মিহির

প্রধানমন্ত্রীর পল্লী উন্নয়ন পুরষ্কারে জাতি গর্বিত

ড: মিহির কুমার রায়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পল্লী উন্নয়নে ভূমিকার জন্য সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক-  (সিরডাপ) সম্মাননা পেয়েছেন। গত ২৯শে, মে, ২০০২২ রোববার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে  ‘আজিজুল হক পল্লী উন্নয়ন পদক ২০২১’ তুলে দেন সিরডাপের মহাপরিচালক ডা.  চেরদসাক ভিরাপা। এখানে উল্লেখ্য সিরডাপ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও দাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়নে কাজ করে চলেছে চার দশকের অধিক সময় ধরে যেখানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ ১৫টি দেশ এর সদস্য। এই সংস্থাটি ৬ই জুলাই, ১৯৭৯, সালে  প্রতিষ্ঠিত হয় এফএও সহ আরও কয়েকটি দেশের আঞ্চলিক সহযোগিতায় যার মূল কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে সদস্য দেশগুলোর পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষন, গবেষনা ও প্রায়োগিক  গবেষনা পরিচালনা করা। এই সংন্থাটির সদর দফতর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী  (বার্ড) সিরডাপ এর লিংক ইনষ্টিটিউশন। এর আগে শেখ হাসিনা সাত্রিশ  (৩৭)টি আন্তর্জ্যাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যার মধ্যে এসডিজি/এমডিজি অন্যতম।

পল্লী উন্নয়নে এই পুরস্কারটি দেশবাসীকে উৎসর্গ করে শেখ হাসিনা বলেন,  আমি মনে করি এটা আমার বাংলাদেশের জনগণের প্রাপ্য। আমি তাদের জন্য এ পদক উৎসর্গ করছি। এ পদক প্রাপ্তির জন্য আমাকে মনোনয়ন করা মানে বাংলাদেশকে মনোনয়ন করা। সরকার প্রধান বলেন,  পল্লী উন্নয়নটা অর্থাৎ গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে পারলে দেশের উন্নয়ন হয়। দেশের উন্নয়ন করতে হলে একেবারে তৃণমূলের মানুষকে বাদ দিয়ে কখনও উন্নয়ন হতে পারে না। আজকে আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম তৃণমূলকে ঘিরে যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব, আমাদের ডিজিটাল সেন্টার প্রথমে কিন্তু সেই চর কুকরিমুকরি থেকে শুরু করি। গ্রামের মানুষকে সাবলম্বী করতে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে  ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ কর্মসূচি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সরকার  ‘প্রায় শতভাগ মানুষের জন্য’ সুপেয় পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে পেরেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,  স্বাস্থ্য-শিক্ষা, বাসস্থান এগুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা, আমাদের এখন যত মানুষ গৃহহীন আছে অর্থাৎ ভূমিহীন-গৃহহীন,  তাদেরকে আমরা বিনা পয়সায় ঘর করে দিচ্ছি যাতে একটা ঘর পেলে সেটাই মানুষের কর্মসংস্থান হয়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে সহায়তার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন,  বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এগুলো আমরা দিচ্ছি, সেটাও মানুষের আর্থ সামাজিক কাজে লাগে। এগুলো সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা, নিজস্ব চিন্তা ভাবনার ফসল যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে।

বাংলাদেশকে বলা হয় পল্লী উন্নয়নের সুতিকাগার যার সূচনা হয়েছিল ষাটের দশকে কুমিল্লা পল্লী উন্নয়ন মডেলের উদ্ভাবনের মাধ্যমে যা সে সময়ে ছিল পৃথিবীস্বীকৃত। তারপর দীর্ঘ সময়ের পথ পরিক্রমায় স্বাধীন দেশের জন্ম, (১৯৭১), একান্নো (৫১) বছরের বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির উপস্থিতি দেশকে আজ মধ্য আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে একমাত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর  মানবিক নেতৃত্বের কারনে। বাংলাদেশের এ সামর্থ্য ও সক্ষমতা রাতারাতি অর্জিত হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের সূচনা,  ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের হাত ধরে শিল্পায়নসহ অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে আশির দশকে তৈরি পোশাক শিল্পের উত্থান ও প্রসার এবং আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের দৃষ্টিগ্রাহ্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। বছর বছর দেশের জিডিপির আকার ও প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে।। বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭৩ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, ২০২০ সাল পর্যন্ত সাতটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭৩-২০০২ সময়কালে দেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ থেকে ৫ শতাংশ, ২০০৯ থেকে ২০২০ সময়কালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় ছিল ৬-৭ শতাংশের ওপরে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ৮.২৫ শতাংশে পৌঁছে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত সরকারের ধারাবাহিক স্থায়িত্ব,  আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, আন্দোলন-ধর্মঘট বন্ধ ইত্যাদি বিষয় দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার ভাব বৃদ্ধি করে। কৃষির আধুনিকায়ন, শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি,  ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি,  ভোগ চাহিদার প্রসার এবং ক্রমে বৃহৎ শিল্পের প্রসারের ফলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পাশাপাশি দারিদ্র্য হ্রাস পেতে থাকে। 

