ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিএমপি’র নিরাপত্তা বলয়
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে চট্টগ্রাম নগর অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ফাঁকা নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সিএমপি তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করেছে।
এরই মধ্যে বাস-স্টেশন এবং ট্রেন স্টেশনে বেড়েছে ঘুরমুখো মানুষের ভিড়। এই সুযোগে অপরাধী চক্রও নেমেছে পথে-ঘাটে। ফলে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টিসহ কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে নিরাপত্তা টহল জোরদার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-৭)।
সিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নগরবাসীর নিরাপত্তায় ঈদের ছুটিতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে থাকবে চেকপোস্ট। সেখানে সন্দেহজনকদের তল্লাশি করা হবে। পাশাপাশি পুলিশের টহল টিমও নগরজুড়ে দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া নগরীর নিরাপত্তায় সিএমপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঈদের ছুটিতে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে সিএমপির অতিরিক্তি উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) মাহমুদা বেগম জানান, এবার যৌথবাহিনীও মাঠে রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দারা অনেকে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে গ্রামের বাড়িতে যাবেন ঈদ করতে। বাসা-বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তার জন্য নগরবাসীকে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সিএমপি পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
বাসা-বাড়ির দরজায় অধিক নিরাপত্তাসম্পন্ন অতিরিক্ত লক বা তালার ব্যবহার করা; নগদ টাকা বা স্বর্ণালংকার ফাঁকা বাসায় রেখে না যাওয়া; প্রতিরোধমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন- সিসিটিভি ক্যামেরা, অ্যালার্ম সিস্টেম ইত্যাদি; আবাসিক এলাকায় রাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা; নতুন নিয়োগকৃত নিরাপত্তাকর্মীদের এনআইডি কার্ড ও ছবি সংরক্ষণ করা; সন্দেহজনক কোনও ব্যক্তি ঘোরাফেরা করলে তাৎক্ষণিক স্থানীয় থানাকে অবহিত করা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি সংক্রান্ত কোনও ঘটনা ঘটলে দ্রুত জরুরি সেবা-৯৯৯ অথবা সিএমপি স্পেশাল কন্ট্রোল হটলাইন ০১৩২০-০৫৭৯৯৮ ও ০১৩২০-০৫৪৩৮৪-এ অবহিত করা।
এ ছাড়াও ঈদের ছুটিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভল্টের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক বা কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অধিকতর জোরদার করা। ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা যাতে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সে বিষয়টি তদারক করা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিংয়ের জন্য স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন অফিসারকে পালাক্রমে নিযুক্ত করা। ব্যাংকের ভল্টের চারপাশে সিসি টিভি ক্যামেরার কাভারেজ নিশ্চিত করা এবং সন্দেহজনক কোনও বিষয় নজরে এলে তা নিকটস্থ পুলিশকে অবহিত করা। ব্যাংকের সিসি টিভি ক্যামেরাগুলো ভালোভাবে কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে নিকটতম থানা পুলিশের সহায়তা গ্রহণ করা।
এডিসি মাহমুদা আরও জানিয়েছেন, ঈদের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে নগরীতে দেড়গুণ বেশি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানাগুলো থেকে আবাসিক এলাকার তালিকার পাশাপাশি তাদের চূড়ান্ত নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আবাসিক এলাকা এবং বাণিজ্যিক ভবনগুলোর দিকে পুলিশের নজর বেশি থাকবে বলে তিনি জানান।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এ.আর.এম মোজাফফর হোসেন জানিয়েছেন, ‘গত ১ মার্চ হতে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ১০ জন দুষ্কৃতিকারী ও নাশকতাকারী এবং ১৫ জন ছিনতাইকারী ধরতে সক্ষম হয়েছে র্যাব-৭। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে এই নিরাপত্তা কার্যক্রম চলমান থাকবে। এছাড়াও যেকোন সহিংসতা বা নাশকতার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা বদ্ধপরিকর। এবারের ঈদ-উল-ফিতর শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিতকল্পে আমাদের সর্বোচ্চ সচেষ্টতা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি জানান, ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ যেনো ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টিসহ কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে না পড়ে, সেজন্য র্যাব-৭ এর দায়িত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বিশেষ করে অলংঙ্কার, একে খাঁন বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় এবং যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে র্যাব বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত চেকপোস্ট পরিচালনা করছে।
বিনিয়োগবার্তা/জিকে/এসএএম//