানের ৯টি কন্টেইনার আটক করা হয়েছে। এমনকি এসব কন্টেইনারে মাদক দ্রব্য ও স্বর্ণও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মইনুল খান জানান, প্রথম দফায় আসা ৩ কন্টেইনার পণ্য সন্দেহবশত আটক করা হয়েছিল। তবে চালানে উল্লেখিত আমদানিকারকের ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। কিন্তু কন্টেইনারগুলো বহিঃনোঙ্গরে থাকা অবস্থায় সেগুলোর বিল অব এন্ট্রি দাখিল এবং ডিউটি পেমেন্ট হয়েছে।

তিনি জানান, বিল অব এন্ট্রি দাখিল, ডিউটি পেমেন্ট পাওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানের খোঁজ না পাওয়ায় কন্টেইনারগুলো নিয়ে সন্দেহ আরও বেড়েছে। এর সমাধানের চেষ্টায় শুল্ক গোয়েন্দা ঢাকার সদর দপ্তর থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি দল চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

(ইউএম/৫ মার্চ ২০১৭)


Comment As:

Comment (0)