বঙ্গবন্ধুর কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের নীতির পথ ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ খাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে কৃষি/পল্লী খাতের উন্নয়ন ও জনগনের কল্যাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে রূপকল্প ২০৪১, চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮,  টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে সরকার কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের কৃষি বান্ধব নীতি ও সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের কারণে জীবিকা কৃষি ক্রমান্বয়ে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈরী প্রকৃতির প্রভাবে ক্রম হ্রাসমান চাষযোগ্য জমি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বন্যা, খরা,  লবণাক্ততার বিপরীতে খাদ্য শস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ। এ পর্যন্ত লবণাক্ততা, খরা,  প্লাবনসহিষ্ণু এবং জিঙ্কসমৃদ্ধ ১৩৪টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পাট রফতানিতে প্রথম ও উৎপাদনে দ্বিতীয়, সবজিতে প্রতি হেক্টরে ফলন বৃদ্ধিতে প্রথম, শস্য জাতের উন্নয়নে প্রথম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চা উৎপাদনে তৃতীয়,  কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। 

গ্রাম থেকে শহরমুখী জনস্রোত হ্রাস করার পাশাপাশি আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত গ্রামীণ জীবন যাপনের সুযোগ- সুবিধা নিয়ে সরকারের বর্তমান প্রয়াশ  ‘বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজ’ স্থাপন যেখানে থাকবে শহরের সব সুবিধা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে সমবায় অধিদফতর  ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ ধারণায় গ্রামের বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রেখে ইতোমধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজ’ প্রকল্পের প্রস্তাাবনা তৈরি কাজ শেষ হয়েছে যেখানে দেশের ১০ জেলার ১০ উপজেলার ১০ গ্রামে গড়ে পাঁচ হাজার জন করে মোট ৫০ হাজার মানুষ প্রকল্পটির উপকারভোগী হবেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা যা ২০২২ সালের জুলাই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু করবে সমবায় অধিদফতর। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে ১০টি গ্রামের কৃষি খাতে ২৫ শতাংশ কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হবে,  ১০ গ্রামের ১০ হাজার লোককে দক্ষভাবে গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হবে,  ১০টি সমবায় সমিতি গঠনসহ প্রায় ৫ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ১০টি কমিউনিটি ভবন নির্মাণ করা হবে,  বঙ্গবন্ধুর আর্দশের ১০টি গ্রাম সমবায় সংগঠিত করা হবে, কৃষি উৎপাদনের যান্ত্রিক ও উত্তম পদ্ধতির প্রচলন করা হবে,  ১০টি গ্রামে দুটি এক একর পুকুরে মৎস্য চাষ ও প্রাণি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দুটি গরু পালনের মাধ্যমে আধুনিক ও উত্তম পদ্ধতির প্রচলন,  গ্রামীণ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্জাগরণ এবং গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার কমানোর লক্ষ্যে কাজ করা হবে। 

বর্তমান সরকারের পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রচেষ্টার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় বৃদ্ধি এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে,  অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কভিড-পূর্ব দারিদ্র্য হ্রাসের গতি ফিরিয়ে আনতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যেখানে পরিকল্পনাকালীন মোট কর্মসংস্থান হবে ১১.৩৩ মিলিয়ন,  যার মধ্যে দেশজ কর্মসংস্থান হবে ৮.০৮ মিলিয়ন যার সিংহভাগই হবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে। কভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ কাটিয়ে উঠলে সরকার বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দিকেও বিশেষ নজর দেবে এবং এতে মোট কর্মসংস্থান হবে ৩.২৫  মিলিয়ন। এই বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং এ থেকে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স দারিদ্র্য দূরীকরণের পাশাপাশি অসমতা হ্রাসেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। খানা আয়-ব্যয় জরিপ বিশ্লেষণে দেখা যায়,  দেশের সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য পীড়িত ও পিছিয়ে পড়া জেলাগুলো পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এ অঞ্চলগুলোর জীবন মান উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরা হয়েছে যেমন পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর শিক্ষা,  স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নে এডিপিতে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান;  সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে এ অঞ্চলগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান এবং সুবিধাভোগীর আওতা বাড়ানো;  ব-দ্বীপ পরিকল্পনার সরকারি বিনিয়োগ কর্মসূচি গ্রহণকালে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ সুবিধা প্রদান,  জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও লবণাক্ততা সমস্যা নিরসনে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান; চরাঞ্চলের মানুষের দুর্দশা লাঘবে কার্যকর চর উন্নয়ন বোর্ড গঠন; সহজলভ্য ক্রেডিট,  প্রযুক্তি ও বিপণন সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন সহায়ক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে অকৃষিজ গ্রামীণ এন্টারপ্রাইজগুলোর প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা,  নারীদের ক্ষমতায়নকে বিবেচনায় রেখে পাশাপাশি বাংলাদেশে অরক্ষিত জনগোষ্ঠী যেমন শিশু, বয়োবৃদ্ধ,  নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়,  অসমর্থ বা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মানুষ এবং নিম্ন বর্ণের জনগোষ্ঠীদেরও সুরক্ষা প্রদান। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনকে গৃহদান বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলে আলেচিত।

আওয়ামী লীগ সরকার চলমান ( ২০২১- ২২) অর্থ বছরের বাজেটে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নের জন্য মোট ৪২,১৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে যার মধ্যে উন্নয়ন খাতে রয়েছে ২৫.৪ শতাংশ যা পল্লী উন্নয়ন খাতের মোট বরাদ্দের ৬১.০১ শতাংশ। আবার সার্বিক বাজেটের আলোকে পল্লী উন্নয়ন খাতকে বরাদ্দের ভিত্তিতে যদি বিশ্লেষন করা হয় তা হলে সার্বিক অনুন্নয়ন বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পল্লীী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ১.৫ শতাংশ এবং তার সাথে যদি কৃষি খাতকে যোগ দেওয়া যায় তাহলে ৩.৯ শতাংশ দাড়ায়। অপর দিকে সার্বিক উন্নয়ন বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৮.৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে তার সাথে যদি  কৃষি খাতকে যোগ দেওয়া যায় তাহলে মোট বরাদ্দ দাড়ায় ২৫.৪ শতাংশ। এখানে উল্লেখ্য যে,   বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি গ্রামীন জীবন ও জীবিকার  প্রধান বাহক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এবং পল্লী উন্নয়নের কথায় আসলেই কৃষি সবার আগে চলে আসে। কাজেই ব্যাপক অর্থে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা উন্নয়ন বাজেটের ২৯.৬ শতাংশ এবং অনুন্নয়ন বাজেটের ২০.২ শতাংশ বলে প্রতিয়মান হয়। এখানে উল্লেখ্য যে,  কৃষি যেহেতু একটি অগ্রাধিকারভুক্ত  খাত এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টির এর সংগে সম্পৃক্ত তাই চলমান বছর ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ০৯৯ কোটি টাকা। বর্তমান গনতান্ত্রিক সরকার মনে করছে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরন, কৃষি গবেষনায় দক্ষতা বৃদ্ধি, কৃষির বহুমুখীকরন, রপ্তনীমুখী কৃষি পন্যের বানিজ্যিকীকরন,  পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন ও গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বিপুল জনগোষ্টির জীবন মান উন্নয়ন ইত্যাদিতে জোড় দিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে বর্তমান বছরের বাজেটে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির (জিডিপি)  যে টার্গেট ধরা হয়েছে তা অজর্নে কৃষি খাতের গুরুত্ব অপরিসীম বিধায় সেই খাতে প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ৪.৫ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে বলে কৃষি অর্থনীতিবীদগন মনে করেন।

সে যাই হওক না কেন বর্তমান সরকার তার ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আসিন থাকায় পল্লী এলাকায় যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা জাতীয় ও আন্তর্জ্যাতিকভাবে প্রশংসীত যা ফসল সিরডাপ প্রদত্ত এই পুরস্কার। শতবাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন পল্লী উন্নয়নের আদর্শ মডেল। খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বাংলাদেশ এখন খাদ্য রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এবং ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। সেজন্য যে কোনো মূল্যে আমাদের পল্লী উন্নয়ন খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হবে। 

লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), ডীন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।


 


Comment As:

Comment (0)